বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে তাকে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতে শুনানি শেষে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় চিন্ময়কে আদালতে হাজির করা হলে তার শত শত ভক্ত-অনুসারী সেখানে বিক্ষোভ দেখায়। এসময় তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান চিন্ময়।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর তাকে নিয়ে রওনা হয় পুলিশ। তাবে তার সমর্থকরা বিকাল ৩টা পর্যন্ত প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে। র্যাব-পুলিশ সদস্যরা এসময় লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে সোমবার বিকালে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চ নামে এক সংগঠনের সমাবেশের দিন জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গত অক্টোবরে করা এক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
সোমবার রাতেই চিন্ময়কে সড়কপথে চট্টগ্রামে আসে পুলিশ।
চিন্ময়ের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ‘ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক’ অভিহিত করে তার আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, “আমরা মঙ্গলবার জামিন আবেদন করেছি। শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়।
“আমরা কারাগারে উনার ডিভিশন ও ধর্মীয় বিধান পালনের আবেদন করেছিলাম। আবেদন দুটি মঞ্জুর করেছে আদালত। আজকের আদেশে আমরা সংক্ষুব্ধ। বুধবার আবার জামিনের আবেদন করব।”
চিন্ময় আদালতে উপস্থিত ভক্ত-অনুসারীদের উদ্দেশে হ্যান্ডমাইকে বলেন, “আমরা রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে নই। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে যে রাষ্ট্র নির্মাণের আশা করা হয়েছে, আমরা সনাতনীরা তার অংশীদার।
“সুতরাং রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয় এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট হয়, এমন কিছু আমরা করব না। আবেগকে সংযত করে শক্তিতে পরিণত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবেন।”
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভক্তদের তিনি বলেন, “আমাদের ৮ দফা দাবি মৌলিক। এটা অযৌক্তিক দাবি নয়। এটা পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আন্দোলন চালাবেন। তবে দয়া করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করবেন। এটা আমি আপনাদের কাছে আশা করছি।”
এসময় বিক্ষোভকারীরা ‘জয় শ্রীরাম’, ‘দালালের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘জেলের তালা ভাঙব, চিন্ময় প্রভুকে আনব’, ‘কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’-এসব স্লোগান দিতে থাকে।
সোমবার চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ঢাকার শাহবাগ মোড়েও অবস্থান নেয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সেখানে তাদের ওপর হামলার অভিযোগও ওঠে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হলে তার প্রতিবাদে গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে সমাবেশ করে নতুন সংগঠন সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন চিন্ময়। তিনি চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষও।
সমাবেশের দিন চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে পরে ৩০ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন চট্টগ্রাম শহরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। পরে তাকে পদচ্যুত করে দলটি।
সেই মামলায় চিন্ময়কে প্রধান আসামি করা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধে গত সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উত্থাপিত ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানায় সম্মিলিত সনাতনী সমাজ-বাংলাদেশ।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।