মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি যথেষ্ট বিচার-বিবেচনার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান।
তিনি বলেছেন, “রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা চট করে কোনও কিছু করতে চাই না। এটি শুধু মানবিক বিষয় নয়, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। যথেষ্ট বিচার-বিবেচনা করা পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা : বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিক বিবেচনা সমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিন তার নেতৃত্বাধানী একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক পরিদর্শন করেছে।
ঢাকায় ইউনিটি ফর বাংলাদেশের আয়োজিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খলিলুর রহমান বলেন, “ইতোমধ্যে আরাকান আর্মি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শক্ত অবস্থানে চলে গেছে। বিশেষ করে রাখাইন যে অঞ্চলটিতে রোহিঙ্গাদের বসবাস। এটি আর মিয়ানমার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই।
“এই বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরাকান রাজ্যের স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসা পর্যন্ত।”
তিনি বলেন, “সীমান্তে যেন স্থিতিশীল অবস্থা বজায় থাকে সেজন্য আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে কাতারের দোহায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও জনমত এই সংকট সমাধানেও আন্তরিক। আমাদের সামনে একটি সুযোগ করেছে এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ কার্যকর করার।”
খলিলুর রহমান জানান, রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আরও শরণার্থী আসতে পারে কিনা, এসব বিষয় নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক দূতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারে বিবাদমান পক্ষ যেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং সংঘাত এডিয়ে চলে এ আহবান জানাতে আমরা একসঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক বিবৃতি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করব বিবাদমান পক্ষগুলো এটি আমলে নিবে।”
সভায় অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষায় শিক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব। তারা প্রত্যাবাসনের তাগিদ যেন নিজেদের থেকে অনুভব করে এবং নিজ থেকে উদ্যোগী হয় এজন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। রোহিঙ্গারা যেন নিজেদের আত্মপরিচয় ও অধিকারের বিষয়টি নিয়ে তাদের অন্য পক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারে- এজন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের নীতির পরিবর্তন করতে হবে এবং সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সকল প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক নীতির সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশীরা আমাদের বছরের পর অগ্রাহ্য করেছে।”
ইউনিটি ফর বাংলাদেশের মুখপাত্র মঞ্জুর মঈনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমান, বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. সায়মা আহমেদ প্রমুখ।