(বাকু জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফিরে)
সবুজের সাথে সংহতি না সংঘর্ষ?
‘সবুজ পৃথিবীর সাথে সংহতি’ শ্লোগানকে সামনে রেখে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বসেছিল ঊনত্রিশতম জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২৯। বিতর্ক ছাড়া যেন কোনও কপ শুরুই হতে পারে না। বাকুতেও তাই ঘটল। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশগুলো যখনি আয়োজক হচ্ছে তখনি জনমনে সন্দেহ ও শংকা তৈরি হচ্ছে। দুবাই সম্মেলনেও হয়েছিল। বাকুর ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগও তুলেছেন অনেকে। ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ আন্দোলনের গ্রেটা থানবার্গসহ বহু মানবাধিকার ও জলবায়ুকর্মী আজারবাইজানে জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দুনিয়াজুড়ে বহু অমীমাংসিত তর্ক আছে, ‘জলবায়ু তহবিল’ এমনি আরেক অমীমাংসিত বৈশ্বিক বাহাস। জানলাম, আজারবাইজান সফরে গিয়ে একবার তুর্কিয়ের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়িপ এরদোয়ান একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। ইরান এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কবিতাটি ছিল আজারবাইজান ও ইরানের এক সীমান্তবর্তী নদী আরাসকে নিয়ে। যা হোক, নানামুখী সন্দেহ, দ্বিধা আর জমে থাকা পূর্বতন বহু সম্মেলন থেকে পাওয়া চরম হতাশা আর আশাভঙ্গের নিষ্ঠুর বোঝা নিয়েই ঠাণ্ডা কাঁপুনির বাতাসে বাকুতে শুরু হয় জলবায়ু সম্মেলন। ইনসাতচিলার থেকে মেট্রোতে করগুলু স্টেশনে আসা-যাওয়ার পথে বহু বুড়োবুড়ির সাথে আলাপ হয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডা বাতাসের গতি কমেছে এখন আগের চেয়ে, উষ্ণতাও বেড়েছে। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশন, মুহূর্তে বদলে যায় মানুষের মুভমেন্ট। মেট্রোর সাই-ঝক্কও বাকু সম্মেলন পরিচিত হয়েছে ‘অর্থায়নের সম্মেলন’ বা ‘ফিন্যান্স কপ’ হিসেবে।
আমরা বিশ্বস করেছিলাম বাকুতে অভিযোজন এবং ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্রদ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর ন্যায়বিচার সুরক্ষিত হবে। কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা, প্রাণবৈচিত্র্য, ইনক্লুসন, ভূমিসংকট, ক্লাইমেট মাইগ্রেশন, ক্ষয়ক্ষতি কিংবা প্রশমন বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বাকু জলবায়ু সম্মেলন। সম্মেলনের প্রায় পুরোটা সময় জলবায়ু-অর্থায়নের নামে কেবলমাত্র অঙ্গীকারবিহীন দরকষাকষি হয়েছে।
বহু জলবায়ু সম্মেলনের রেকর্ড ভেঙে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের কপ হয়ে ওঠে বাকু। এর আগে হেগ (কপ-৬), বালি (কপ-১৩), ওয়ারশ (১০), দোহা (কপ-১৮), গ্লাসগো (কপ-২৬), কটোয়াইস (কপ-২৪), প্যারিস (কপ-২১) সম্মেলনগুলো ৩০ ঘণ্টার ভেতর ছিল। কিন্তু বাকু সম্মেলন এসব দীর্ঘসূত্রিতা ভেঙে আরও বেশি সময়ক্ষেপণের অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেয় পৃথিবীকে। অবশ্য লিমা (কপ-২০), ডারবান (কপ-১৭), দুবাই (কপ-২৭) কিংবা মাদ্রিদে (কপ-২৫) আরও বেশি সময়ক্ষেপণ হয়েছিল। সম্মেলন শেষেও ঠিক বোঝা গেল না, ‘সবুজের সাথে সংহতির’ মতো শ্লোগানকে কেন সামনে রেখেছিল বাকু? অর্থায়নের অস্পষ্ট ঘোষণা ভঙ্গুর পৃথিবীর সাথে সংহতি নয়, বরং ক্ষমতা ও মুনাফার সংঘর্ষকে উসকে দিল।
বিলিয়ন নয় ট্রিলিয়ন
প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতৃত্ব অঙ্গীকার করেছিলেন বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু তহবিলের। কিন্তু অঙ্গীকার আর বাস্তবায়ন হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি থেমে থাকেনি। কার্বণ নিঃসরণ কমেনি। ক্ষয়ক্ষতি ও উষ্ণতার পারদ লাগামহীনভাবে বেড়েছে। বাকু সম্মেলনে বিলিয়ন নয়, ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের দাবি উঠেছে। বছরে ১.৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলে সোচ্চার হয়েছে সবাই। কিন্তু বিশ্বনেতৃত্ব এই অথার্য়নকে একটা অস্বস্তিকর অমর্যাদার ‘দরকষাকষি’ বানিয়ে তুলেছিলেন। প্রথমবার তারা মাত্র ২০০ বিলিয়ন ঘোষণা করেন। এরপর ২৫০। জি-২০ সম্মেলন থেকে ৫০০ বিলিয়নের একটা লালবার্তা দেওয়া হয়। শেষমেষ ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ঘোষণা দিয়ে শেষ হয় বাকু সম্মেলন।
সম্মেলনের শেষদিন সন্ধ্যার আগে, দুপুর থেকেই ফিসফাস শুরু হয়েছিল সম্মেলনের সময় বাড়ানো নিয়ে, অর্থায়ন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে অযথা সময়ক্ষেপণের বিরুদ্ধে জলবায়ুকর্মীরা বিভিন্ন মাপের পাত্রে চাল সাজিয়ে প্রতিবাদ জানান। এই সৃজনশীল প্রতিবাদ পারফর্মেন্স আর্টটির নাম ছিল, ‘অন্যায্যতার দাম’।
নিচে লেখা ছিল— ‘‘জলবায়ু অর্থায়নকে প্রতিটি চালের মতো দানায় দানায় পরিমাপ করতে হবে।’’
