Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

সিএসএ নতুন মোড়কে ডিএসএ : টিআইবি

বৃহস্পতিবার টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিনের যৌথ উদ্যোগে ‘প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২৪ : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
বৃহস্পতিবার টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিনের যৌথ উদ্যোগে ‘প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২৪ : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) নামমাত্র পরিবর্তন এনে ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থা বলছে,  সিএসএ নতুন মোড়কে নতুন নামে ডিএসএর মতোই নিবর্তনমূলক, অনেকাংশেই অগণতান্ত্রিক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মাইডাস সেন্টারে টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিনের যৌথ উদ্যোগে ‘প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২৪ : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিএসইতে পরিবর্তন এসেছে বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, “তবে সেগুলো কোনও সাবসটেনটিভ পরিবর্তন না। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট আগে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ছিল সেটারই নামান্তর মাত্র।”

সাইবার সিকিউরিটি আইন নিবর্তনমূলক মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশের মানুষের অধিকার লঙ্ঘন; বাক-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মত প্রকাশের অবারিত যে স্বাধীনতা—তা নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হিসেবে (সিএসএ) দেখতে পাচ্ছি।”

প্রস্তাবিত বিধিমালাটি অনুমোদনের আগে পূর্বশর্ত হিসেবে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ঢেলে সাজানো দরকার বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক সমাজকে সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।”

প্রস্তাবে সাইবার সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ গঠন করার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পর্যাপ্তভাবে পরিস্কার না করার কারণে প্রতিষ্ঠানটি অকার্যকর এবং অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।”

ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি নামটা পরিবর্তন করেছেন। ভিতরটা এক রেখে দিয়েছেন।”

আইনটি ভ্রান্ত আইন দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য কোথায় আমরা আসলে কী চাইছি? আমাদের সাইবার স্পেসের নিরাপত্তা জরুরি- এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে যদি আইন করি, সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দিকেই মনোযোগ হব।  

“আমাদের আইন করতে হবে ধরে নিয়ে আমরা আইনটা করে মানুষজনকে নিয়ন্ত্রণ করব, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করব, আমরা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য উপাত্তে আমি ঢুকে যেতে পারব।”

সংগঠন দুটির প্রস্তাবনায় জানানো হয়, সাইবার নিরাপত্তা আইন- ২০২৩ নিবর্তনমূলক, অনেকাংশে অগণতান্ত্রিক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়। তারা বিশ্বাস করে মূল আইনে এ ধরনের অসংগতি রেখে অধঃস্তন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য অনেকটাই নিষ্ফল হয়ে যাবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা- ২০২৪ চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সব অংশীজনের উদ্বেগ, মতামত ও পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে এবং অর্থপূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা আইন- ২০২৩ সংশোধন করতে হবে।

বিধিমালাটি দেশের সীমিত অর্থনৈতিক, প্রাযুক্তিক সক্ষমতা ও মানবসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছে সংগঠন দুটি। তারা বলছে, সাইবার নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ন্যূনতম ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত ও প্রাযুক্তিক যোগ্যতা বিধিমালা দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত।

দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য বিধিমালায় আইনি কার্যবিধি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে ডিজিটাল সাক্ষ্য আদালত-কর্তৃক সহজেই গৃহীত হতে পারে জানায় টিআইবি।

সংস্থাটি মনে করছে, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির একটি কার্যকর ও অর্থপূর্ণ সাংগঠনিক কাঠামো থাকা দরকার। 

পর্যালোচনা ও সুপারিশে জানানো হয়, নতুন ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা না করে বর্তমান ফরেনসিক ল্যাবটিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার ও লোকবল দিয়ে সমৃদ্ধ করা উচিত। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত সময়ে নতুন ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা যেতে পারে।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি, জাতীয় সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম এবং ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের কার্যক্রমে যাতে নাগরিকদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সে সংক্রান্ত মানবাধিকার সুরক্ষা বিধান প্রস্তাবিত বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে জানিয়েছে টিআইবি।

বাংলাদেশের প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণীত হয় ২০০২ সালে। নীতিমালায় কম্পিউটার অপরাধ, কম্পিউটার ব্যবহার করে জালিয়াতি, হ্যাকিং, ভাইরাসের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও তথ্য-উপাত্তের ক্ষতিসাধন, প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে একটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

বাস্তবে বাংলাদেশের প্রথম সাইবার আইন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ প্রণীত হয়। আইনটি বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করে এবং সাইবার অপরাধ বিচারের জন্য সাইবার ট্রাইবুনাল এবং সাইবার আপিলেট ট্রাইবুনালের বিধান প্রণয়ন করে।  

আইনটির সাইবার অপরাধের অস্পষ্ট ও ব্যাপক সংজ্ঞা তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। কারণ, আইনটির বিধান মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে দেখার সুযোগ তৈরি করে এবং ব্যাপক অপব্যবহার হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালায় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে সাইবার পুলিশ প্রবর্তন এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ ট্রাবুনাল গঠনের প্রস্তাব করা হয় ২০০৯ সালে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ অনুসারে ২০১৩ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম সাইবার ট্রাইবুনাল স্থাপিত হয়। পরে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল আরও ৭টি সাইবার ট্রাইবুনাল স্থাপিত হয়।

২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্ত আইন করা হয়। তবে তা নিয়েও সমালোচনা রয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত