Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহ : ৬ দিনে পাঁচ শতাধিক মৃত্যু

Karachi
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ছয়দিনে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় করাচি শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে অনুভূত তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে গত মাসে পুরো সিন্ধ প্রদেশে প্রায় ৫২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সিন্ধেরই রাজধানী করাচি।

পাকিস্তানের দ্য ইদি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের বরাতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত করাচিতে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জনের মৃতদেহ মর্গে নিয়ে থাকে তারা। কিন্তু গত ছয় দিনে তারা ৫৬৮টি মৃতদেহ সংগ্রহ করেছে এবং এর মধ্যে শুধু মঙ্গলবারই ছিল ১৪১টি।

তবে মৃতদের সবাই গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কিনা, তা এখনও পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না।

এ ছাড়া গত চার দিনে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২৬৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের অধিকাংশের বয়স ৬০ থেকে ৭০।

করাচির তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রি পেরিয়ে যায়, তখন অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে সেটি প্রায় ৫০ ডিগ্রির মতো অনুভূত হয়। আর তাতেই মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে বলে সেখানকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে।

তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে করাচিসহ আশে-পাশের বাসিন্দারা হাসপাতালে ছুটছেন। তবে সবাই যে হাসাপতালে যেতে পারছেন তাও নয়। ফলে বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

করাচির সিভিল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. ইমরান সারওয়ার শেখ জানান, যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের বমি, ডায়রিয়া ও উচ্চমাত্রায় জ্বরসহ নানা উপসর্গ রয়েছে। তাদের অনেকেই ঘরের বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করছিল।

“আমরা মানুষকে বলেছি- তারা যেন এই উচ্চ তাপমাত্রায় প্রচুর পানি পান করেন এবং হালকা পোশাক পরেন।”

তিনি আরও জানান, রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২৬৭ জন মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডা. শেখ বিবিসিকে বলেন, “আমরা দেখছি হাসপাতালে যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগই ৬০-৭০ বছর বয়সী। যদিও কয়েকজনের বয়স ছিল ৪৫ বছর। আর দুজনের বয়স ছিল বিশের কোঠায়।”

পাকিস্তানের একজন আবহাওয়াবিদ এই উচ্চ তাপমাত্রাকে ‘আংশিক দাবদাহ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা গত সাপ্তাহিক ছুটির দিন থেকে শুরু হয়েছে।

বিবিসি জানায়, এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে কিছুটা পরিত্রাণ দিতে ‘হিটওয়েভ সেন্টার ও ক্যাম্প’ খোলা হয়েছে নানা জায়গায়। বিভিন্ন সড়কে শরীর ঠান্ডা করতে শিশুরা পানির ফোয়ারার মধ্যে নেমে পড়ছে।

উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে এই মুহূর্তে বেশ সংগ্রাম করছে করাচি শহর। এর মধ্যে প্রতিদিনকার লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।

অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানজুড়ে গত কয়েকবছর ধরেই বিদ্যুতের সংকট চলছে। প্রায়ই ঘরে বিদ্যুৎ থাকে না। এতে গরমে মানুষের হাঁসফাঁস আরও বাড়ছে।

পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম দ্য ডন জানায়, শহরের রাস্তাঘাট থেকে অন্তত ৩০টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ কর্মকর্তা সুমাইয়া বলছিলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এদের অনেকেই নেশা করেন। তবে তাদের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।

শুধু পাকিস্তান নয়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পুরো দক্ষিণ এশিয়াই তীব্র তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়েছে।

ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি ‘নজিরবিহীন’ তাপমাত্রা দেখেছে সম্প্রতি। সেখানে গত মে মাস থেকে প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ছিল। কখনও কখনও তা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে।

এছাড়া বাংলাদেশেও টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে তীব্র গরম পড়ছে এবং তাপপ্রবাহ চলছে।

করাচির চিকিৎসকরা বলেছেন, এমন পরিস্থিতি তারা আর দেখেননি।

করাচির অধিবাসী মোহাম্মদ জিশান বলন, সমস্যাটা তাদের কাছে পরিষ্কার। এটা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য হচ্ছে।

রয়টার্সের সঙ্গে জিশান বলেন, “সারা বিশ্বজুড়েই এটা হচ্ছে। ইউরোপজুড়েও হচ্ছে। তারা তীব্র তাপের মুখে, কিন্তু তারা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই ইদানিং আবহাওয়া প্রায়ই এমন রুক্ষ হয়ে উঠছে।

করাচির এই তীব্র তাপপ্রবাহ আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও তাপমাত্রা কিছুটা কমার পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা তাকিয়ে আছেন মৌসুমি বায়ুর দিকে, যা দ্রুতই আসবে এবং এ বছর ৬০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত