নতুন প্রেক্ষিতে বৃহত্তর পরিসরে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকায় ‘বাংলাদেশের ভলেন্টারি ন্যাশনাল রিভিউ (ভিএনআর) ও নাগরিক অংশগ্রহণ’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ আহ্বান জানান। অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় মনে করছেন, এই আলোচনায় টেকসই উন্নয়নে বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী ও ব্যক্তি খাতে ভূমিকা পরিষ্কারভাবে উঠে আসবে।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে গত ২৮ আগস্ট বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয়র নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এ সংলাপ আয়োজন করেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ।
আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কোর গ্রুপ সদস্য ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, শাহীন আনাম প্রমুখ।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) প্রসঙ্গ টেনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “ভিএনআর এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অন্যতম মূল স্তম্ভ। এসডিজি শুধু ঘোষণা দিলে হয় না, রাষ্ট্রকে দায়িত্ব দিলে হয় না, একটা জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখতে হবে। যখন আমরা টেকসই লক্ষ্যমাত্রায় গেলাম তখন এর অন্যতম মূল অনুষঙ্গ ছিল এই জবাবদিহি ব্যবস্থা, যেটার নাম হলো এই ভিএনআর।
“সম্পূর্ণ একটি পরিবর্তিত রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ভেতরে এই অনুষ্ঠান করছি। এটি সম্পূর্ণ নতুন গুণগত পরিস্থিতি। এটি সম্পূর্ণ নতুন সুযোগ। আমরা সাধারণ মানুষের কথা শুনেছি। সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “জাতীয় স্বপ্রণোদিত সমীক্ষাকে জাতীয় হতে হবে- এটা পরিষ্কার হয়েছে। এই জাতীয় সমীক্ষা সরকারি হতে পারবে না। এখানে নাগরিক ও খাতের সমন্বিত ফলাফলে উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জগুলো প্রতিফলিত করতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতকে সেখানে উত্থাপিত করতে হবে।
“সমীক্ষার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। এসডিজি ডেটা ট্রেকার কোভিডের পর থেকে দুর্বল হয়ে গেছে। সেই তথ্য-উপাত্তের সামগ্রিক মূল্যায়ন দেখতে চাই। তথ্য-উপাত্তকে সংহত করার জন্য একটা কর্মপরিকল্পনা আসবে, এটা আমরা প্রত্যাশা করি।”
দেবপ্রিয় ভাট্টাচার্য আরও বলেন, “মনে রাখতে হবে, টেকসই উন্নয়নের এই যে ধারা সেটি শুধু মাত্র সরকার না, এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অধীনে করা হয়েছে। সেহেতু আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক মূল্যায়ন করার সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ আমাদের আগে সেভাবে নেওয়া হয়নি।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে লামিয়া মোরশেদ বলেন, “নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কাছ থেকে আমি পরামর্শ ও ধারণা পেয়েছি যে কীভাবে এনজিওগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। কীভাবে তারা এসডিজি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি এনজিও ও ব্যক্তি খাতে যে সব বাধা, প্রতিবন্ধকতা আছে সেগুলো আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখব।”
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শোভন কর্মসংস্থান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বড় দাবি ছিল। আমরা যখন ভিএনআর করব তখন তরুণদের দাবিগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সেগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ে যেতে হবে। অনেক কিছু আন্তর্জাতিকভাবে আসে, তবুও আমরা দেখি না আন্তর্জাতিক সহায়তা সেইভাবে আসে।”
‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ গত ২৮ আগস্ট গঠনের কথা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।