Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

প্রণোদনায় কাটছাঁট : রপ্তানি বাড়াতে বিকল্প কী 

রপ্তানিতে প্রণোদনা থেকে সরকারের বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন  পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প সংশ্লিষ্টরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
রপ্তানিতে প্রণোদনা থেকে সরকারের বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প সংশ্লিষ্টরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of অনিক রায়

অনিক রায়

পণ্য রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা দেওয়া থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনায় সরকার চলতি বছর দুই বার এই সহায়তা কমিয়েছে। অল্প অল্প করে এর হার আরও কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, কারণ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়া যাবে না।

তবে ভর্তুকিতে কাটছাঁট চললে রপ্তানির বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা উদ্যোক্তাদের ক্ষতিতে ফেলবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

প্রণোদনা বাদ পড়লে অনেক শিল্পের বিকাশ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে তা কমানো উচিত বলে পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। তাদের মত, এলডিসি থেকে উত্তোরণ হওয়া দেশগুলো তাদের রপ্তানি খাতে যেসব সুবিধা দিয়েছে, সেসব পদক্ষেপ বাংলাদেশকেও নিতে হবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সভা শেষে প্রথমবারের মতো চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি রপ্তানিমুখী পণ্যের উপর থেকে নগদ প্রণোদনা কমায় সরকার।

এর পাঁচ মাস না যেতেই গত ৩০ জুন আরেক দফা কমানো হলো এই প্রণোদনা, যে সিদ্ধান্ত জানা যায় সেদিনের বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে।

এলডিসি থেকে বাংলাদেশের ২০২৬ সালে উত্তরণের কথা, এর মধ্যেই দেশে অর্থনৈতিক সংস্কার আনতে হবে। তবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত এলডিসির হিসাবেই বিভিন্ন সুবিধাই মিলবে।

এলডিসি থেকে উত্তরণের ধাপে সংস্কারের অন্যতম প্রধান খাত হচ্ছে বেসরকারি খাত। সেই বেসরকারি খাতকে প্রস্তুত করতে সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই কমানো হয়েছে প্রণোদনা ।

রপ্তানি করা পণ্যের মূল্যের উপরে নগদ সহায়তা দেয় সরকার। এক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতের পণ্যের রপ্তানি মূল্যের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন সহায়তার হার নির্ধারিত।  

নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। এত দিন রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের একটি কারখানা ৫ শতাংশ নগদ সহায়তা পেত। এখন সেটি কমে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশে দাঁড়াবে। একইভাবে চামড়াজাত, পাটজাত, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, চা, ওষুধ ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তাও কমছে।

এই সহায়তা কমলে অনেক কারখানাই প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ব্যবসার খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে প্রণোদনা কমছে। এতে পণ্য রপ্তানিতে কারখানাগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে।

তবে আর্থিক প্রণোদনা কমানো ছাড়া কোনও বিকল্প নেই বলে অভিমত অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনও ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই এখন থেকে একটু একটু করে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় আর্থিক প্রণোদনা কমানো হলে কিছুটা চাপে পড়বে রপ্তানিকারকরা। তবে আর্থিক প্রণোদনা এখন থেকে না কমালে ভবিষ্যতে এই চাপ আরও বাড়বে। একইসঙ্গে আর্থিক প্রণোদনা না দিয়ে বিকল্প উপায়ে রপ্তানিকারকদের সমস্যা-সংকট মোকবেলায় এখন থেকেই সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

রপ্তানি আদেশের কাজ গোছাতে কর্মব্যস্ত পোশাক শ্রমিকরা।

প্রণোদনা কমল কত

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জানুয়ারি যে সার্কুলার দেয়, তাতে দেখা যায়, রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক বা দেড় শতাংশ করা হয়েছে। আর ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার রপ্তানি প্রণোদনা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে প্রণোদনা ৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২ শতাংশ। আর রপ্তানিতে বিশেষ নগদ সহায়তায় সবচেয়ে বেশি সংস্কার এসেছে, ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

পোশাক খাতের পর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত। বিদায়ী অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ। ধুঁকতে থাকা এই খাতেও প্রণোদনা কমছে। যদিও ক্রাস্ট লেদারে (রপ্তানিযোগ্য চামড়া) প্রণোদনা বাড়ানো হয়েছে।

এ দফায় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ক্রাস্ট লেদার রপ্তানিতে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। আর ফিনিশড লেদারে প্রণোদনা ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে কয়েক বছর ধরে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে এই খাত থেকে ৮৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ। নতুন নিয়মে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। ধুঁকতে থাকা এই খাতেও রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০, পাটজাত পণ্যে ৭ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১২ থেকে ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫, বাইসাইকেল রপ্তানিতে সাড়ে ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ থেকে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন- হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আতরসহ ৪৩টি খাতের প্রায় সব পণ্যের রপ্তানিতেই নগদ সহায়তা বিভিন্ন হারে কমানো হয়েছে।

হস্তশিল্পের পণ্য মূলত ইউরোপে বেশি রপ্তানি হয়।

‘কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে’

দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ ভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে এ খাত।

রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা বাদ দেওয়া হলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

রপ্তানিতে প্রণোদনা বাদে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান কচি।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমরা এমনিতেই বিপদে আছি। কারখানাগুলোতে গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই। গ্যস-বিদ্যুতের অভাবে এমনিতেই অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে আছে। ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যাচ্ছে না, প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে, শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে। সব কিছু মিলিয়ে এমনিতেই আমরা একটু নড়বড়ে অবস্থায় আছি। বিদেশে অর্ডারের পরিমাণও এখন কম।

“এমন অবস্থায় হুট করে ৩০ তারিখ (জুন মাসের) সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রণোদনা কমানো হল। সেটা আবার ১ জুলাই থেকে কার্যকরও করে দেওয়া হল। আমরা যেসব অর্ডার নিচ্ছি গত কয়েক মাস ধরে তাতো এই প্রণোদনা হিসেব করেই নিয়েছি। এটা তো ঠিক হল না।”

বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

তিনি বলেন, “আমাদের সাথে কথা বললে তো কোনও সমস্যা নেই। আমরাও জানি তাহলে কী করতে হবে, কী না। সবাইকে সাথে নিয়েই তো এই কাজ করতে হবে। এভাবে যখন যা ইচ্ছা তা করলে তো কারখানা বন্ধ করা ছাড়া উদ্যোক্তাদের কোনও বিকল্প থাকবে না।”

সরকার চলতি বছর হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণা আসে গত ২১ জানুয়ারি।

তখন এই ক্ষুদ্র শিল্পে যারা যুক্ত আছেন, তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটলেও সরকারের বর্তমানে প্রণোদনা কমানোয় তারা হতাশ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাক্রাফটের সভাপতি এস ইউ হায়দার।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “সরকারের আর্থিক প্রণোদনা কমাতে হবে, তা আমরা বুঝছি। কিন্তু সব খাতকে এক কাতারে নিয়ে ভাবলে তো হবে না। আমরা এখনও ছোট। একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত হওয়ার সকল সম্ভাবনাই আছে আমাদের। গার্মেন্টসের জন্য যেটি সোজা, আমাদের জন্য তা না। সরকারকে এভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। কোন খাতে প্রয়োজন, আর কোথায় না, তা সরকার না বুঝলে কে বুঝবে?”

