কন্টেইনার ওঠানামার প্রবৃদ্ধিতে আরও একধাপ এগিয়ে গেল চট্টগ্রাম বন্দর। চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই কন্টেইনার ওঠানামায় আগের অর্থবছরের একক ছাড়িয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে এই বন্দরে কন্টেইনার ওঠানামা ৩২ লাখ একক ছোঁবে। অর্থাৎ এক অর্থবছরে ৩২ লাখটি কন্টেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার হিসেবে) ওঠানামা হবে এই বন্দরে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩০ লাখ ৭ হাজার একক।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ২১ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কন্টেইনার ওঠানামা হয়েছে ৩০ লাখ ৯১ হাজার একক। বন্দরের মূল স্থাপনা অর্থাৎ জেটি-টার্মিনাল, কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) ও পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনালসহ (আইসিটি) এই হিসাব করা হয়েছে।
অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই গত অর্থবছরের হিসাব ছাড়িয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষ হবে ৩২ লাখ একক দিয়ে, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত দুবছর কন্টেইনার প্রবৃদ্ধি কমছিল। চলতি অর্থবছরে এসে তার ব্যতিক্রম দেখা গেল। অবশ্য মে মাসেই বোঝা গিয়েছিল যে এবার গত অর্থবছরের চেয়ে ওঠানামা বাড়বে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাস প্রতি মাসেই কন্টেইনার ওঠানামা হয়েছে ২ লাখ ৪০ থেকে ২ লাখ ৭৪ হাজার একক। মে মাসে গিয়ে তা বেড়ে ৩ লাখ একক ছাড়িয়ে যায়। বন্দরের ইতিহাসে যা রেকর্ড।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা আশা করছি কন্টেইনার ওঠানামা এই অর্থবছর শেষে প্রায় ৩২ লাখ একক কন্টেইনার ছোঁবে। সেটি অর্জিত হলে গত দুই অর্থবছর পর সবচেয়ে বেশি কন্টেইনার ওঠানামা করতে সক্ষম হবে।”
এবার বেশি কন্টেইনার ওঠানামার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পণ্য আমদানিতে ডলার সংকট এখন কেটেছে, এর ফলে আমদানি বেড়েছে। আমদানির পাশাপাশি সমানতালে রপ্তানিও বেড়েছে।
তিনি বলেন, “ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে উঠছে বিশ্ব, পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনীতি রিগেইন করছে। সেই দেশগুলো আমাদের রপ্তানির প্রধান গন্তব্য। সেখানে চাহিদা বাড়ায় আমাদের রপ্তানিও অনেকটাই বেড়েছে। এর সুফল মিলেছে দেশের অর্থনীতিতে, প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।”
বিশ্বের বন্দরগুলোর কন্টেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে ‘ওয়ান হান্ড্রেড পোর্টস’ শীর্ষক তালিকা প্রকাশ করে লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট। বছরভিত্তিক কন্টেইনার ওঠানামার হিসাব করেই প্রতি বছর জুলাই থেকে আগস্টে তালিকাটি প্রকাশ হয়।
২০২৩ সালে কন্টেইনার ওঠানামার হিসাব অনুযায়ী ২০২৪ সালে তালিকা প্রকাশ করে লয়েডস লিস্ট। যার ৬৭ তম অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০২২ সালে প্রকাশিত তালিকায় এই বন্দরের অবস্থান ছিল ৬৪ তম।
টানা ৭ বছর ধাপে ধাপে এগুনোর পর ২০২১ সালের তালিকায় সর্বপ্রথম হোঁচট খায় দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর। কোভিড মহামারির প্রভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে অগ্রগতি ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হলে তখন ৯ ধাপ পিছিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম অবস্থানে চলে যায়। এর আগে ২০২০ সালে প্রকাশিত তালিকায় বন্দরটির অবস্থান ছিল ৫৮তম।
আগামী বছরের লয়েডস তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৬০ এর কাছাকাছি যাবে, প্রত্যাশা বন্দর সচিব ওমর ফারুকের।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলছেন, বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সরকারের বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া পণ্য আমদানিতে ডলার সংকট, ঋণপত্র খুলতে বাধা না থাকার কারণেই আমদানিতে সুফল মিলছে।
আর রপ্তানি গন্তব্যগুলোতে রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ার কারণেই দেশের অর্থনীতি আবারা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এর সুফল মিলেছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
বছর শেষে অর্জন আরও বড় হবে, এমন প্রত্যাশার কথাই জানালেন তিনি।