চিকিৎসাবিজ্ঞানী, লেখক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
বুধবার সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গুলজার হোসেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “স্যারের (শুভাগত চৌধুরী) বুধবার আমার অধীনে বিএসএমএমইউতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। গতকাল আমি তার ভর্তির সব কাগজপত্র প্রস্তুত করেও রেখেছিলাম। কিন্তু তার আগেই আজ সকালে নিজের বাসায় তার মৃত্যু হয়।”
শুভাগত চৌধুরী গত আট বছর ধরে মাল্টিপল মায়েলোমাতে (এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার) ভুগছিলেন বলে জানান গুলজার হোসেন।
তিনি বলেন, “সবশেষ ঢাকায় আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন শুভাগত চৌধুরী। সেখানকার ব্যয়বহুল চিকিৎসার কথা বলেছিলেন আমাকে। তাই হাসপাতাল আর বাসা মিলিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
“এরপর আমার সঙ্গে কথা হলে তাকে এখানে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ভর্তি হওয়া হলো না।”
শুভাগত চৌধুরীর ভাই অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজ সকালে বাসায় অচেতন হয়ে পড়েন শুভাগত। এরপর তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
অরূপ রতন চৌধুরী জানান, শুভাগত চৌধুরীর দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। তাদের দেশে ফেরার পর তার শেষকৃত্য হবে। এর আগ পর্যন্ত শুভাগত চৌধুরীর মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা থাকবে।
শুভাগত চৌধুরীর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার প্রতি শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন থেকে শুরু করে শুভানুধ্যায়ীরা।
১৯৪৭ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করা শুভাগত চৌধুরী কর্মজীবনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষও হন তিনি।
সরকারি চাকরি থেকে ২০০৪ সালে অবসর নেওয়ার পর বারডেমসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন শুভাগত চৌধুরী।
চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৯ সালে শেরে বাংলা জাতীয় পুরস্কার এবং বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান ও পরিবেশবিজ্ঞান শাখায় কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
২০২৪ সালের ১২ জুন সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশনের (সিসিসিএফ) পক্ষ থেকে শুভাগত চৌধুরীসহ পাঁচজন ক্যান্সার সারভাইবারকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
সেই সম্মাননা অনুষ্ঠানে সাবেক এই অধ্যক্ষ নিজের ক্যান্সারাক্রান্ত জীবন ও এর বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “২০১৬ সালে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, আমি আর চার বছর বাঁচব। কিন্তু আমি এখনও বেঁচে আছি।
“ক্যান্সারকে মারণ ব্যাধি বলা হয়। এটা ঠিক নয়। এই রোগকে নাটক-সিনেমায় যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাও ঠিক নয়। ক্যান্সার নিয়ে বাঁচা যায়। এটি জয় করে বলা যায়, ভয়ের কোনও কারণ নেই।”
ক্যান্সারে আক্রান্ত সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় তহবিল গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “তাদের চিকিৎসার টাকা আসবে কোথা থেকে? এই নিয়ে কি আমরা ভেবেছি?
“ক্যান্সারে আক্রান্তদের নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের একটা তহবিল গঠন করা দরকার। কম খরচে সাধারণ মানুষের ক্যান্সারের চিকিৎসা করানো গেলে আমাদের পুণ্য হবে।”