এতদিন কক্সবাজার বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারতো সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। এখন রাত ১০টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচলের সুযোগ দিচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
নতুন সুবিধা কার্যকর হলে রাতেও উড়োজাহাজে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন যাত্রীরা। শীতকালীন সূচি অনুযায়ী আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে সেই সুবিধা পাওয়া যাবে।
এই সিদ্ধান্তকে কাজের প্রয়োজনে কক্সবাজার যাতায়াত করা পর্যটক বা যাত্রীদের জন্য বড় সুযোগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তখন তারা সকালে কক্সবাজার গিয়ে রাতেই ঢাকায় ফেরার সুযোগ পাবেন। পর্যটন নগরীর জন্য এটিকে একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন এভিয়েশন খাতের ব্যবসায়ীরাও।
এরই মধ্যে যাত্রী টানতে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। রাত নয়টার ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারী বিমান সংস্থা এয়ারঅ্যাস্ট্রা। রাত সাড়ে নয়টার ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে নভোএয়ার।
এয়ারঅ্যাস্ট্রার চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সোহেল মজিদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা ২৭ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন রাত নয়টায় কক্সবাজার থেকে ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছি। সেই ফ্লাইট ঢাকায় পৌঁছবে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। এর আগে ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে কক্সবাজার রওনা দিবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়।”
রাতে ফ্লাইট চালু থাকলে যারা ডে ট্রাভেলার (দিনে গিয়ে দিনে ফেরেন), তাদের সুবিধা হবে বলে মনে করেন সোহেল মজিদ। তিনি বলেন, “তারা চাইলে ঢাকা থেকে সকাল সাতটার ফ্লাইটে কক্সবাজার গিয়ে দিনভর জরুরি কাজ সেরে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করে রাতে ঢাকায় ফিরতে পারবেন। সেজন্য সেভাবেই ফ্লাইট শিডিউল করা হয়েছে।”
রাতের ফ্লাইট চলাচলে সাড়া মিললে এই বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা উচিত বলে মনে করেন সোহেল মজিদ। তার মতে, এতে করে এই ফ্লাইট ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা বাস্তব রূপ পাবে।
বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চারটি বিমান সংস্থার ১৭-১৮টির মতো যাত্রীবাহী ফ্লাইট আছে। আকাশপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। ভাড়া গুণতে হয় সর্বনিম্ন ৫৬০০ টাকা।
রাতেও ফ্লাইট চলাচল করাটা চাকরিজীবী বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা এক্সিকিউটিভদের জন্য ভালো সুযোগ বলে মনে করেন চট্টগ্রামভিত্তিক ট্রেফেল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপক এমডি মামুন। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “ধরুন কক্সবাজারে আপনার অফিসিয়াল মিটিং আছে। এই ফ্লাইট চললে সেই মিটিং শেষ করে হোটেলে না থেকে রাতেই ঢাকায় ফেরার সুযোগ পাবেন।”
আবার যারা বিদেশে ট্রাভেল করেন তাদের জন্যও এ ফ্লাইট সুবিধাজনক হবে বলে মনে করেন ট্রেফেল ট্যুরসের কর্মকর্তা ইখতিয়ার ইসলাম সাবিদ। তিনি বলেন, চাকরির কারণে বর্তমানে কক্সবাজারে প্রচুর বিদেশি আছেন; যারা নিয়মিত বিদেশ সফর করেন। পাশাপাশি অনেক স্থানীয়ও বিদেশ ভ্রমণ করেন। তাদেরকে ফ্লাইট ধরতে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় গিয়ে একরাত হোটেলে থাকতে হয়। এখন মাত্র একঘণ্টার ফ্লাইটে রাতে কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়ে তারা ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে রওনা দিতে পারবেন।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি চারটি এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালাচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট চালায় বেসরকারী এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা। দিনে ৭/৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করতো এয়ারলাইন্সটি। কিন্তু জুলাই থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় ফ্লাইট সংখ্যা কমে ৬টিতে নেমেছে।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দিনে ৩/৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বেসরকারী বিমান সংস্থা নভোএয়ার। শীতকালীন নতুন সূচিতে তারা একটি ফ্লাইট বাড়িয়েছে। নতুন সূচিতে ২৭ অক্টোবর থেকে প্রতিদিন রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার থেকে ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে বিমান সংস্থাটি। সেই ফ্লাইট ঢাকা পৌঁছবে রাত সাড়ে ১০টায়।
বিমান বাংলাদেশ ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। নতুন সূচিতে এখনো ফ্লাইট চুড়ান্ত করেনি সরকারী এই বিমান সংস্থাটি। তবে সংস্থাটি কমপক্ষে একটি ফ্লাইট বাড়াবে।
শীত মৌসুমে নতুন সূচি অনুযায়ী ইউএস বাংলা ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছে কিন্তু এখনো কটি বাড়তি ফ্লাইট চালাবে সেটি এখনো চুড়ান্ত করেনি।
জানতে চাইলে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এই রুটে যাত্রী আছে ঠিক। কিন্তু রাতের ফ্লাইটে কত যাত্রী মিলছে তার ওপর ভিত্তি করে আমরা ফ্লাইট বাড়াবো। আমরা স্টাডি করছি।”
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে দিনে গড়ে এক হাজার ৫০০ যাত্রী আসা-যাওয়া করে। শীতের মৌসুমে যাত্রী বেড়ে ২ হাজার জনে দাঁড়ায়।
কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপক গোলাম মর্তূজা হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “২৭ অক্টোবর থেকে রাতে ফ্লাইট পরিচালনায় আমরা তৈরি। এখন কক্সবাজারে দিনে ১৭-১৮টি ফ্লাইট উঠানামা করে। শীতে সংখ্যাটা বেড়ে যায়। গত বছর দিনে ২২টি ফ্লাইট উঠানামা করতে দেখেছি। এবার কেমন হবে সামনে বোঝা যাবে।”
কক্সবাজার বিমানবন্দরে এখন বিভিন্ন আকারের উড়োজাহাজ উঠানামা করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রী বেশি থাকলে এয়ারলাইনসগুলো বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহন করে। তাছাড়া ছোট আকারের এটিআর, ড্যাশ-৮ সিরিজের উড়োজাহাজ বেশি উঠানামা করে।