ঘুর্ণিঝড় ‘দানা’র তাণ্ডবে বিপর্যস্ত ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। এটি স্থলভাগে উঠে এসে দুর্বল হয়ে গেছে। তবে সতর্ক অবস্থানে আছে দুই রাজ্যের কর্তৃপক্ষ।
ঝড়ের আঘাতে পশ্চিমবঙ্গে একজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে এনডিটিভি।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার অধিকাংশ রাস্তাই ঝড়ে সৃষ্ট বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসপ্ল্যানেডের এসএসকেএম হাসপাতাল ও কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন সদরদপ্তরেও পানি ঢুকেছে।
উড়িষ্যায় কোনো হতাহতের খবর মেলেনি। তবে রাজ্যের উপকূলীয় জেলা ভদ্রক, কেন্দ্রপাড়া ও বালাসোরে বন্যা চলছে।
উড়িষ্যা থেকে ১০ লাখ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরানো হয়েছে। দুই রাজ্যেই স্কুল ও কলেজ শনিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
দানার প্রভাবে কলকাতায় বৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলেও ঝড়বৃষ্টি চলছে। দিঘা, মন্দারমণির মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলো থেকে পর্যটকদের সরানো হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) ডিজি মৃতুঞ্জয় মহাপাত্র বলেছেন, শুক্রবার তীব্র ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে রাজ্যের গভীরে চলে যাচ্ছে এবং অধিকাংশ জায়গায় ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ‘দানা’র প্রভাবে বাংলাদেশে ঝড় বা বড় ধরনের কোনো দুর্যোগের শঙ্কা নেই। দেশের কিছু জায়গায় এর প্রভাবে বৃষ্টি হলেও, তা ভারি হবে না। সারাদেশে কম-বেশি বৃষ্টি হবে, পশ্চিমাঞ্চলে তুলনামূলক বেশি হবে।
আহাওয়া দপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়ে, দানা বর্তমানে উত্তর উড়িষ্যা ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকবে।
এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হওয়া বয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে শনিবার সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ স্থলভাগে ঢুকতে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। শুক্রবার ভোরে স্থলভাগ অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড়ের ‘লেজ’, অর্থাৎ শেষ অংশ।
স্থলভাগে আঘাত হানার সময় উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। তবে সকালে ‘ল্যান্ডফল’ শেষ হওয়ার পর গতি কমেছে।
সকালে উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইছিল বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। শক্তি হারিয়ে তা এখন ‘সাধারণ’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বিকেলের মধ্যে আরও কিছুটা শক্তিক্ষয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে ‘দানা’।
গত সোমবার আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির পর এটি ধাপে ধাপে শক্তিশালী হয়ে বুধবার সকালে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পায়।
তখন সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় ‘দানা’। এটা কাতারের দেওয়া নাম, যার অর্থ অতি সুন্দর ও মূল্যবান মুক্তা।