একটি বড় ট্রেতে অনেকগুলো চাল রাখা ছিল, লেখা ছিল—
‘‘বাঁচার জন্য গ্লোবাল সাউথ রাষ্ট্রসমূহের দাবি ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।’’
একটি ট্রেতে তারচে কম চাল সাজিয়ে লেখা ছিল—
‘‘২০৩০ সালের ভেতর জলবায়ুগত কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য ৫৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’’
আরেকটি ট্রেতে চাল রেখে লেখা ছিল—
‘‘পৃথিবীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মিলিটারাইজেশন বাবদ ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা হয় কিন্তু জলবায়ুর জন্য এক পয়সাও বরাদ্দ হয় না।’’
আরেকটি ট্রেতে বহু চাল রেখে লেখা ছিল—
‘‘জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতি বাবদ বরাদ্দ ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।’’
একটি সাদা পাতায় একটা কালো বৃত্ত এঁকে একটি মাত্র চাল রেখে লেখা ছিল—
‘‘ক্ষয়ক্ষতি পূরণে পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।’’
একটি খালি পাত্রে কিছুই ছিল না, লেখা ছিল— ‘‘কপ-২৮ সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের টোকেন প্রতিশ্রুতি। এই অর্থায়ন অবশ্যই শর্তহীন অনুদান হতে হবে। কোনোভাবেই কোনও ঋণপ্রকল্প বা মিথ্যা কর্পোরেট অভিযোজন বাণিজ্য হতে পারবে না। ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসহ দক্ষিণ গোলার্ধের ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমূহকে সহজে এই অর্থায়ন সুষ্ঠু ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বন্টন করতে হবে। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠী তাদের এগ্রোইকোলজি ও স্থানীয় অভিযোজন চর্চাকে অব্যাহত রাখতে পারে। তরুণ ও যুবদের জলবায়ু আন্দোলন সক্রিয় থাকতে পারে। এই অর্থায়ন সামাজিক অর্ন্তভূক্তিকে নিশ্চিত করবে এবং কোনোভাবেই প্যারিস চুক্তির শর্ত ও নীতি লংঘন করবে না।’’
জীবাশ্ম জ্বালানি, নবায়নযোগ্য শক্তি ও স্থায়িত্বশীলতার তর্ক
বাকু সম্মেলনে প্রবেশের মুখে বানানো কাচের আর্চ গেটটিতে লেখা ছিল, পৃথিবীর প্রথম ‘সোলার গ্লাস আর্চ’। পৃথিবীর প্রথম সোলার আর্চ গেট দিয়ে প্রবেশ এবং প্রস্থানের ভেতর দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতার বিরুদ্ধে কী কোনও প্রণোদনা তৈরি হলো?
বিশ্বনেতৃত্বে নিরাপদ ন্যায্য পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ে বাকুতে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। উন্নয়নের মহীসোপানের চূড়া, তলানি বা খাদ যেখানেই আমাদের অবস্থান হোক না কেন; আমরা সবাই বিদ্যুৎ চাই। আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে এই বিদ্যুৎ আমরা কিভাবে পেতে চাই। জীবাশ্ম জ্বালানি না সবুজ-শক্তি? এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতেই হবে। তরুণ প্রজন্মকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু কেবল সবুজ-শক্তি নির্ভরতাই কি আমাদের গ্রহকে সুরক্ষা করতে পারে? সর্বোপরি পারে না। কারণ কেবল উৎপাদনকে সবুজ হলেই হবে না, লাগাম টানতে হবে আমাদের সর্ববিনাশী ভোগবিলাসিতার।
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৭,০০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদত হয়। এর বেশিরভাগই প্রায় ৪,৬৯০ গিগাবাইট জীবাশ্ম-জ্বালানি ও পারমাণবিক উৎস নির্ভর। জলবিদ্যুৎ থেকে আসে ১,০০০ গিগাবাইট এবং নতুন নবায়ানযোগ্য জ্বালানি থেকে আসে ১,৩২০ গিগাবাইট (সূত্র: আরইএন ২১, ২০১৮)।
২০০৪ সালে পৃথিবীর ১৫৪টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জার্মানিতে আয়োজিত হয় প্রথম নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক সম্মেলন। কার্বণ নিঃসরণ কমাতে এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানি বিষয়ে বৈশ্বিক তৎপরতা শুরু হয়। দেখা গেছে চীন, আমেরিকা, জাপান, জার্মানি, ভারত, কানাডা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রায় ৩৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।
২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫,৭১৯ মেগাওয়াট এবং ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬,৭০০ মেগাওয়াট। যদিও বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় প্রায় ১৫,০০০ মেগাওয়াট। দেশে ৯৭ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় জীবাশ্ম-জ্বালানি থেকে, যার ৬০ ভাগ গ্যাস-নির্ভর। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উৎপাদিত হয় মাত্র ২৩০ মেগাওয়াট। দেশে বর্তমানে মোট বিদ্যুতের মাত্র ২.৭২ ভাগ উৎপাদিত হয় নবায়ানযোগ্য উৎস থেকে এবং ১.৮১ ভাগ পাওয়া যায় সৌরবিদ্যুৎ থেকে।
২০১৯ সালের ভেতর বাংলাদেশে পারিবারিকভাবে ৪.১৩ মিলিয়ন সৌরবিদ্যুত সিস্টেম গৃহীত হয় (সূত্র: ইডকল ২০২৩)। এক হিসাবে দেখা যায়, জনসংখ্যার প্রায় ৯ ভাগ মানুষ কোনও না কোনোভাবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে এবং পরিবারভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ থেকে প্রায় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ থেকে প্রায় এক মিলিয়ন বায়োগ্যাস চুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুতুবদিয়ায় স্থাপিত হয়েছিল দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চরে স্থাপিত হয়েছিল বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু এসব কোনোকিছুই সবুজ-জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট কোনও ব্যবস্থা নয়।
জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তাকে অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের ভেতর দেশের বিদ্যুৎখাত প্রধানত কয়লানির্ভর হয়ে উঠবে। এছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও কিছু বিদ্যুৎ আমদানিও ঘটবে। তাহলে নবায়নযোগ্য সবুজ-জ্বালানি খাতের কী হবে? ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি)’ প্রতিবেদনে জীবাশ্বনির্ভর জ্বালানি খাত থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে স্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করা জরুরি। আবার বৃহৎ সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিজমি অকৃষিখাতে চলে যাওয়ার তর্কগুলোকেও বিবেচনায় আনতে হবে। একইসাথে বাংলাদেশ নেপাল ও ভূটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিরও চিন্তা করছে।
এনসিকিউজি এবং বিস্মৃত অতীত অঙ্গীকার
বাকু সম্মেলনের শেষদিকে নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফায়েড গোল (এনসিকিউজি) -এর খসড়া প্রকাশ করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বছরে ২৫০ বিরিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও এই অর্থায়ন ঋণ, অনুদান নাকি কোনও বিশেষ চুক্তির অধীন হবে তা স্পষ্ট নয়। ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫টি স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র (এলডিসি) ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্রের (সিডস) জন্য কোনও বিশেষ তহবিল বরাদ্দ হয়নি। তবে এই অর্থ কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে দরবার হয়েছে ব্রাজিলের জি-২০ সম্মেলনে। বছরে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের লাল রেখা টেনেছিল ব্রাজিল। বৃহৎ দূষণকারী দেশগুলো তাদের জলবায়ু তহবিলের পূর্ববর্তী অঙ্গীকার এখনও পূরণ করেনি। প্যারিস সম্মেলনে গৃহীত তহবিল নিশ্চিতকরণ ও উষ্ণতা হ্রাসের অঙ্গীকার বরখেলাপ করে চলেছে। বিশ্বের অস্তিত্বের সাথে এটি চরম প্রতারণা। বৃহৎ দূষণকারী রাষ্ট্রগুলো তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এ পর্যন্ত নামমাত্র এক চিমটি বরাদ্দ দিতে পেরেছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রের বাস্তুতন্ত্র কিংবা মানুষ আজ বিপন্ন। প্রতিবছর লাগাতার ঘূর্ণিঝড়, অকালবন্যা ও খরায় কাহিল হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। প্রতিদিন জন্মমাটি ছেড়ে জলবায়ু-উদ্বাস্তুদের মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে এলডিসি দেশগুলোতে। উষ্ণতার পারদ লাগাম হারাচ্ছে। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রার অঙ্গীকার ভুলুন্ঠিত। ০.৮ ডিগ্রি তাপ বেড়েছে। উষ্ণতার পূর্ব রেকর্ড ভেঙে প্রতিটি নতুন বছর হয়ে উঠছে দুর্বিষহ উষ্ণ বছর। উষ্ণতার পারদ ১.৫ ডিগ্রির ভেতর রাখার প্রশ্নেই নতুন লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ‘এনসিকিউজি’ বাকু সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের আলাপেই বেশি সময়ক্ষেপণ করেছে। কপ-২৯ এর প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবাইয়েভ জি-২০ সম্মেলন থেকেই প্রতিশ্রুতির অপেক্ষা করেছেন কিন্তু কোনও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রদানে চাপ তৈরি করতে পারেননি। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিয়েল অর্থায়ন বিষয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেই বাকু সম্মেলন শেষ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন।
বাংলাদেশও এনসিকিউজির মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছে। অভিযোজন, প্রশমন এবং ক্ষয়ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ। অ্যাডাপটেশন ফান্ড গ্যাপ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর অভিযোজন খাতে ৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিল প্রয়োজন। দেশীয় উৎস হতে মাত্র ৩ বিলিয়ন বরাদ্দ পূরণ হয় কিন্তু বাকি ৫.৫ বিলিয়নের ঘাটতি রয়েছে। অনুদানভিত্তিক অর্থায়নের মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
