ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনও ধরনের আলোচনা ছাড়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভ্যাটসহ নানা শুল্ক-কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক সংবাদ সম্মেলন থেকে শুল্ক না বাড়িয়ে সরকারি ব্যয় কমানোর আহ্বান জানানো হয়।
অর্থ বছরের মাঝ পথে এসে অন্তর্বর্তী সরকার শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর পাশাপাশি নানা শুল্ক-কর বাড়িয়েছে। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির মধ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে শিল্প ও ক্যাপটিভের গ্যাসের প্রতি ইউনিটের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
দুটি ক্ষেত্রেই আপত্তি তুলে শনিবার নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসে ডিসিসিআই নেতারা। সভাপতি তাসকীন আহমেদ সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরীসহ সংগঠনটির নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
তাসকীন বলেন, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, ক্রমেই বাড়ছে ডলারের দাম। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণের সুদহারও বেড়েছে অনেক। দেশীয় অর্থনীতি চতুর্মূখী চাপের এমন এক পরিস্থিতিতে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অর্থনীতির গতি আরও কমিয়ে দেবে।
“সরকারের এমন পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা একমত নই। বেসরকারি খাতে একসঙ্গে এতগুলো জায়গায় ভ্যাট বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতীমূলক।”
মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস খাতের কিছু পণ্যে আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। তা ব্যবসায়ীদের বিপদে ফেলার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করেন ডিসিসিআই নেতারা।
তাকসীন বলেন, “সরকারি ব্যয় ২০ শতাংশ কমানো গেলে সেখান থেকে এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় করা সম্ভব। সুতরাং সরকারি ব্যয় কমান। কর-ভ্যাট বাড়িয়ে আমাদের আর নাভিঃশ্বাস বের কইরেন না।”
অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা থাকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “হঠাৎ মাঝপথে কর ও শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।”
দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যে ব্যবসায় পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে, তাও বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
“আমরা মনে করি, অর্থনীতি ও রাজনীতি একই পথে যেন না চলে। রাজনীতি রাজনীতির মতো করে চলুক; সেটি যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত না করে।”
ব্যবসায়ীদেরই রাজনীতিতে জড়ানো নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তাসকীন বলেন, “গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে দিয়ে সবাইকে বিচার করা ঠিক হবে না। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের শুধু ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেই মনোনিবেশ করা উচিৎ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আলাদা থাকুক। আর দেশে আইন প্রণয়ন করেন রাজনীতিকেরা। আইন ঠিক থাকলে ব্যবসায়ীরা খারাপ হওয়ার সুযোগ কম পাবেন।”
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে অস্থিরতা চলছে, সেটিকে আমি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয় বলে মনে করছি। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসাতেই কিছু প্রভাব পড়েছে। ফলে ভিসা জটিলতাসহ ব্যবসায়ের অন্য সমস্যাগুলো যত দ্রুত সমাধান হবে, তত দ্রুত দুই দেশের ভালো হবে।”
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গৃহীত সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, “সরকার দ্রুত এ সংস্কার কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্পন্ন করবে, বেসরকারিখাতের পক্ষ থেকে এটি আমরা আশা করছি।”