Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

মস্তিষ্কের পরীক্ষা কি বাইডেন করবেন   

নির্বাচনের আগে বয়স নিয়ে প্রশ্নের মুখে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনের আগে বয়স নিয়ে প্রশ্নের মুখে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
[publishpress_authors_box]

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি জো বাইডেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে অতীতে দেখা যায়নি। যে সময়ে পরবর্তী মেয়াদের নীতি নিয়ে তার আলোচনা করার কথা, সেই সময়ে তাকে সামর্থ্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সব আলোচনা ছাপিয়ে এখন প্রার্থীদের বয়স ও মানসিক সুস্থতার আলাপও বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।

সম্প্রতি আটলান্টায় দেশটির সাবেক ও বর্তমান দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নাস্তানাবুদ হন ৮১ বছর বয়সী বাইডেন। সেই থেকেই প্রেসিডেন্টের বয়স ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।

কারণ ২৭ জুনের বিতর্কে অনেকের কাছেই বাইডেনকে আবারও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের মতো শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম মনে হয়নি।

বিতর্কে ট্রাম্পের প্রশ্নের জবাব ঠিকমতো দিতে পারছিলেন না বাইডেন। কথা যাচ্ছিল জড়িয়ে। কথার সূত্র হারিয়ে ফেলছিলেন। এসব দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ডেমোক্র্যাটিক শিবির।

৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের মতো চতুর, পরিস্থিতি সামাল দিতে পারঙ্গম প্রার্থীকে হারিয়ে বাইডেন আদৌ নির্বাচনে জিততে পারবেন কি না, এ নিয়ে তার দলে সন্দিহ ক্রমেই বাড়ছে।

দুটি দেশ সফর করে ক্লান্ত ছিলেন বলে বিতর্কে ভালো করতে পারেননি-বাইডেনের এই সাফাই কোনওভাবেই আশ্বস্ত করতে পারছে না জ্যেষ্ঠ ডেমোক্রেট নেতাদের।

ডিজনির মতো অর্থদাতা এরই মধ্যে বাইডেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে ডেমোক্রেট নেতারা প্রেসিডেন্টকে চাপ অব্যাহত রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত বাইডেনই সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। আর ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প যদি এবার আবার নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি হবেন দ্বিতীয় প্রবীণ প্রেসিডেন্ট।

বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশ্নবাণে জর্জরিত জো বাইডেন।

সত্তর বা আশির কোঠায় থাকা প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাক্রমশালী রাষ্ট্র শাসন করতে এবং বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে কতটা সক্ষম, তাই এখন দেশটির নাগরিকদের মূল ভাবনা।

বিশেষ করে আগামী দিনে চীন, রাশিয়ার মতো অর্থনীতি, সামরিক শক্তিতে উদীয়মান প্রতিপক্ষকে টেক্কা দেওয়ার মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা এই দুই প্রেসিডেন্টের কারোর আদৌ আছে কি না, এ নিয়ে সরগরম আলোচনার টেবিল।

চিকিৎসকরা মনে করছেন, বাইডেন ও ট্রাম্প দুজনেরই কগনিটিভ টেস্ট বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা দরকার।

অবশ্য বাইডেন এমনটা মনে করছেন না। সম্প্রতি এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, প্রতিদিনই তাকে একবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হয়। তার চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন, আলাদা করে এ পরীক্ষার দরকার নেই।

অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, দুবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরীক্ষা তিনি করিয়েছেন। একবার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে, আরেকবার সাম্প্রতিক সময়ে। দুবারই পরীক্ষার ফল ভালো এসেছে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরীক্ষা কী

একজন মানুষের মস্তিষ্ক কতটা ভালোভাবে কাজ করছে, তা জানতে কয়েকটি পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং করা লাগে। এসব পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং নির্দিষ্ট কোনও রোগ নির্ণয় করে না। তবে রোগ নির্ণয়ের জন্য আরও পরীক্ষার দরকার আছে কি না, তা জানতে সহায়তা করে-এমনটাই বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক।

সাধারণত কোনও ব্যক্তি যদি স্মৃতি, ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন বা ভারসাম্য নিয়ে সমস্যায় পড়েন, অতীত ভুলে যেতে থাকেন বা তথ্য বুঝতে জটিলতায় ভোগেন, তখন তার কগনিটিভ টেস্ট বা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরীক্ষার দরকার পড়ে।

এক্ষেত্রে যে পরীক্ষা সাধারণত বেশি করা হয়, তা হলো মন্ট্রিয়েল কগনিটিভ অ্যাসেসমেন্ট। এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহ থাকা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দ্রুত মূল্যায়ন করা যায়।

এই মূল্যায়ন ব্যক্তির অবস্থান, স্মৃতি, মনোযোগ ও বস্তু চিহ্নিতকরণের ক্ষমতা পরীক্ষা করে। পাশাপাশি মৌখিক ও লিখিত নির্দেশ তিনি কতটা অনুসরণ করতে পারছেন, তাও নিরূপণ করে।

যেসব ব্যক্তির মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করছে, তাদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা সহজ। তবে যাদের মানসিক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন সহজ নয়।

