জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে মেয়েদের ফুটবল ম্যাচে বাধা দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে ওই খেলা আয়োজনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়ে বলা হয়, এই ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এই বিবৃতি প্রকাশের পাশাপাশি জয়পুরহাটে ২০২০ সালে মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্টের একটি ভিডিও যুক্ত করে দেন।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় টি স্টার ক্লাব নামে স্থানীয় একটি ক্লাব তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আন্তঃজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। সেখানে ফাইনালের আগে বুধবার জয়পুরহাট ও রংপুর নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু আগের দিন মঙ্গলবার স্থানীয়দের একটি অংশ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জড়ো করে ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লি’ ব্যানারে মাঠে হামলা চালিয়ে টুর্নামেন্টের জন্য তৈরি টিনঘেরা বেষ্টনি ভাংচুর করে। সোশাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার আগে সমাবেশে বক্তারা বলছেন, মেয়েদের পর্দার মধ্যে রাখতে হবে, মেয়েদের খেলা বন্ধ করতে হবে, নইলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এই হামলার পর আয়োজকরা নারীদের সেই প্রীতি ম্যাচ আর আয়োজন করেনি। এই ফুটবল ক্লাবটির সভাপতি বিএনপির স্থানীয় নেতা।
একই দিন দিনাজপুরের হাকিমপুরে মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ চলাকালে বাধা দিতে গেলে হামলাকারীদের সঙ্গে আয়োজকদের সংঘর্ষ বাধে। তাতে অন্তত ২০ জন আহত হয়। স্থানীয় বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতি বাওনা মাঠে এই ম্যাচের আয়োজন করেছিল।
এখানে মেয়েদের খেলায় বাধা দেওয়া হয়েছিল ‘তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে। খেলায় বাধা দিতে মাইকিং করে লোক জড়ো করা হয়েছিল।
এই দুটি ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টালয়ের কার্যালয় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলেছে, “নারীরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং পুরুষদের মতোই সমানভাবে মানবিক ও নাগরিক অধিকার ভোগ করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলা হয়, “প্রফেসর ইউনূস আজীবন নারী অধিকারের পক্ষের একজন। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ৯০ শতাংশেরও বেশি মালিকানা ছিল নারীদের।
“গত সপ্তাহে, প্রফেসর ইউনূস ফিফা প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সাথে দেখা করেন এবং বাংলাদেশে নারী ফুটবলারদের জন্য অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে তার সহায়তা চান।”
বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ইতোমধ্যে দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনকে স্থগিত ফুটবল ম্যাচ দুটি পুনরায় আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা পরবর্তীকালে কেউ ঘটাতে চাইলে সরকার ছাড় দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, “কেউ নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করার মতো ঘটনায় সম্পৃক্ত হলে বা এই ধরনের বেআইনি বিধি-নিষেধ আরোপের সঙ্গে যুক্ত হলে তিনি বা তারা দেশের প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থার মধ্যে পড়বেন।
“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেকোনো গোষ্ঠীর নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য বা নিপীড়নের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।”