মেদহীন শরীর পেতে আমাদের কত না আয়োজন। আজকাল তো ক্যালোরি মেপে খাওয়ারও চল শুরু হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া তা করলে হতে পারে ভয়াবহ বিপদ। আজকাল অনেকেই মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করছেন যেগুলোর কাজ হলো খাবার পাতে যা যা আছে তার ক্যালোরি মেপে দেওয়া। অনেকের ধারণা এই অভ্যাসটি শরীর সুন্দর ও ফিট রাখে।
আপাত দৃষ্টিতে এই অভ্যাসটি ভালো। তবে যদি সঠিক নিয়ম মানা না হয়, হতে পারে শারীরিক, এমনকি মানসিক ক্ষতিও।
সঠিক নিয়ম জেনে নেওয়ার আগে চলুন জেনে নিই- ক্যালোরি মেপে খাদ্য গ্রহণ কিংবা ‘ক্যালোরি কাউন্টিং’ বিষয়টি কি?
এ ব্যাপারে দিল্লির সিকে বিড়লা হসপিটালের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ দীপালি শর্মা বলেন, “ক্যালোরি কাউন্টিং হলো নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য বা ফিটনেস অর্জনের লক্ষ্যে দৈনিক ক্যালোরি মেপে খাদ্য গ্রহণ।”
যদিও ক্যালোরি গণনা আপনার ওজন নিরীক্ষণ করার একটি কার্যকর উপায় হতে পারে, এটিও কঠিন। বিশেষজ্ঞরা সর্বদা পেশাদার তত্ত্বাবধানে এটি করার পরামর্শ দেন কারণ, নির্দেশিকা ছাড়াই এটি স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
ক্যালোরি কাউন্টিং ওজন নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায়। তবে যদি তা হয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী। কোন গাইডলাইন এবং পরামর্শ ছাড়া ক্যালোরি মেপে খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস না গড়ে তোলাই ভালো।
মুম্বাই এর আয়ুর্বেদ এবং পুষ্টি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. প্রাচি মহস্কর ক্যালোরি কাউন্টিং এর বিপদগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষত কোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়া ক্যালোরি মেপে খাদ্য গ্রহণ করলে কী ক্ষতি হতে পারে তিনি তা জানিয়েছেন।
জেনে নেওয়া যাক সেই বিপদগুলো-
- শুধুমাত্র ক্যালোরির ওপর মনোযোগ থাকে। ফলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়না।
- ক্যালোরির লক্ষমাত্রা শরীরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া।
- সারাক্ষণ ক্যালোরি নিয়ে চিন্তিত থাকার কারণে নেতিবাচক খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।
- খাবার দাবার নিয়ে অযথা চাপ আর উদ্বেগ তৈরি হয়।
- অহেতুক বেশি বেশি খাওয়ার অথবা কম খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। ফলে সৃষ্টি হয় স্বাস্থ্যঝুঁকি।
- শুধুমাত্র ক্যালোরিতে মনযোগী হওয়ায় অনেক জরুরী পুষ্টি থেকে শরীর বঞ্চিত হয়। ফলে ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
কিন্তু কেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শই প্রয়োজন?
এ বিষয়ে ড. দীপালি শর্মা বলেন, একজন ডায়েটিশিয়ান ব্যক্তির পেশীর ধরন, শরীরে উপস্থিত চর্বির পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করে খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করে দেন। এতে তিনি ব্যক্তি ভেদে শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সমন্বয় করে একটি লক্ষ্য ঠিক করেন। যারা উচ্চ শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে সেইসব ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজন হয় যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার। যাতে তারা পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ করেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে না ফেলেন।”
এছাড়াও, ডায়েটিশিয়ানরা ব্যক্তিদের সুষম খাদ্যের বিষয়ে সঠিক ধারণা দেন। যা তাদের একটি টেকসই জীবনযাপন এবং খাবারের সাথে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করে।
ক্যালোরি মেপে খাদ্য গ্রহণ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মূল কারণ নিজের শরীর সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা। বিশেষজ্ঞরা তাই অজ্ঞতাবশত ক্যালোরি মেপে খাওয়ার বিপদ্গুলোর সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে সতর্ক করেন।
ক্যালোরি মেপে খাওয়ার অভ্যাস থেকে হতে পারে মানসিক সমস্যা। এমনটি বলছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
সঠিক নির্দেশনা ছাড়া ক্যালরি মেপে খাদ্য গ্রহণ করার কারণে অনেকেই তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না। এতে করে অনেকেরই নিজের ওপর আস্থাহীনতা, এমনকি বিষণ্ণতাও তৈরি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, পরামর্শ ব্যতীত ক্যালোরি কাউন্টিং যে কাউকেই উদ্বেগ এবং মানসিক চাপের মতো মানসিক রোগে আক্রান্ত করতে পারে। এর ফলে খাবার দাবার নিয়ে তৈরি হতে পারে শুচিবায়ু মনোভাব।
তাই মোদ্দা কথা হলো, ক্যালোরি যতোই মেপে খান না কেন, তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে হওয়া চাই।
ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে