বড় এক সিদ্ধান্তে সরকার তিনজন সচিব, ১৭ জন অতিরিক্ত সচিবসহ ২২ কর্মকর্তাকে অবসর দিয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের সাজা দেওয়ার শেষ পর্বে এসে সরকার কঠিন এই সিদ্ধান্ত নিল।
এর আগে বুধবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে কর্মরত যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের প্রশাসনের ৩৩ কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি করা হয়। এরা ২০১৮ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার যে ২২ কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে একজন যুগ্ম সচিব ও একজন উপসচিব রয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন ২০১৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন। এর সবাই ১৭তম ও ১৮তম বিসিএসের কর্মকর্তা।
এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার চাকরির বয়স ২৫ বছর হওয়া ২২ সাবেক ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।
১৯৮২ বিসিএস এর কর্মকর্তা মো. মোখলেস উর রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় অবসর থাকাকালে জ্যেষ্ঠ সচিব পদে নিয়োগ পান।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো তিন সচিব হলেন- শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, জনপ্রশাসন মন্তণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু হেনা মোরশেদ জামান।
মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “জনপ্রশাসন–সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন তারা নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে এরই মধ্যে ৪৩ জনকে ওএসডি করা হয়েছে।
“এক্ষেত্রে ওএসডি করা হয়েছে তাদের যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম। আর যারা ২৫ বছরের বেশি সময় চাকরি করেছেন তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়া হচ্ছে। আজ এ রকম ২২ জন সাবেক ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার আদেশ জারি করা হয়েছে।”
এছাড়া যে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়গুলো দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হবে বলেও জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব।
সাবেক ডিসিদের বাইরেও অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তার নামে দুর্নীতির অভিযোগ আছে বা যারা আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন, তারা চাকরিবিধি অনুযায়ী সাজার মুখোমুখি হবেন।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মোখলেসুর রহমান সরকার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়লা ফারজানা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, বিদ্যুৎ বিভাগের ফয়েজ আহাম্মদ, বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস ও কপিরাইট নিবন্ধনের মো. তোফায়েল ইসলাম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটিডি) কামরুন নাহার সিদ্দীকা ও ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য উম্মে সালমা তানজিয়া।
এ তালিকায় আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাব্বী মিয়া, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম আলম, ইউএই আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার লেবার মো. আব্দুল আওয়াল, বাংলাদেশ জাতীয় বিজ্ঞান ও কারিগরি তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণ কেন্দ্রের (ব্যান্সডক) মহাপরিচালক মো. শওকত আলী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তন্ময় দাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এনামুল হাবীব, পরিকল্পনা বিভাগের আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. হামিদুল হক।
এছাড়া বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে যুগ্ম সচিব জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরের পরিচালক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম এবং উপসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ কবিরকে।