রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি বৃহস্পতিবারও ফয়সালা হয়নি। ২ জানুয়ারির আগে এই সংক্রান্ত জটিলতা কাটার কোনও আভাস দেখা যাচ্ছে না।
মামলার মুল আইনজীবী সুমিত আচার্য্যসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তারা আদালতে আসতে পারছেন না। এই অবস্থায় ঢাকা থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রামে গিয়ে বুধবার আইনজীবী হিসেবে শুনানির জন্য আদালতে আবেদন করেন। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলামের আদালতে আবেদন পড়ে তা নাকচ করে দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ওকালতনামা নিয়ে চিন্ময় ব্রহ্মচারীর পক্ষে শুনানির জন্য নতুন করে আবেদন করেন রবীন্দ্র ঘোষ। আদালত আবেদন নিয়ে ওকালতনামা যাচাইয়ের জন্য বিকালের মধ্যে আইনজীবীকে হাজির করতে বলেন।
কিন্তু রবীন্দ্র ঘোষ ওকালতনামায় স্বাক্ষরকারী চট্টগ্রামের আইনজীবীকে হাজির করতে না পারায় বিকালে বিচারক আবেদনটি নথিভূক্ত করে আগামী ২ জানুয়ারি এর ওপর শুনানির জন্য জমা রাখেন।
ফলে আইনজীবী হিসেবে রবীন্দ্র ঘোষ শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত হবে ২ জানুয়ারি। সেদিন চিন্ময়ের জামিন আবেদনের শুনানির দিন আগে থেকেই নির্ধারিত রয়েছে। ফলে এক দিনে দুই বিষয়ে শুনানি হতে পারে।
আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, “ওকালতনামা নিয়ে আজ আবার আমি আদালতে আবেদন করি। কিন্তু চট্টগ্রাম বারের আরেকজন আইনজীবী না থাকার কারণে জজ সাহেব সেটা পেন্ডিং রেখে দিয়েছেন। পরে ২ জানুয়ারি শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দেন।”
এখন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য হাই কোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।
এনিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “রবীন্দ্র ঘোষকে বারবার বলা হয়েছে চট্টগ্রামের বারের যেকোনও একজন আইনজীবীর ওকালতনামা নিয়ে এসে শুনানি করতে।
“এই বারের কোনও আইনজীবী ওই মামলার শুনানির জন্য ওকালতনামা দেননি। আদালত উনার জন্য অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু পরপর তিনবার শুনানির জন্য আদালতে উঠেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।”
রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমি বুঝলাম না, আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী। ওকালতনামা জমা দেওয়ার পর কেন সেটি যাচাই করতে হবে। আর সেই আইনজীবী তো হত্যা মামলার আসামি। তিনি তো ভয়ে আদালতে আসছেন না।”
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কারাগারে গিয়ে চিন্ময় ব্রহ্মচারীর সঙ্গে দেখা করে চট্টগ্রাম আদালতে আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্র ঘোষ।
বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় ব্রহ্মচারী রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত ২৬ নভেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। বিএনপির চট্টগ্রামের এক নেতা মামলাটি করেন।
ওই দিন চট্টগ্রামের আদালতে চিন্ময়ের অনুসারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। এরপর চট্টগ্রামে আইনজীবীদের বিক্ষোভ থেকে চিন্ময়ের পক্ষে কোনও আইনজীবীকে না দাঁড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকেও সমিতির কোনও সদস্য চিন্ময়ের পক্ষে শুনানি করবেন না বলে জানানো হয়।
অন্যদিকে চিন্ময়ের পক্ষে যারা আইনজীবী ছিলেন, তারাও একাধিক মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আদালতমুখো হচ্ছে না।
ফলে ৩ ডিসেম্বর আদালতে চিন্ময়ের জামিন আবেদনের শুনানির দিন কোনও আইনজীবী না থাকায় ২ জানুয়ারি শুনানির দিন ঠিক করে দেয় চট্টগ্রামের জজ আদালত।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় ব্রহ্মচারী এক সময় ইসকনের মুখপাত্র ছিলেন। মামলার আসামি হওয়ার পর তাকে বহিষ্কারের কথা জানায় কৃষ্ণভক্ত হিন্দুদের সংগঠনটি।
চিন্ময় আলোচনায় উঠে আসেন গত অগাস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সক্রিয় হয়ে।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে সমাবেশ আয়োজনের পর ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ গঠন করে তার মুখপাত্র হিসাবে সক্রিয় ছিলেন চিন্ময়।
সেই সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি হয়।
চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের পর ভারত সরকারের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসে। দেশটির হিন্দু সংগঠনগুলো বিক্ষোভেও নামে। তেমন এক বিক্ষোভ থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলাও হয়েছিল।