সরকারের এই সিদ্ধান্তে উদ্যোক্তারা অনুৎসাহিত হবেন বলেও মন্তব্য করেন এস ইউ হায়দার।

বিকল্প ভাবার সময় এখন

বাংলাদেশের রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনার বিকল্প ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “২০২৬ এর নভেম্বর মাসের পর আমরা কোনও আর্থিক প্রণোদনা বেসরকারি খাতকে দিতে পারব না। ফলে, এখন থেকেই এটা কমানো উচিত। তাই করছে সরকার।

“কিন্তু রপ্তানিকারকরা অনেক সমস্যার মধ্যে আছে। সেসব সরকারকে এড্রেস করতে হবে। সেগুলো কমানোর উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। আর্থিক প্রণোদনা না দিয়েই বিকল্প ভাবার সময় এসেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোও কিন্তু তাদের রপ্তানিকারকদের নানান রকমের সহযোগিতা করেন। সেই মডেলে আমাদেরও কাজ করতে হবে।”

আর্থিক প্রণোদনা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিন্নভাবে রপ্তানিকারকদের সহায়তা দেওয়া যায়, আর সেসব বিষয়ে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “আর্থিক প্রণোদনাই দিতে হবে, তা কিন্তু না। রপ্তানির জন্য যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেসবে সুবিধা দেওয়া যায়। গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ রকম নানান জিনিস নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।”

এ বিষয়ে সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে কথা হলে বাংলাদেশের ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকও জানিয়েছেন বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন তারা।

তিনি বলেন, “বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুসারে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পর কোনও ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

“তাই এখন থেকে একটু একটু করে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিকল্প কী কী সুবিধা দেওয়া যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। সময়মতো আমরা সেগুলো সামনে আনব।”

বিকল্প কী হতে পারে

ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও বিভিন্ন নামে তাদের রপ্তানি খাতে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

ভারত ২০১৪ সালে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি চালু করেছে, যাতে কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা যায়। আর এর মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন ও বিকাশ হয়। 

আর ভারত নানা স্কিমের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। শুধু পণ্য রপ্তানি নয় সেবা খাতেও দিচ্ছে প্রণোদনা। যদি কোনও প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম ১৫ হাজার মার্কিন ডলার সমমূল্যের সেবা রপ্তানি করতে পারে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান ৩ থেকে ৭ শতাংশ প্রণোদনা পাবে। কিন্তু ভারত এটি দিচ্ছে ‘রপ্তানি পুরস্কার’ হিসেবে।

এছাড়া ভারত রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক ও কর ছাড় দেওয়ার জন্য তৈরি করেছে আলাদা স্কিম। অন্যদিকে, রপ্তানি পণ্য তৈরির জন্য যদি কাঁচামাল আমদানি করা হয়, তাতেও দেশটি শুল্ক শূন্য রেখেছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য রপ্তানিকারকদের সুবিধার জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে রেখেছে।

ভারত এসব করে শুধু খরচ কমানো নয়, বরং প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে পড়লে তাকে রক্ষায় ‘নির্ভীক’ নামে একটি স্কিমও চালু করেছে। এর অধীনে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯০ শতাংশ পর্যন্ত লোকসান পূরণ হয়। এই স্কিমের ফলে ছোট রপ্তানিকারকদের উচ্চ বীমা ও প্রিমিয়াম কমিয়ে রাখা হয়।

এমনকি কোনও উদ্যোক্তা যদি ১০০ শতাংশ রপ্তানিমুখী কারখানা স্থাপন করেন, তাহলে তার জন্য কমপ্লায়েন্সে ও ট্যাক্সে ছাড় দেওয়া হয় আরেকটি স্কিমের মাধ্যমে।

ভারত মার্কেট এক্সেস ইনিশিয়েটিভ স্কিমের মাধ্যমে রপ্তানি প্রচার সংস্থা, বাণিজ্য প্রচার সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পরীক্ষাগারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন খাতের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক স্কিম।

ভিয়েতনাম অনেক আগে থেকেই শিল্প ও দক্ষতা বাড়াতে আর্থিক সুবিধা চালু করেছে। চীনও প্রযুক্তির মানোন্নয়নের নামে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে তাদের উদ্যোক্তাদের। তাদেরও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন খাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত