আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব ব্যক্তি গুম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছিল, সেসব ঘটনার নির্দেশদাতা হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিশন। তারা গুমের ঘটনার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুসহ র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে।
শনিবার বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন সদস্যরা একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে; সেখানে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে অভিযোগ দাখিলের কার্যক্রম।
২০০৯ সাল থেকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত গুমের ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কমিশন সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ১ হাজার ৬৭৬ অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, গুমের ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এছাড়া হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এছাড়া কমিশন গুমের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরুসহ র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে।
কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা কাজটি (গুম) এমনভাবে করেছে, যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, গুমের শিকার অনেকে এখনও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। তাদের ওপর এতটাই ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছিল যে, তারা এখনও ট্রমায় ভুগছেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার সর্বশেষ বক্তব্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও সঠিক বিচারের আশ্বাস দেওয়ার পর রিপোর্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সদস্যরা অধ্যাপক ইউনূসকে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের অনুরোধ জানান।
তারা বলেন, “আপনি আয়নাঘর পরিদর্শন করলে ভিক্টিমরা অভয় পেতে পারেন।”
প্রধান উপদেষ্টা তাদের এ অনুরোধে সম্মতি দিয়ে জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল, যা আয়নাঘর নামে পরিচিতি পেয়েছে, সেগুলো দেখতে যাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা কমিশন সদস্যদের তাদের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং কাজটি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তারা তিন মাস পর মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। কাজটি শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
কমিশনের সদস্য হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।