Beta
বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

ঠেকানোর হুমকি ঠেলেই চট্টগ্রাম বার নির্বাচনের প্রচারে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা

রবিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের নেতারা মিছিল নিয়ে যায় আদালত চত্বরে।
রবিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের নেতারা মিছিল নিয়ে যায় আদালত চত্বরে।
[publishpress_authors_box]

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অংশগ্রহণ আটকাতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু তাতে গা নেই আইনজীবীদের। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরাও নেমে পড়েছেন প্রচারে।

পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করতে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে আগামী ২৮ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর। তবে তার আগেই প্রার্থীরা ব্যক্তিগত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

বরাবরের মতোই দুটি প্যানেল অংশ নেবে এই নির্বাচনে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা ‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ‘সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ’ এর ব্যানারে প্রার্থী হবেন।  

বৈষম্যবিরোধীদের হুমকি

দুই প্যানেলের প্রার্থীদের প্রচার জমে ওঠার মধ্যে রবিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের নেতারা মিছিল নিয়ে যায় আদালত চত্বরে।

সেখানে সমাবেশে কয়েকজন সমন্বয়ক চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের’ অংশ নিতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। তারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও সমিতির নেতাদের প্রতিও তারা আহ্বান জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানেই গত বছরের আগস্টে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। দলটিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের যে কোনও চেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণাও রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মের নেতাদের।

তবে আইন পেশাজীবীদের নিজেদের সমিতিতে চট্টগ্রামের মতো ঘটনা এখনও অন্য কোনও জেলায় ঘটেনি। সম্প্রতি সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অংশ নিয়েছিল, বেশিরভাগ পদে জিতেছেও।

চট্টগ্রামে ভিন্ন চিত্রের কারণ তুলে ধরে এই নগরীর ছাত্র সমন্বয়করা বলছেন, ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে কর্মসূচি পালনকালে ‘শেখ হাসিনার দোসর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা’ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন।

এছাড়া গত ৪ আগস্ট নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালিয়েছিল, তখন আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিরীহ কিছু ছাত্র আদালত ভবনে আশ্রয় নিলে তাদের ওপর হামলা হয়।

রবিবারের সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগরীর সমন্বয়ক ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমন্বয়ক মো. তানভীর শরীফ, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রনি ও মোহাম্মদ ওয়াহিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো. আবির, আইনজীবী শওকত হোসেন চৌধুরী।

আইনজীবীরা দেখছেন কোন চোখে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদালত চত্বরে সমাবেশ-মিছিল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ আইনজীবীদের মাঝে।

নির্বাচনে যেসব আইনজীবী অংশ নিচ্ছেন, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এসব নেতাকে ‘বহিরাগত’ বলছেন।

তাদের বক্তব্য, এটা কোনও দলীয় নির্বাচন নয়। পেশাজীবীদের সংগঠন। ফলে ‘বহিরাগত’ কারও এই নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই। আইনজীবী সমিতির সদস্যরা এমন অভিযোগ আনলে ভিন্ন বিষয়।

এবিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ সোলাইমানকে কয়েকবার ফোন করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, এই ধরনের কোনও অভিযোগ দপ্তরে নেই।

দল নিরপেক্ষ বেশ কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই আইনজীবীরা বলেন, বৈষম্যবিরোধীদের দাবি আইনজীবীদের নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে না।

একজন আইনজীবী বলেন, “আপনি দেখবেন কট্টর একজন আওয়ামী সমর্থক, কিন্তু বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীর সাথে কাজ করছেন। আবার আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীর সহকর্মী হিসেবে কাজ শিখছেন বিএনপি সমর্থক তরুণ আইনজীবী। এই ধরনের চিত্র আপনি গুনে শেষ করতে পারবেন না।

“এই সম্পর্কে পেশাই প্রাধান্য, দল নয়। যুগযুগ ধরে চলে আসা এই সম্পর্ক আপনি ভাঙতেও পারবেন না। যে কারণে আপনি দেখবেন আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপির নেতারা জিতছেন। আবার বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ জিতছে।”

তরুণ আইনজীবীরা বলছেন, আইনজীবীদের কেউ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধিতা করেও এই নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে বাধা না দিয়ে ভোটে পরাজিত করাই হবে ‘আসল শাস্তি’।

এক তরুণ আইনজীবী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তাদের কেউ এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে আমাদের জানা নেই। প্রতিপক্ষের কাছে এমন তথ্য নেই। ঢালাওভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিলে সেটি আইনি পরিমণ্ডলে খারাপ নজির হয়েই থাকবে।

“নির্বাচনে তাদের পরাজিত করাই হবে শাস্তি। সেটি না করে এই বাধা দেওয়ার পথে যাওয়া মানেই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা।”

প্রার্থীরা যা বলছেন

নির্বাচনে সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশীদ।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে এখানে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয় না। আর ভোটাররা সাধারণ কোনও নাগরিক নন। তারা আইনজীবী-শিক্ষিত শ্রেণি। ফলে এখানে কেউ শুধু দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় দিয়েই নির্বাচনে জিতে আসে না কখনোই।

“প্রার্থীর ব্যক্তিগত গুণাবলী, সংগঠনে তার ভূমিকা, নির্বাচনে জয়লাভ করতে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ১৩৪ বছর ধরে তাই হয়ে আসছে।”

রশীদ বলেন, “কিছু ছাত্র আদালত প্রাঙ্গণে এসে আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের নির্বাচনে অংশ নিতে দিবেন না বলে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সেটা আইনজীবীদের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে না।

“বাইরের কেউ এসে কী বললো, কেন বললো- সেটি তারাই ভালো জানবেন। এসব দাবির বিষয়ে আইনজীবীরাই একমত নন। আর এখানে তো দলীয় পরিচয়ে কোনও নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা অনুরোধ করবো- তারা ছাত্র, এসব দাবি বাদ দিয়ে যেন শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যান।”

‘আইনজীবী ঐক্য পরিষদ’র সভাপতি প্রার্থী আবদুস সাত্তার সকাল সন্ধ্যাকে বলছেন, “আইনজীবীদের বাইরে কে কী বললো, সেটি নিয়ে আমরা আইনজীবীরা কনসার্ন না। ফলে সেটার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই।

“আমরা আমাদের মতো করেই নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছি। যেসব আইনজীবী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে লাঠি তুলে দিতে সহায়তা করেছেন, তাদেরকে নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত করুক ভোটাররা।”

প্রতি বছর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। নির্বাচনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পদ ১৯টি। এবার মোট ভোটার ৫ হাজার ৪০৪ আইনজীবী।

২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩টি পদে জয় পেয়েছিল। সহ-সভাপতিসহ ৮টি জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত