ছেলেধরা গুজবের মধ্যে ঢাকার বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত, চারজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পর যখন বাংলাদেশে কয়েকটি স্থানে পিটিয়ে মারা ঘটনা ঘটেছে, তখন পাঁচ বছর আগের এই ঘটনায় আদালতের রায় এল।
বুধবার ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলম রায়টি দেন। পাঁচজনের সাজা হলেও অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রায়ে খালাস পেয়েছে বাকি ৮ আসামি।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা একজন সবজি বিক্রেতা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতরা হলেন- রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন ও আসাদুল ইসলাম।
রায় শুনে দণ্ডিতরা কাঁদতে থাকেন। পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. শাহিন, বাচ্চু মিয়া, বাপ্পি ওরফে শহিদুল ইসলাম, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, বেল্লাল মোল্লা, মো. রাজু ওরফে রুম্মান হোসেন ও মহিউদ্দিন।
রায়ে দণ্ডিতদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সমুদয় অর্থ থেকে ২০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে অবশিষ্ট টাকা রেনুর দুই সন্তানকে দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রায় শুনতে আদালতে হাজির ছিলেন রেনুর দুই সন্তান, তার বোন নাজমুন নাহার এবং তার ভাগ্নে নাসির উদ্দিন টিটু।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী নাসির উদ্দিন টিটু সাংবাদিকদের বলেন, তারা আপিল করবেন।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন রেনু। তখন ছেলেধরার একটি গুজব চলছিল দেশে।
রেনুকে ছেলেধরা সন্দেহ করে স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে গণপিটুনির শিকার হন তিনি। তাতে তার মৃত্যু হলে অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু।
পারিবারিক জীবনে বিপর্যস্ত ছিলেন রেনু। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকছিলেন তিনি। ওই অবস্থায় তার অসংলগ্ন কথায় তাকে ছেলেধরা সন্দেহ করে উন্মত্ত জনতা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল।
২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক দুজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন।
২০২১ সালের ১ এপ্রিল ১৩ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর শুরু হয় বিচার। ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় হলো বুধবার।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করা হয়েছিল। তবে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত তা পিছিয়ে ৯ অক্টোবর নতুন তারিখ ধার্য করে।
অন্যদিকে দুই শিশুর বিরুদ্ধে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু টাইব্যুনাল-৭ এ বিচারাধীন।