দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা গেলে এদের অনেকেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। আর ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন সরকারি সহায়তা, সমন্বিত চিকিৎসা। তাই বাংলাদেশের ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসায় একটি জাতীয় তহবিল গঠনের দাবি উঠল ঢাকায় আয়োজিত এক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে।
শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন (সিসিসিএফ)।
‘এখানে থেমো না; ক্যান্সার লড়াকু ও পরিচর্যাকারীদের বয়ান’ শিরোনামে বইটিতে স্থান পেয়েছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও তাদের পরিচর্যাকারীদের অভিজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানে পাঁচজন ক্যান্সার সার্ভাইভারকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এরা হলেন, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) পরিচালক সেঁজুতি সাহা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, চিকিৎসক ও লেখক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম শহীদুল্লাহ।
এসময় প্রত্যেকেই নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। বলেন কেন দেশের ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
সেঁজুতি সাহা বলেন, তিনি যখন আক্রান্ত হন তখন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোতে মলিকিউলার জেনেটিক্স নিয়ে পিইচডি করছিলেন। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। কানাডায় চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর ভেবেছেন দেশের মানুষের কথা। সে কারণেই দেশে ফিরে তিনি দিয়েছেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সিএইচআরএফে। সেখানে শিশুদের নানান ধরনের ইনফেকশন নিয়ে কাজ করতে পারছেন।
আরেক সার্ভাইভার ডা. সারোয়ার আলী বলেন, “ক্যান্সারের রোগী বাড়ছে। তাই এখন দরকার আর্লি ডিটেকশন এবং সে অনুযাীয় আর্লি ট্রিটমেন্ট। যদি শুরুতেই শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে অনেকেই ক্যান্সার থেকে সেরে উঠবেন। তাই সরকারি সহয়োগিতা দরকার, সব মিলিয়ে এখন দকার একটি সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা।”
বিজ্ঞান এখন অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, নতুন নতুন ওষুধ এসেছে, চিকিৎসাব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। ক্যান্সার এখন আর মারণব্যাধি নয়। নাটক সিনেমায় যেভাবে ক্যান্সারকে দেখানো হয়, সেটা এখন ভুল।
দেশেও ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তবে এজন্য চিকিৎসকসহ সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখনও ক্যান্সার সর্ম্পকে কম জানে, তাদেরকে জানাতে হবে।”
অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “দেশে তথ্যের খুব অভাব রয়েছে। মানুষ জানে না কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে। তাই এজন্য একটি অ্যাপ তৈরির কাজ করছেন তারা। তবে অ্যাপটি তৈরির পর সরকারের সহায়তার দরকার রয়েছে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এখানে। সেইসঙ্গে একটি জাতীয় ক্যান্সার ফান্ড তৈরি করার কথাও বলেন তিনি।”
সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন ( সিসিসিএফ) এর সাধারণ সম্পাদক জাহান-ই- গুলশানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম এবং এতে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর ক্যন্সার কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি রোকশানা আফরোজ।