চট্টগ্রাম বন্দরে ১৫ বছর ধরে পড়ে ছিল আমদানি করা ১২১টি দামি গাড়ি। এসব গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য তোলা হলেও আইনি জটিলতার কারণে তা করা যায়নি। বন্দরে দীর্ঘসময় পড়ে থাকতে থাকতে বেশির ভাগ গাড়িরই যন্ত্রাংশ গেছে নষ্ট হয়ে।
উপায়ন্তর না দেখে আমদানি করা গাড়িগুলো কেটে স্ক্র্যাপ হিসেবে কেজি দরে নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস। এমন সিদ্ধান্ত কাস্টমসের ইতিহাসে এই প্রথম।
মূলত শেডে থাকা গাড়িগুলোতে বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনা এড়াতে এবং শেডের জায়গা খালি করতে এই প্রথম গাড়ি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলে কোটি টাকা রাজস্ব পেত কাস্টমস। এখন কেটে কেজি দরে বিক্রি করা হলে বড়জোর কয়েক লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র বলছে, প্রথম দফায় ৭৫টি গাড়ি কেটে স্ক্র্যাপ হিসেবে নিলামে বিক্রি করা হবে। বাকি ৪৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকায় সেগুলো নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শেডেই থাকবে। মামলা নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সেগুলো পরে বিক্রি করা হবে।
এরই মধ্যে শুরু হয়েছে গাড়ি কাটার কাজ। কেটে ফেলা গাড়ির মধ্যে আছে জিপ, প্রাইভেট কার, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ডাম্প ট্রাক, স্টেশন ওয়াগন ও সুইপার লরি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “অনেক বছর ধরে পড়ে থেকে মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে গাড়িগুলোর।
“এসব গাড়িতে থাকা গ্যাস বিস্ফোরিত হয়ে বন্দরের ভেতরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে-এমন ঝুঁকি এড়াতেই কাস্টমস এই প্রথম এমন পদক্ষেপ নিল। এছাড়া বন্দরের ইয়ার্ড খালি করারও নির্দেশ ছিল। সবকিছু মিলিয়ে এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
২০২০ সাল থেকে আমদানি করা ১২১টি গাড়ি পর্যায়ক্রমে ৯ দফায় নিলামে তুলে বিক্রি করতে পারেনি কাস্টমস। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না থাকা এর প্রধান কারণ।
এ বিষয়ে কাস্টমসের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, “গাড়িগুলোর বয়স ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছরের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি অনুযায়ী, এত পুরনো গাড়ি নিলামে বিক্রির সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না থাকায় গাড়িগুলো বিক্রি সম্ভব হয়নি।”
এ অবস্থায় বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত কাস্টমস নিলাম কমিটি ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ১২১টি গাড়ি ধ্বংসের সুপারিশ করে।
এরপর বিভিন্ন দাপ্তরিক চিঠি চালাচালির পর বিআরটিএর অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে আড়াই বছর পর গাড়িগুলো ভাঙার কাজ শুরু করেছে কাস্টমস।
গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) মনে করে, ঠিক সময়ে নিলামে তোলা হলে গাড়িগুলো বিক্রি করে কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারত সরকার। স্ক্র্যাপ বিক্রি করে এখন তা সম্ভব নয়।
বারভিডার সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর বলেন, “গাড়িগুলো এত বছর বন্দরের ইয়ার্ডে না রেখে নির্ধারিত সময়ের পর নিলামের উদ্যোগ নিলে কাস্টমস রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো না। বন্দরের শেডও এতদিন পুরনো গাড়িতে ভরা থাকত না। আমদানিকারকরা নিলামের মাধ্যমে কাস্টমস আইনের আওতায় সেগুলো কিনে ব্যবহার করতে পারত।”
এখন থেকে যাতে নিলামের কাজ নিয়মিত হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, “আমাদের দাবি মানলে কোটি টাকার রাজস্ব পেত কাস্টমস। এখন কেজি দরে বিক্রি করে বড়জোর কয়েক লাখ টাকা পাওয়া যাবে।”