ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংবিধানের বেশ কিছু বিষয় সংশোধন করা সম্ভব বলে মনে করেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের আগে সংবিধানের বেশ কিছু বিষয় অবশ্যই সংশোধন করা সম্ভব। তবে সেটি একান্তই সরকারের ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনার বিষয়।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এল ডি হলে আয়োজিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা শনাক্ত করে সরকারকে জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি দ্রুতই সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। সুতরাং বলা যায় নির্বাচনের আগে সংবিধান সংস্কার অবশ্যই সম্ভব।”
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার হবে কি না সেটিও সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত পার্থক্য থাকলেও সংস্কার বিষয়ে তারা ঐকমত্য পোষণ করে বলে আমার বিশ্বাস।
“রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তর থেকে আসতে হবে এবং এটি বাইরে থেকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।”
এর আগে কখনোই সংবিধান সংশোধনে জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া হয়নি জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সঙ্কট ও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এ প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের মধ্যে যিনি ক্ষমতায় যান কিংবা না যান সকলেই সংস্কারের জন্য দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন।”
শুধুমাত্র একটি অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে কিংবা কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা স্বৈরাচারীকরণ বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।
এ কারণে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন করে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তির জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতেই মূলত এ সুপারিশ করা হয়েছে।
আলী রীয়জি আরও বলেন, “জনসংখ্যার গঠন বিবেচনায় ১০ শতাংশ তরুণ সদস্যকে রাজনৈতিক দলে অংশীদার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পেছনের কারণ হচ্ছে তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার চিন্তা ভাবনা। সংবিধানের বিষয়টি কীভাবে হবে সেটা সরকারের বিষয়। তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
“বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা বেশি। তাই আইন প্রণয়নে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। এটি রাজনৈতিক দলের কাছে কমিশনের একটি প্রস্তাবনা মাত্র।”
২১ বছর বয়সে নির্বাচনের অংশ নেওয়ার বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত এমনটি নয়। বয়স ২১ হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হবে। কিন্ত রাজনৈতিক দলগুলো নিজ বিবেচনায় তাদের মনোনয়ন দেওয়ার কাজটি করবে।”
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই শুনতে পাই অতীতের সাথে তুলনা করা হয়, যে আগে কি কি করা হয়েছিল বা হয়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের এটি কখনোই ছিল না যে, দুই থেকে আড়াই সপ্তাহের মধ্যে ১৪০০ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি আন্তর্জাতিক সকল আইন ভঙ্গ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থেকেছেন।
“এটিও বাংলাদেশের ইতিহাসের কোথাও ছিল না। এবং এটা আমি বলছি না জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে। এরপরও এত মানুষের আত্মদানের সাথে আমরা অতীতের কোনো ঘটনার তুলনা করতে পারি না।”