মন্ট্রিয়েল কগনিটিভ অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষার উদ্ভাবক কানাডার নিউরোলজিস্ট জিয়াদ নাসরেদ্দিন। তিনি বিবিসিকে জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই পরীক্ষা করা দরকার বলে তিনি মনে করেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে আশ্বস্ত করা যাবে। আর কোনও সমস্যা যদি থেকেই থাকে, তাও নির্ণয় করা সম্ভব হবে।          

৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কগনিটিভ টেস্টের প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

পরীক্ষার ধরন

চিকিৎসকরা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরীক্ষা দুভাবে করে থাকেন। একটি সংক্ষিপ্ত আকারে। অন্যটি বিস্তৃতভাবে।

সংক্ষিপ্ত আকারে পরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীদের শেখা এবং মনে রাখার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়।

আর সময় নিয়ে বিস্তৃত আকারে পরীক্ষার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নির্ণয়ের পাশাপাশি শারীরিক ও স্নায়ুবিক পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া রোগীর জীবনের সম্পূর্ণ ইতিহাসও এসময় জানতে চাওয়া হয়।

চিকিৎসকরা সচরাচর মন্ট্রিয়েল কগনিটিভ অ্যাসেসমেন্টের মতো সংক্ষিপ্ত আকারে পরীক্ষা দিয়েই রোগ নির্ণয়ের কাজ শুরু করেন। রোগীর স্কোর প্রত্যাশার চেয়ে কম হলে তাকে আরও বিস্তৃত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দুই রাজনীতিক বাইডেন ও ট্রাম্পকে বিস্তৃত আকারে পরীক্ষা করা হলে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ডেভিস আলঝেইমারস ডিজিজ রিসার্চ সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ড্যান মানগাস।

বাইডেনের মধ্যে পরিবর্তন

বয়স যাদের ৬৫ বছরের বেশি, তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য সুপারিশ করে থাকে নিউরোলজিস্ট ও নিউরোসায়েন্টিস্টদের নিয়ে গঠিত সংগঠন আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব নিউরোলজি।

নিউরোলজিস্ট জিয়াদ নাসরেদ্দিন জানান, এই সুপারিশের কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা কমতে থাকে। ৭৫ বছরের মধ্যে ২৫ শতাংশ মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করার ক্ষমতা কোনও না কোনওভাবে হারিয়ে ফেলে।

“এই বয়সে পৌঁছালে মানুষের মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে এবং এই ঘটনা বাড়ছে। কখনও অনেকে জানতেই পারেন না, তারা এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।”

মন্ট্রিয়েল কগনিটিভ অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষার উদ্ভাবক কানাডার নিউরোলজিস্ট জিয়াদ নাসরেদ্দিন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্পর্কে নাসরেদ্দিন বলেন, “গত বছর তার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন আমার চোখে পড়েছে। তার হাঁটার গতি কমে গেছে। কথা বলেন ধীরে ধীরে। কণ্ঠস্বর অনেক নিচু হয়েছে। কথাও স্পষ্ট নয়।”             

তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই বয়সে বাইডেনকে যে পরিমাণ কাজ করতে হয়, তেমনটা আর কেউ করে না। এই বয়সী কোনও ব্যক্তির কী ধরনের কাজ করা উচিৎ, তা নির্ধারণ করাও কঠিন।

“বাইডেনের এমন শারীরিক পরিবর্তন কয়েক বছর আগেও দেখিনি। গত বছরই প্রথম চোখে পড়ল। বাইডেনের থেকে ট্রাম্প বয়সে মাত্র তিন বছরের ছোট। তা সত্ত্বেও ট্রাম্পকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও সতেজ দেখায়।” বলেন নাসরেদ্দিন।    

প্রেসিডেন্ট ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার্সে ভুগলে করণীয় কী  

প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে বা তার ওপর ন্যস্ত ক্ষমতা ও কর্তব্য পালনে অপারগ হলে তার উত্তরাধিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কেমন হবে, তার নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে আছে।

এতে বলা আছে, প্রেসিডেন্টকে তার দপ্তর থেকে সরানো হলে, অক্ষম হলে, মারা গেলে বা পদত্যাগ করলেই কেবল এই নির্দেশনা মানা হবে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পরীক্ষা দুবার করেছেন বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পর সংশোধনীটি অনুমোদন পায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ছিলেন, সে সময় কংগ্রেসে আইনপ্রণেতারা এই সংশোধনীতে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। একজন প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম কি না, তা যাচাইয়ে মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল যেন থাকে, তা সংশোধনীতে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন তারা।

২০২১ সালে কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল ডেমোক্র্যাটরা। তারা তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য, ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

এই দুই পদক্ষেপের কোনওটাই শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।

এবার নির্বাচনের আগে বাইডেনকে ট্রাম্পের সামনে ধরাশায়ী হতে দেখে রিপাবলিকানদের একাংশ প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভার সদস্যদের ২৫তম সংশোধনীর ৪ নম্বর ধারা প্রয়োগের আহ্বান জানায়।

এই ধারাতে বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা বা কংগ্রেসের অধিকংশ সদস্য যদি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট তার ওপর ন্যস্ত ক্ষমতা ও কর্তব্য পালনে অপারগ, সেক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট তার জায়গায় বসবেন।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাসের ক্ষেত্রে এই আইন এখন পর্যন্ত প্রয়োগ করা হয়নি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি    

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত