প্রতি শীতের মৌসুমে বিশেষ করে ডিসেম্বরে পর্যটকদের ঢল নামে কক্সবাজারে। ঠিক কতজন ভ্রমণপিপাসু এসময় সেখানে ঘুরতে যান বা তাদের কারণে স্থানীয় অর্থনীতি কতটা সচল হয়, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার উপায় নেই। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে হিসাব কষে একধরনের পরিসংখ্যান দাঁড় করানো হয় প্রতি বছরই।
সেই হিসাব অনুযায়ী, গত ১৫ দিনে কক্সবাজারে ভিড় করেছে ১৬ লাখের বেশি পর্যটক। আর এসময় পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবসা হয় আনুমানিক ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি।
পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী এবং তাদের সংগঠন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
তারা বলছেন, কক্সবাজারে মোট কত জন পর্যটক ঘুরতে আসেন এবং কত টাকার ব্যবসা হয়, তা নিয়ে কোনও প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান নেই।
তবে আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে গত ১৫ দিনে ১৬ লাখের বেশি পর্যটক সেখানে যান বলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। টানা ১৫ দিন ধরে (শুক্রবার পর্যন্ত) কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তবে শনিবার থেকে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করে।
কক্সবাজারে বিভিন্ন মানের সাড়ে ৫০০ আবাসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ২০ হাজারের কম বেশি পর্যটকের রাত যাপনের সুযোগ রয়েছে।
গত ১৫ দিনে প্রতিদিন গড়ে কখনও ১ লাখের বেশি, কখনও লাখের কিছু কম পর্যটক সেখানে যান। সেই হিসাবে ১৫ দিনে ১৬ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন বলে ধারণা আবুল কাশেম সিকদারের।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে সাড়ে ৫০০ আবাসিক প্রতিষ্ঠান ৪টি ভাগে বিভক্ত। বিলাসবহুল ও তারকা মানের ১০০টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ করে ১০ কোটি টাকা, মাঝারি মানের ২০০টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ করে ২ কোটি টাকা, তার নিচে কম রুমের ২০০টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার করে ১ কোটি টাকা, কটেজ ও গেস্ট হাউস মানের ৫০টি প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার করে ১ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
এই খাতে প্রতিদিন গড়ে ১৪ কোটি টাকা করে এই ১৫ দিনে ২১০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে জানান আবুল কাশেম সিকদার।
আবাসিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রেস্তোরাঁ খাতে এসময় ব্যবসার হিসাবও তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রেস্তোঁরা মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, কক্সবাজারে কমপক্ষে ৫০০টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে ১২০টি রেস্তোরাঁ সমিতির সদস্যভুক্ত। এসব রেস্তোরাঁর বিভিন্ন সময়ের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে গত ১৫ দিনে আনুমানিক ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
তার মতে, ১২০টি রেস্তোরাঁয় ১৫ দিনে ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা হলে প্রতি রেস্তোরাঁর বিপরীতে গড়ে ব্যবসা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা করে। রেস্তোরাঁর সংখ্যা ৫০০ হলে ব্যবসার পরিমাণ আনুমানিক ৭৫ কোটি টাকা।
আবাসিক প্রতিষ্ঠান-রেস্তোরাঁ ছাড়া পরিবহন, দোকানপাট, মার্কেটও এসময় মুনাফা করেছে অঢেল।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসার পরিমাণ পুরোটাই ধারণার ওপর করা হয়। পর্যটকদের মধ্যে অনেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করেন, আবার অনেকে লাখ টাকাও খরচ করেন।
যদি ১৫ দিনে ১৬ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা খরচ ধরা হলে ব্যবসা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি।
এদিকে, কক্সবাজারে শনিবার থেকে পর্যটকের সংখ্যা কমলেও তা নিয়ে চিন্তিত নন ব্যবসায়ীরা।
আবুল কাশেম সিকদার জানান, জানুয়ারি পর্যন্ত আবাসিক প্রতিষ্ঠানে ৩০-৪০ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। তাই সামনের মাসেও পর্যটকদের অভাব হবে না।
পর্যটকরা কেবল কক্সবাজার নয়, যাচ্ছেন কাছের দ্বীপ সেন্ট মার্টিনেও।
সেন্ট মার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর অনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুরের তথ্যমতে, গত ১৫ দিন ধরে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের চাপ রয়েছে। তবে সরকারের নির্দেশের কারণে ২ হাজারের বেশি পর্যটক নেওয়া যাচ্ছে না সেখানে।
এ কারণে চাপ থাকলেও গত ১৫ দিনে ৩০ হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপটিতে যেতে পেরেছেন। এখনও অনেকে কেবল সেন্ট মার্টিন যেতে কক্সবাজার আসছেন।