Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

হাসিনার আমলে ২৮ উপায়ে দুর্নীতি : শ্বেতপত্রের তথ্য

কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদনটি জমা দেন। ছবি : পিআইডি
কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদনটি জমা দেন। ছবি : পিআইডি
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে ২৮ উপায়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে উঠে এসেছে অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে।

কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদনটি জমা দেন।

এতে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে ২৮ উপায়ে প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা শুধু বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

দুর্নীতির জন্য সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে ব্যাংকিং খাতের কথা উল্লেখ করে শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতের পরে রয়েছে ভৌত অবকাঠামো এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। বিগত সরকারের লুটপাটের অন্যতম আরেকটি প্রধান খাত ছিল আইসিটি খাত বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে ও নানা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।

সেই ধারাবাহিতায়দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি রবিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন হাস্তান্তর করা হয় বলে প্রেস উয়িংয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়। প্রতিবেদনটি শিগগির জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করার আশা করছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

প্রতিবেদনে কমিটি দুর্নীতির যেসব উপায়ের কথা বলেছে, তার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ব্যাংক দখল, ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি ও অবাস্তব প্রকল্প বাস্তবায়ন।

এতে বলা হয়েছে, প্রকল্প গ্রহণ করার সময় বেশি ব্যয় দেখিয়ে লুটপাট, এরপর আবার দফায় দফার সেসব প্রকল্প সংশোধন করে টাকা লুটপাট করা হত। আবার এসব প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের সময় একচেটিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া।

প্রয়োজন না থাকলেও প্রভাবশালীরা দুর্নীতির উদ্দেশ্যে প্রকল্প অনুমোদন নিয়েছেন বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে দলীয়করণ, স্বজন প্রীতি, বিশেষ করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই তাদের মেধা বা যোগ্যতার পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া হত।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে দুর্নীতি আরেকটি উপায় হিসেবে প্রকল্পের জমি বিক্রি বাণিজ্যের কথা বলা হয়েছে, যার অংশ হিসেবে প্রকল্প অনুমোদনের আগে প্রকল্প এলাকায় দলের প্রভাবশালীরা আগে জমি কিনে রেখে পরে প্রকল্পে বিপুল অর্থ দিয়ে বিক্রি করে লুটপাট করত।

বেশি মূল্যে ঠিকাদার নিয়োগের কথাও দুর্নীতির উপায় হিসেবে এসেছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান না করে, অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব থাকা ঠিকাদারদের বেশি দরে সরকারি কাজের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি প্রকল্পের সম্পদ ও অর্থের অপব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদন। বলা হচ্ছে, এই উপায়ে  প্রকল্পের গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য প্রভাবশালী কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেওয়া হত।

দুর্নীতির আরেকটি উপায় হিসেবে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় সিন্ডিকেট করে বেশি দাম নির্ধারণ করে দুর্নীতি করা হয়েছে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দুর্বল হয়েছে বাজার ব্যবস্থাপনা।

এসবের পাশাপাশি প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিতে বিভিন্ন রকম অব্যাহতিমূলক কর নীতি এবং সরকারি কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে দুর্নীতির উপায় হিসেবে।

এ ছাড়া আরও যেসব উপায়ের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে, তার মধ্যে রয়েছে– রাজনৈতিক নেতাদের সরকারি তহবিল ব্যবহার, তথ্য ফাঁস করে বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা প্রদান, যোগসাজশের ভিত্তিতে দুর্নীতি, শোষণমূলক দুর্নীতি, একচেটিয়া বাজার দখল, তথ্য গোপন করে দুর্নীতি, পদোন্নতির জন্য দুর্নীতি, কমিশন ভাগাভাগি, রাজনৈতিক আনুকূল্য পেতে দুর্নীতি, এবং আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দুর্নীতি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত