তুমুল নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হলেন ৪৪ বছর বয়সী পিট হেগসেথ। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে তার নিয়োগ নিয়ে শুক্রবার সেনেটে ভোটাভুটি হয়।
এতে হেগসেথের পক্ষে-বিপক্ষে সমান সমান ভোট (৫০-৫০) পড়ে। এমন অবস্থায় হেগসেথকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। টাই ব্রেকিং ভোটে তিনি হিগসেথের পক্ষ নিয়ে তাকে জয়ী করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘টাই ব্রেকিং ভোট’ মানে হলো এমন একটি ভোট, যা দুটি পক্ষের ভোট সমান হলে ফয়সালা করে। সাধারণত সেনেটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এই ভোটটি দেন। এর মাধ্যমে একটি বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হেগসেথকে অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন, যিনি একটি সমান ভোটে ক্যাবিনেট প্রার্থীকে নিশ্চিতের জন্য ভোট দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স প্রথমবারের মতো বেটসি ডেভোসকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত করতে টাই ব্রেকিং ভোট দিয়েছিলেন।
সেনেটে পিট হেগসেথের বিরুদ্ধে আপত্তির কেন্দ্রেই রয়েছে যৌন নির্যাতন, মদ্যপানে আসক্তি, কর্মক্ষেত্রে অসদাচরণ, সাবেক দুই স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতবতা, নারীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের মতো অভিযোগ। আর এসব কারণেই দুই মাস আগে ট্রাম্প তাকে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
হেগসেথের মনোনয়ন নিয়ে আপত্তি উঠলে বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সেনেটে শুক্রবার ভোটের মাধ্যমে বিতর্কিত এই ব্যক্তিকেই দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
শুক্রবারের ভোটাভুটিতে রিপাবলিকান পার্টির তিন সেনেটর বাদে বাকি সবাই হেগসেথের মনোনয়নের পক্ষে ভোট দেন। এই তিনজন হলেন কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের মিচ ম্যাককনেল, মেইন অঙ্গরাজ্যের সুসান কলিন্স ও আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের লিসা মারকোস্কি।
তাদের মধ্যে কলিন্স ও মারকোস্কি আগেই ডানপন্থি ভাবধারার হেগসেথের ব্যক্তিগত ইতিহাস এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলানোর অনভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এই তিন রিপাবলিকান সেনেটরের বাইরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সব সেনেটরই হেগসেথের মনোনয়নের বিপক্ষে ভোট দেন। ফলে হেগসেথের পক্ষে-বিপক্ষে সমান সমান ভোট (৫০-৫০) পড়ে।
তবে ট্রাম্পসহ অনেক রিপাবলিকান হেগসেথকে সমর্থন দিয়েছেন।
সেনেটের সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও মিসিসিপির সেনেটর রজার উইকার শুনানির সময় হেগসেথকে সমর্থন দেন এবং তার অনুমোদনের পক্ষে ভোট দেন।
তিনি বলেন, “পিট হেগসেথ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রোগ্রাম সামনে আনতে প্রস্তুত এ ব্যাপারে তিনি আমাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনতে তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি এবং আমাদের যা প্রয়োজন তা তিনি।”
আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন হেগসেথ। এরপর তিনি ফক্স নিউজে উপস্থাপক হিসেবে যোগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে গেলে যে অভিজ্ঞতা লাগে, তা হেগসেথের সামান্যই আছে। সাধারণত জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, ঝানু রাজনীতিক, উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী কর্মকর্তা বা সেনাবাহিনীর জেনারেল পদমর্যাদার কেউ এই পদের দায়িত্ব পেয়ে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর হেগসেথের অধীনে কাজ করবে আনুমানিক ৩০ লাখ কর্মী। আর তার এই মন্ত্রণালয়ের বাজেটও বিশাল, ৮৪৯ বিলিয়ন ডলার।
শুক্রবার সেনেটে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে হেগসেথের নিয়োগ সংক্রান্ত ভোটাভুটির আগে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নগুলোর অধিকাংশই আসে নারী সেনেটরদের পক্ষ থেকে।
২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক হোটেলে এক নারীকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ আছে হেগসেথের বিরুদ্ধে। প্রতিবারের মতো শুক্রবারও সেনেটে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
নারীদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো উচিত নয়, আগে করা তার এমন মন্তব্য নিয়েও ওঠে প্রশ্ন।
জবাবে হেগসেথ সেনেটকে বলেন, যুদ্ধের ময়দানে নারীদের যুদ্ধ করা নিয়ে তিনি চিন্তিত না। বরং নারীরা যুদ্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট মানদণ্ড তাতে রক্ষা করা হয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
অতিমাত্রায় মদ্যপান ও সাবেক দুই স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ নিয়ে সেনেটে প্রশ্ন করা হলে হেগসেথ বলেন, “আমি নিখুঁত নই; তবে পরিবর্তন সম্ভব।”
তথ্যসূত্র : বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।