ট্রান্সবাউন্ডারি ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল ও ব্যবস্থাপনা
জলবায়ু অভিঘাত ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্র, জীবনজীবিকা এবং শ্রেণি ও বর্গে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এসব প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া সামালের ধরন সকল শ্রেণি ও বর্গে একরকম নয়। তবে জলবায়ু আঘাতের বহু ধরন এবং প্রতিক্রিয়া ট্রান্সবাউন্ডারি বা আন্তঃরাষ্ট্রিক নানা অমীমাংসিত প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশের ২০২২ কিংবা ২০২৪ এর সিলেট-সুনামগঞ্জ, ফেনী-নোয়াখালী, শেরপুর কিংবা তিস্তা অববাহিকার বন্যা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নজির। একক সময়ে অতি অকাল বর্ষণ এই নিদারুণ বন্যা পরিস্থিতিগুলো তৈরি করেছিল। তবে এর সাথে জড়িয়ে আছে উজান-ভাটির নানা পরিবেশগত সংকট এবং বহু বাহাদুরির-উন্নয়ন অভিঘাত। বৈষম্যমূলক নদীশাসন কিংবা ট্রান্সবাউন্ডারি রিভার ডিক্টেটরশিপ বন্যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছিল। বিশেষ করে উজানে অভিন্ন নদীর ওপর বৃহৎ বাঁধ, বিদ্যুৎ প্রকল্প কিংবা ব্যারেজ অতি বর্ষণের পানির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেখা যায়, উজান থেকে পানিপ্রবাহ ভাটিতে গড়িয়ে সমুদ্রে মিশে যাওয়ার মতো কোনও প্রাকৃতিক পথ পায় না। এমনকি শুষ্ক মওসুমে পানি আটকানো কিংবা বর্ষা মওসুমে ব্যারেজ ও বাঁধের সব দরজা খুলে দিয়ে হুড়মুড়িয়ে পানিপ্রবাহ ভাটিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইসাথে ভাটিতে নদীপ্রবাহ দখল, দূষণ ও রুদ্ধ হওয়ার ফলে ভাটিতেও পানিপ্রবাহ প্রাকৃতিক ব্যাকরণ মেনে সমুদ্রে গড়িয়ে যেতে পারে না। তাই সিলেট, সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, ফেনী, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, শেরপুর কিংবা উত্তরাঞ্চল বারবার ‘জলাবদ্ধ বন্যায়’ তলিয়ে যাচ্ছে।
আবার একইসাথে বাংলাদেশ ও ভারতের বহু জলবায়ুগত আঘাত ও সংকটের ধরন প্রায় একইরকম। বিশেষ করে সুন্দরবন উপকূলে এই সংকট অভিন্ন। বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় উপকূলীয় গ্রামে লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় এবং জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ফলে এসব জীবন ও জনপদে প্রভাব ও সংকটের ধরন একইরকম। এমনকি দুই রাষ্ট্রের সুন্দরবন উপকূলে একইভাবে বাণিজ্যিক চিংড়ি-কাঁকড়া ঘেরের ফলে ক্রমাগত কৃষিজমি কমছে। লবণ-সহনশীল দেশী ধানের জাত ও শস্যফসলের বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জলবায়ুগত সংকটের ধরনেও বহু মিল আছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় হলো বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল। এর ঠিক ভাটিতেই বাংলাদেশের হাওর-জলাভূমি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যভাণ্ডার। কিন্তু বছর বছর উজানের পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় এই খাদ্যভাণ্ড, অনিশ্চিত হয়ে পড়ে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা। একইসাথে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি বালির কারণে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের একরের পর একর কৃষিজমি প্রতিদিন খুন হচ্ছে। কৃষিকাজ হারিয়ে গ্রাম ছেড়ে নিরুদ্দেশ হচ্ছে প্রতিদিন তরুণ-যুবক-শিশু-প্রবীণ।
এমনকি জলবায়ুগত এই উদ্বাস্তুকরণ ভারতের সুন্দরবন ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও ঘটছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে ক্রমাগত বনবিনাশ, অপরিকল্পিত খনন এবং অভিন্ন পানিপ্রবাহকে একতরফাভাবে শাসন করার ফলে বাস্তুতন্ত্রে ফাটল ধরছে। জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাত এই ফাটলকে আরও জটিল করে তুলছে। বিশ্বের অন্যতম বৃষ্টিবহুল এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধারাপাত বদলে গেছে, উষ্ণতা ও তাপদাহ বাড়ছে এবং একইসাথে একক সময়ে অকাল অতিবর্ষণের মাত্রা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি উজান ও ভাটিকে নানাভাবে প্রভাবিত করলেও সবচে বড় আঘাত লাগছে ভাটির বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, দেশি বৈচিত্র্যময় শস্য ফসলের জাত হারিয়ে যাচ্ছে, জীবনজীবিকার ধরণে বহুমুখী পরিবর্তন ঘটছে। সুন্দরবন ও সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের দুটি ‘রামসার সাইট’। টাঙ্গুয়ার হাওরের ঠিক মাথায় ভারতের মেঘালয় পাহাড়। মেঘালয় পাহাড়ে কয়লা, চীনামাটি এমনকি ইউরেনিয়াম খনি আছে। উজানের খনি থেকে বিপদজনক ভারি ধাতু ভাটির হাওরকে দূষিত ও সংকটাপন্ন করবে কেন? আর এভাবে দূষণ ঘটতে থাকলে উজান-ভাটির জলবায়ু ন্যায্যতা কিভাবে সম্ভব?
খুব একটা কার্যকরী না হলেও ভারত-বাংলাদেশ বেশকিছু ট্রান্সবাউন্ডারি ব্যবস্থাপনার ঐতিহাসিক নজির আছে। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন, অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনা কিংবা সুন্দরবন বিষয়ে যৌথ সংরক্ষণ কমিটি ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ-ভারতের ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু সংকটকে যৌথভাবে ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে জলবায়ুগত সংকটের কারণে সৃষ্ট ইকোনমিক এবং নন-ইকোনমিক লস অ্যান্ড ড্যামেজ ব্যবস্থাপনা, যৌথ অভিযোজন উদ্যোগ এবং ট্রান্সবাউন্ডারি দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে সক্রিয়করণে দ্বি-রাষ্ট্রিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে সুন্দরবন এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে পরিকল্পনা হতে পারে এবং পরবর্তীকালে জলবায়ুগতকারণে একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অন্যান্য বাস্তুতন্ত্রও এই ব্যবস্থাপনার আওতায় আসতে পারে।
কেবল ভারত-বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের সকল অঞ্চলেই ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আনা জরুরি। বিশেষ করে আফ্রিকার খরাপীড়িত দেশগুলো, আমাজন অরণ্য অঞ্চল কিংবা ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র সমূহ জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এই ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু ব্যবস্থাপনাকে বাস্ততন্ত্রভিত্তিক তৎপরতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
প্রয়োজন হলে ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু ব্যবস্থাপনাকে একটি অভিন্ন বৈশ্বিক কাঠামো এবং নীতিরেখায় অর্ন্তভূক্ত করা যেতে পারে। অবশ্যই এই ব্যবস্থাপনা বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক হতে হবে এবং গুরুত্ব দিতে হবে অভিন্ন বাস্তুতন্ত্রে জলবায়ুগত সংকট এবং স্থানীয় জনগণের জলবায়ু সংগ্রামকে। জনগোষ্ঠীর স্থানীয় অভিযোজনচর্চা কিংবা জলবায়ু ন্যায্যতার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য যৌথভাবে কাজ করা যেতে পারে। জনগোষ্ঠীভিত্তিক বীজ ব্যাংক, দুর্যোগকালীন খাদ্যমজুত কিংবা এগ্রোইকোলজি জোরদারকরণে অভিন্ন পরিকল্পনা হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জনগণ নিজেদের অভিজ্ঞতা, লোকায়ত জ্ঞান ও অনুশীলনগুলো যেন নিজেদের ভেতর বিনিময় করতে পারে এমন জনবান্ধব ট্রান্সবাউন্ডারি কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
কোনও রাষ্ট্র কিংবা পক্ষ কোনোভাবেই এই ধরণের ট্রান্সবাউন্ডারি ব্যবস্থাপনায় কোনও ধরনের কর্তৃত্ব, খবরদারি, নজরদারি কিংবা বাহাদুরি করতে পারবে না। ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু ব্যবস্থাপনা অবশ্যই অবাধ, শর্তহীন, উন্মুক্ত, জনবান্ধব, পরিবেশবান্ধব, ন্যায্য এবং সমতার নীতিকে ধারণ করবে।
বাকু জলবায়ু সম্মেলনে একেবারেই বিচ্ছিন্ন কিছু আলাপ হলেও ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু ব্যবস্থাপনাকে রাষ্ট্রপক্ষের মূল আলাপে আনা জরুরি। কারণ বাকু সম্মেলনে বহু দেশের মানুষ তাদের বহু অভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জলবায়ু অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন, যা, ট্রান্সবাউন্ডারি ব্যবস্থাপনা কাঠামো ছাড়া সামাল দেওয়া কঠিন। জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রেও এই ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ট্রান্সবাউন্ডারি লস অ্যান্ড ড্যামেজ পূরণে কিংবা অভিন্ন অভিযোজনের ক্ষেত্রে যখন দুটি বা কয়েকটি রাষ্ট্র মিলে একটি অভিন্ন ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু পরিকল্পনা করবে সেক্ষেত্রে অর্থায়ন ট্রান্সবাউন্ডারির সকল পক্ষ রাষ্ট্রকে সমানভাবে ও ন্যায্যতার দৃষ্টিতে বন্টন করতে হবে। বাকু সম্মেলনে স্পষ্টভাবে ট্রান্সবাউন্ডারি জলবায়ু ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা এবং এমনকি সার্ক নিয়েও কিছু আলাপ এসেছে। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানের ভেতর আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়িয়ে জলবিদ্যুৎ, কৃষি, বন ও নদী ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হতে বাংলাদেশ আহবান জানিয়েছে।
