Beta
বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার পদক্ষেপ নেই বাজেটে : সিপিডি

ব্রিফিংয়ে সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরেন ড. ফাহমিদা খাতুন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ব্রিফিংয়ে সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরেন ড. ফাহমিদা খাতুন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

আগামী অর্থবছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রস্তাবিত বাজেটে নেই বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলছে, নতুন বাজেটে দেশের অর্থনীতির চলকগুলোতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু এই সংকটকালে প্রবৃদ্ধির দিকে নজর না দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে শুক্রবার সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিংয়ে উঠে আসে এমন অভিমত। ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে বাজেট নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনা তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

অন্যদের মধ্যে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

রাজস্ব আহরণ থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাত– সব ক্ষেত্রেই দুরাবস্থা চলছে দাবি করে ড. ফাহমিদা বলেন, “আমাদের এই সংকট তৈরির পেছনে রয়েছে তারল্য সংকট, রপ্তানি নিম্নমুখী হওয়া, বিনিয়োগ না বাড়া, আমদানি সংকুচিত করাসহ অনেক কারণ।

“প্রবৃদ্ধি নিয়ে এক সময় গর্ব করলেও এখন সেটাও তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু এসব সংকট মোকাবিলা করার জন্য এই বাজেট যথেষ্ট সাহসী, সৃজনশীল এবং গঠনমূলক হয়নি।”

আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা রেখে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেট উপস্থাপনকালে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার আশা ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

এ প্রসঙ্গে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “আগামী বাজেটের প্রধান পদক্ষেপ হওয়া উচিত ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কিন্তু গত দুই বছর ধরে চলমান ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি আগামী অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসার উচ্চকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করবে তা একটি বড় প্রশ্ন হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।”

মূল্যস্ফীতি থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করছে সরকার, যা মোট বাজেটের ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

তবে সিপিডি বলছে, রাজনৈতিক কারণে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “গতবার বাজেটে ১৭ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল সামাজিক সুরক্ষা খাতে। এবার তা হয়েছে বাজেটের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

“কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা খাতের ভেতর পেনশনের টাকা, সঞ্চয়পত্রের সুদ, কৃষিতে ভুর্তকি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা রাখা হয়েছে। এসব বাদ দিলে সামাজিক সুরক্ষায় দেওয়া হয়েছে জাতীয় বাজেটের ৯ শতাংশ এবং জিডিপির এক শতাংশ, যা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয় বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায়।”

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি করতে আরেকটি প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। সরকার আগামী অর্থবছরে ‘গ্রস’ রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি অর্থবছরের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ২৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। সিপিডি বলছে, চলতি বছরের ৫ জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

“যেখানে আমরা গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারিনি, সেখানে কেন আমাদের এবারের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হলো”, প্রশ্ন তোলেন ড. ফাহমিদা।

এগুলো কোনোভাবেই অর্থনৈতিকভাবে বিশ্লেষণযোগ্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রিজার্ভ বাড়ার একটি বড় জায়গা হলো বিনিয়োগ বাড়ানো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। এবারও সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে ব্যাংক থেকে। গত বছরেও এর ব্যাতিক্রম ছিল না।

“ব্যাংক থেকে যদি সরকার ঋণ নেয় তাহলে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা কোথা থেকে ঋণ পাবে? এভাবে তো বিনিয়োগের পরিবেশ আরও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

ঘাটতি পূরণে নেওয়া ঋণের কারণে সরকারের দেনা বাড়ছে উল্লেখ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে আবারও ঋণ নেবে। এসব দেনা পরিশোধ করলে কীভাবে রিজার্ভ থাকবে? ফলে, রিজার্ভের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তা আকাশচুম্বী, বাস্তবতা বিবর্জিত।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত