আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’র প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও ভূমিধসে পাকিস্তানে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে জাপানে আঘাত হেনেছে টাইফুন ‘শানশান’। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে দেশটিতে এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
পাকিস্তানে মারা যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ১৩ জনই এক পরিবারের। ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’র প্রভাবে অবিরাম বর্ষণে শুক্রবার খাইবার পাখতুন খাওয়ার রায়মাল গ্রামে ভূমিধসে বাড়ির ছাদ ধসে পড়লে প্রাণ যায় তাদের।
পাঞ্জাব প্রদেশেও কয়েকজন মারা গেছে। সিন্ধু প্রদেশে মারা গেছে ৯ জন। বেলুচিস্তানে নিখোঁজ রয়েছে দুজন।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর (পিএমডি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’ পাকিস্তানের ভূভাগে সরাসরি আঘাত হানবে না।
তবে এর প্রভাবে শনিবার পর্যন্ত সিন্ধু ও বেলুচিস্তানজুড়ে শক্তিশালী ঝোড়ো বাতাস এবং মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড়টি গত সপ্তাহে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটকেও ভারি বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত করে। সেখানে গত রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তার আগের সপ্তাহে গুজরাট উপকূলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি পাকিস্তান উপকূল হয়ে এখন ওমানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বছরের এই সময়ে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া একটি বিরল ঘটনা।
১৯৭৬ সালের পর এই প্রথম আগস্ট মাসে আরব সাগের কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলো। এর পেছনে জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৮৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মাত্র তিনবার আগস্টে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল— ১৯৪৪, ১৯৬৪ ও ১৯৭৬ সালে।
শানশানের আঘাতে জাপানে নিহত ৬
প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট টাইফুন ‘শানশান’-এর আঘাতে জাপানে ছয়জনের প্রাণহানির পাশাপাশি আহত হয়েছে প্রায় একশ’ মানুষ। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ বাড়ি। প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শানশান গত কয়েক দশকের মধ্যে জাপানে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। বৃহস্পতিবার সকালে ঝড়টি দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিউশু দ্বীপ দিয়ে ভূভাগে প্রথম আঘাত হানে।
এসময় ঝড়টির কেন্দ্রের ঘূর্ণিবায়ুর গতি ছিল ঘণ্টায় ২৫২ কিলোমিটার। আর ঝড়টি সামনে এগোচ্ছিল ১৫-২০ কিলোমিটার গতিতে।
সেখান থেকে ঝড়টি জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী টোকিওর লাখ লাখ বাসিন্দাকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।
ঝড়টি বর্তমানে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পূর্ব দিকে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং শনিবারের মধ্যেই টোকিওতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে ঝড়টির কেন্দ্রের ঘূর্ণিবায়ুর গতি ৬৫ থেকে ৯০ কিলোমিটার। শুক্রবার ঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। তবে এখন সেটি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ঝড়টির ধীর গতির কারণে এটি পশ্চিম থেকে পূর্ব জাপানজুড়ে প্রচুর বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে নদীগুলো ফুলে উঠায় বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
টোকাই, কান্টো ও কিউশু অঞ্চলের কিছু অংশে ৪৮ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শতশত বিমানের ফ্লাইট এবং বুলেট ট্রেনের যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। সড়ক পথেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জাপানের আবহাওয়া বিভাগ জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা, দ্য ডন, এনএইচকে, সিএনএন, দ্য ইনডিপেনডেন্ট, হিন্দুস্তান টাইমস