দমবন্ধ শহর বনাম জলবায়ুবান্ধব নগর পরিকল্পনা
বাকু সম্মেলন যখন চলছিল তখনও বিশ্বের বহু শহরে শিশু ও প্রবীণেরা শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। বিচিত্র সব জ্বর, কাশি, এলার্জি উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভিড় জমেছে ঢাকা, দিল্লি, করাচি কিংবা বেইজিং শহরে। এইসব শহরের বাসিন্দারা প্রশ্নহীন বায়ু দূষণের কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। বায়ুদূষণ মানুষের কেবল আয়ু বা সুস্বাস্থ্য নয়, সময় এবং সৃজনশীল বিকাশমানতার সম্ভাবনাকেও প্রতিদিন হত্যা করছে। প্রতিদিন শহরগুলো হয়ে উঠছে অসহনীয় আস্তাকুড়। নদী, খাল, জলাভূমি লুট করে শহরকে বিপদজনক সব দালানের ভিড়ে চাপা দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রীর বদলে বাড়ছে উষ্ণতা ও দূষণকারী উপাদানের বহুল ব্যবহার। অভ্যন্তরীণ তাপ বেড়ে এক একটি শহর হয়ে ওঠছে ফুটন্ত নগর।
ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রায় ১৫ ডিগ্রি বেড়েছে। উদ্যান, কুঞ্জ, বৃক্ষসারি ও সবুজবলয় সব উধাও করে ঢাকার মতো শহরের আগামী গন্তব্য কোথায় কে জানে? পাশাপাশি প্রতিদিন কয়েক হাজার জলবায়ু উদ্বাস্ত ক্ষুধার্ত বেকার মানুষের মিছিল প্রবেশ করছে ঢাকায়। বাকু জলবায়ু সম্মেলনে নগর জলবায়ু এবং জলবায়ুবান্ধব নগর পরিকল্পনা বিষয়ে কিছু আলাপ হয়েছে। সম্মেলনের নবমদিনে প্রেসিডেন্সিতে শহর ও নগরের পরিবেশ প্রকৃতি সুরক্ষা বিষয়ে কিছু আলাপ উঠেছে।
জলবায়ু, প্রকৃতি এবং জনস্বাস্থ্যকে বিবেচনা করে নগরকৃষি এবং ইথিক্যাল ফুড কনসাম্পসন বিষয়গুলো নগরপরিকল্পনায় যুক্তকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকেই। নগরে খাদ্য অপচয় এক বড়রকমের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে খাদ্যবর্জ্য একইসাথে মিথেন নিঃসরণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে এবং একইসাথে খাদ্য-অপচয় ক্ষুধার্ত পৃথিবীর বহুজনের সাথে অন্যায় বন্টন বৈষম্যকেও জিইয়ে রাখে। জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি নগরের খাদ্য-অপচয় রোধে জরুরিভাবে কর্মসূচিগ্রহণে তৎপর হতে আহবান জানিয়েছে। ২০২৭ সালের আইপিসিসি প্রতিবেদনে ‘নগর ও জলবায়ু পরিবর্তন’ বিষয়ক সকল বহুমুখী গবেষণাকে যুক্তকরণের আলোচনাও হয়েছে।
খাবারের থালার দায়িত্ব নিতে হবে
সুষম নিরাপদ খাদ্য কেবল পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে না বরং তা জলবায়ু সংকট মোকাবেলার অন্যতম ভিত্তি। দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে খাদ্যব্যবস্থা নিয়ে আলাপ উঠলেও বাকু সম্মেলনে জলবায়ুবান্ধব কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যব্যবস্থা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহৎ দূষণকারী কোনও রাষ্ট্র খাবারের থালার দায়িত্ব নিতে চায়নি। ব্রাজিলের ‘কৃষিউন্নয়ন ও পারিবারিক কৃষি’ বিষয়ক মন্ত্রীও বলেছেন, খাদ্যব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নিয়ে আলোচনা কম। ২০২৪ সালের বিশ্ব খাদ্য দিবসে ব্রাজিল ‘ন্যাশনাল প্ল্যান ফর এগ্রোইকোলজি অ্যান্ড অর্গানিক প্রোডাকশন’ ঘোষণা করে এবং চার বছর মেয়াদী এক এগ্রোইকোলজি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় অকাল বর্ষণ এবং বন্যা বাড়ছে, আফ্রিকা ও দক্ষিণ ইউরোপে খরা দীর্ঘ হচ্ছে কিংবা অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্রাজিল ঝড় ও দাবানলে পুড়ছে। পূর্ব আফ্রিকার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রের উপকূল সমতট সর্বত্র ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা জলবায়ু পরবির্তনের কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
অকালবন্যা এবং খরা বাড়ছে পৃথিবীব্যাপিই। পৃথিবীর ৫১০ মিলিয়ন ক্ষুদ্র কৃষকেরা নিজস্ব বিনিয়োগে পৃথিবীর প্রায় ৩৫ ভাগ খাদ্য উৎপাদন করে। কিন্তু ব্যক্তি, সরকার, প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী থেকে মাত্র ১ শতাংশ আর্থিক সহায়তা পায়। বাকু সম্মেলনে পারিবারিক কৃষিনির্ভর খাদ্যব্যবস্থা অভিযোজনকে ত্বরান্বিত করতে আজারবাইজান সরকার ‘হারিমোনিয়া ক্লাইমেট ইনিসিয়েটিভ ফর ফার্মারস’ প্রকল্প ঘোষণা করে। বলা হয়েছে, খাদ্যব্যবস্থায় পাবলিক ও প্রাইভেট বিনিয়োগ বাড়াতে এবং বিশেষভাবে নারী ও তরুণ কৃষকদের ক্ষমতায়িত করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজনকে সম্প্রসারিত করতে হারিমোনিয়া একটি নলেজ হাব হিসেবে কাজ করবে। জাতিসংঘের এফএও, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউ এফ পি), ইফাদ-এর সাথে কনসালটেটিভ গ্রুপ অন ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (সিজিআইএআর) প্রস্তাব করেছে, এনসিকিউজিকে অবশ্যই কৃষি ও পানিকে গুরুত্ব দিয়ে ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সামগ্রিক কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ৩০০-৪০০ বিলিয়ন তহবিল নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, জলবায়ু অভিঘাত সামাল দিতে একমাত্র খাদ্যব্যবস্থা সেক্টরেই প্রায় ১.১ ট্রিলিয়ন তহবিল দরকার। বিশ্বব্যাপী গ্রামীণ কৃষক, জেলে, আহরণকারী প্রান্তিক জনগণ লোকায়ত জ্ঞান ও স্থানীয় প্রাণসম্পদ সুরক্ষার ভেতর দিয়ে এগ্রোইকোলজি চর্চার মাধ্যমে জলবায়ুবান্ধব এক সার্বভৌম ভবিষ্যত কৃষিব্যবস্থার জন্য লড়ছে। এই নির্ঘুম খাদ্যযোদ্ধাদের ঘরেই জলবায়ু তহবিল প্রথম পৌঁছাতে হবে। ‘স্মার্ট এগ্রিকালচার’, ‘ক্লাইমেট রেডি জিন টেকনোলজি’ কিংবা ‘জেনেটিক্যালি মডিফিক্যাশনের’ নামে কোনও নতুন ‘সবুজ উপনিবেশ’ বা মিথ্যা কর্পোরেট সমাধান চাপিয়ে দিয়ে আরেকটা সর্বনাশা ‘সবুজ বিপ্লব’ ঘটানোর পাঁয়তারা রুখতে হবে।
বাকু সম্মেলনে বেশকিছু দেশ কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থাকে তাদের জাতীয় টার্গেট হিসেবে আলোচনা করেছে। কাজাখস্তান কৃষিক্ষেত্রে মিথেন নিঃসরণ হ্রাসে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানায়। গিনি বিসাউ ম্যানগ্রোভ সুরক্ষা, পানি সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার আলোচনা করে। বেলারুশ কৃষিকে প্রাথমিক ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তানজানিয়া নিরাপদ জ্বালানি ও স্বাস্থ্যকর চুলা এবং ক্লিন কুকিং নিয়ে আলোচনা করেছে। অ্যাংগোলা কৃষি অভিযোজনকে গুরুত্ব দিয়েছে। জর্ডান ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এবং ইন্দোনেশিয়া প্রাকৃতিক বননির্ভর কার্বন ক্রেডিট নিয়ে আলোচনা করে। খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রধান আলোচ্য বিষয় করার প্রস্তাব রেখেছে মালাউয়ি। জ্বালানি কিংবা খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরের ক্ষেত্রে কোনও ধরনের বাড়তি চাপ কিংবা কোনও অর্থায়নের ন্যূনতম চাপ যেন কৃষকের উপর তৈরি না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে হাঙ্গেরি। রাশিয়া নতুন কৃষিপ্রযুক্তি বিষয়ে আলোচনা করেছে। মরক্কো আফ্রিকার কৃষি অভিযোজনে তাদের সহযোগিতার কথা আলোচনায় এনে মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাপ করেছে এবং রেজিলিয়েন্ট কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলেছে। কেনিয়া জলবায়ু অভিযোজনকে গুরুত্ব দিয়ে কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তর বিষয়কে আলোচনায় এনেছে। ‘রাশিয়ার মিলিটারি একশনের’ প্রভাব ও রিকভারির বিষয়গুলো আলোচনায় এনেছে ইউক্রেন। ডেনমার্ক কৃষি থেকে কার্বন নির্গমনকে গুরুত্ব দিয়ে কৃষিকাজে কার্বন ট্যাক্স ধার্য করেছে।
‘দ্য গ্লোবাল ফুড ব্যাকিং নেটওয়ার্ক’-এর তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিদিন বহু খাবার অপচয় হয়, এসব খাদ্য বর্জ্য হিসেবে পচে গিয়ে মিথেন গ্যাস তৈরি করে যা জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রভাবিত করে। খাদ্যবর্জ্য ল্যান্ডফিল স্তুপ থেকে প্রায় ২০ ভাগ মিথেন নিঃসরণ ঘটে। গ্লোবাল মিথেন প্লেজের মাধ্যমে ১৬০টি দেশ ২০৩০ সালের ভেতর ৩০ ভাগ মিথেন নিঃসরণ হ্রাস করার অঙ্গীকার করেছে। মাঠ থেকে ভোক্তা অবধি পৌছাঁতে সাপ্লাইচেইনের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্য বিনষ্ট ও অপচয় হয়। অর্গানিক বর্জ্য থেকে মিথেন নিঃসরণ রোধে বাকু সম্মেলনে তৈরি ‘কপ-২৯ ডিক্লারেশন অন রিডিউসিং মিথেন ফ্রম অগার্নিক ওয়াস্ট’ ঘোষণায় আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৩০টি দেশ সম্মতি দিয়েছে। যার ভেতর ৮টি দেশ শীর্ষ অর্গানিক বর্জ্য থেকে শীর্ষ মিথেন নিঃসরণকারী দেশ।
এই ঘোষণায় এনডিসি, রেগুলেশন, তথ্য, অর্থায়ন ও পার্টনারশিপ এই পাঁচটি বিষয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্লোভাকিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, পানাম, তুর্কিয়ে, গুয়াতেমালার পাশাপাশি বাংলাদেশ উপস্থিত থেকে এ বিষয়ে জাতীয় টার্গেট বাস্তবায়নে কাজ করার সম্মতি জানায়। মিথেন নিঃসরণ রোধে কপ-২৮ আলাপে টেনেছিল জীবাশ্ব জ্বালানি খাত আর কপ-২৯ টেনেছে খাদ্য-অপচয় খাত। কৃষিখাত থেকে মিথেন নিঃসরণ রোধ কিংবা হয়ত আরও কোনও সমাধানহীন নতুন আলাপ যুক্ত করবে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য কপ-৩০। ততদিন পর্যন্ত কিন্তু আমরা না খেয়ে থাকব না, ভয়াবহ কার্বণ দূষণের দায়ে অপরাধী ধনী দেশ বা ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ গোলার্ধের কেউ। লবণাক্ততা, খরা, অনাবৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, তাপদাহ, শিলাবৃষ্টি সবকিছু সামলে আবারও কৃষককেই খাদ্য জোগাতে হবে এই নিওলিবারেল ক্ষুধার্ত ব্যবস্থাকে।
প্রাণবৈচিত্র্য, লোকায়ত জ্ঞান, আদিবাসী ও স্থানীয় জনগণ
প্রাণবৈচিত্র্য হলো প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মূল খুঁটি। প্রাণবৈচিত্র্য বিনষ্ট হলে সভ্যতা বিলুপ্তির মুখোমুখি দাঁড়ায়। হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতির মানুষেরাই প্রাণপ্রজাতির গণবিলুপ্তির জন্য দায়ী। এই দায়ভার এখনও কোনও দায়িত্বশীলতা তৈরি করতে পারেনি ক্ষমতাধর বিশ্বনেতৃত্বকে। হয়ত এই গ্রহ আর খুব বেশি দিন জীবন বিকাশের জন্য উপযোগী থাকবে না। নিয়ানডার্থাল, ডেনিসোভান, ইরেকটাস কিংবা ফ্লোরিয়েনসিসের মতোই হারিয়ে যাবে স্যাপিয়েন্স মানুষেরা। যদি আবার এই গ্রহেই জীবন ও সভ্যতার সূচনা হয় কিংবা অন্য কোনও গ্রহ বা গ্যালাক্সিতে তখন হয়ত সেই নতুন সভ্যতা জানবে মানুষের জলবায়ু অবিচারের কারণেই কিভাবে প্রশ্নহীনভাবে বিলীন হয়েছিল জীবন ও জনপদ। সেই সভ্যতায় হয়ত ঘৃণা, ক্ষোভ, বয়কট, তাণ্ডব, পরিত্যাগের ধারণা নাও থাকতে পারে। কিছু মুনাফাখোর ক্ষমতাধর দুর্বৃত্তের কারণে উধাও হয়ে যাওয়া একটা সাজানো পৃথিবীর কাহিনী শুনে তারা হয়ত বিস্মিত নাও হতে পারে। কিন্তু আমরা কি পরবর্তী প্রজন্ম বা অন্য কোনও গ্রহের জন্য এমন কোনও নিদারুণ নির্দয় কাহিনী রেখে যেতে পারি? না কোনোভাবেই পারি না।
নয়াউদারবাদী ব্যবস্থায় সবকিছুই আজ বহুজাতিক কোম্পানির জিম্মায়। কৃষি, খাদ্য, ভূমি, পানি কিংবা প্রাণসম্পদ। ভোক্তার ভঙ্গি কি আত্মবিশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করছে কোম্পানি। যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ করে অস্ত্র কোম্পানি, বিলাসিতা নিয়ন্ত্রণ করে কোম্পানি। সামাজিক শ্রেণি ও বৈষম্য চাঙ্গা রাখে বহুজাতিক কোম্পানি। জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতিও নিয়ন্ত্রণ করে কোম্পানি। প্রতি বছর জলবায়ু সম্মেলনে বহুজাতিক কোম্পানির লবিষ্টদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কোনও কোম্পানি, খবরদারি, উপনিবেশ বা এজেন্সি নয়; দুনিয়া টিকে আছে আদিবাসী ও স্থানীয় জনগণের সংগ্রাম ও ভালোবাসায়। বাকুতে একটি মেট্রো স্টেশনের নাম নাসিমি। চৌদ্দ শতকের আজারবাইজানি মরমী কবি ইমাদেদ্দিন নাসিমির নামে। নাসিমির একটি কবিতায় আছে:
‘‘এ দুনিয়ায় ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছুর ঠাঁই নেই
তোমরা যাকে জ্ঞান বলো, তা গল্প গুজব ছাড়া কিছুই নয়।’’
(মুহাম্মদ ওহীদুল আলমের অনুবাদ থেকে নেওয়া)
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কোনও মিথ্যাচার বা মুনাফাপ্রবণ গল্পগুজব সমাধান নয়; পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসাই একমাত্র সত্যিকারের সহজ সমাধান।
লেখক: লেখক ও গবেষক।
ইমেইল: [email protected]