দ্রুত বিদ্যুৎ কেনার বিশেষ আইন বাতিলের পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বিভিন্ন সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
রবিবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার : সিপিডির প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সংস্থাটি বলছে, বিগত বছরগুলোয় ও এখনও সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থিতিশীলতা চলছে, তার জন্য এককভাবে কোনও খাতকে দায়ী করা হলে সেটা হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এই খাতে যে অনিয়ম হয়েছে, অর্থের অপচয় হয়েছে এবং সরকারকে এ জন্য যে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, তা অর্থনীতির অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী।
তাদের পরামর্শ, বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নানা অনিয়ম হলেও চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ এ খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে অন্তবর্তী সরকারকে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তবর্তী সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বিগত সরকারের আমলে। বিশেষ করে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হয়েছে। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি ইতিবাচক উদ্যোগ ছিল।
“তবে এই জিনিসগুলো যে প্রক্রিয়ায় হলে আরও বেশি দক্ষতাসম্পন্ন, প্রতিযোগিতা সক্ষম হতো, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় কম হতো, জবাবদিহি-সুশাসন নিশ্চিত হতো, সেই জায়গাতে আমরা ব্যত্যয় দেখেছি। সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।”
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে বলে মনে করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, “২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ২৭ হাজার মেগাওয়াট, রিজার্ভ মার্জিনসহ ৩৫ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ৫৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা, যা অযৌক্তিক। এই অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি খাত এলএনজি, কয়লা আমদানির মতো অবকাঠামো তৈরির চাপ দিতে পারে। তাই এটার সংশোধন দরকার বলে আমরা মনে করছি।”
এ খাতের জন্য ১৭টি সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেন গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারেও জোর দিতে হবে।
দ্রুত বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিশেষ আইন বাতিল করার পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগিদ দেয় সিপিডি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্তরণে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে দাবি করেছে সিপিডি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অথবা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত।
সিপিডি বলছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডসহ (আরপিজিসিএল) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করা জরুরি। তবে এর দায়িত্ব দেশের কোনও অডিট ফার্মকে না দিয়ে আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মকে দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি হলে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে কুইক ইনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেক্ট্রিসিটি অ্যান্ড পাওয়ার সাপ্লাই অ্যাক্ট, ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্লান (আইইএমপি), ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি সংস্কারের জোর দাবি জানায় সিপিডি।