চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলামের আদালতে বিচারাধীন।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক আছে। তার ঠিক আগের তিন আদালত পরিবর্তনের দাবি জানালেন আইনজীবীরা।
আবার একইদিন সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃঞ্চ দাস ব্রহ্মচারির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ লড়াই করতে পারবেন কিনা, সেই শুনানির দিনও ধার্য আছে।
অর্থাৎ পরবর্তী কার্যদিবসে একই আদালত দুটি বিষয়ে শুনানি করবেন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, শুনানিতে মামলাটিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে।
মানববন্ধনে আইনজীবী নেতারা বলেন, আলিফ হত্যা মামলা এবং তদন্ত দুটোই ধীরগতিতে চলছে। সে কারণেই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর চান তারা।
আলিফ খুনে চিম্ময় দাসের উস্কানি আছে, এমন অভিযোগ তুলে মানববন্ধনে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, “সাইফুল ইসলাম আলিফের যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেটাতে চিম্ময় দাসের উস্কানি ছিল। চিম্ময় দাস প্রিজন ভ্যানে ওঠার পর পুলিশের মাইকে বক্তব্য দিয়ে নিজের সমর্থকদের উস্কানি দিয়েছেন। যে কারণে পর্যায়ক্রমে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে।
“আমাদের ভাই আলিফ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ঘরে ফিরে যাবে না।”
স্বাভাবিকভাবে তদন্ত শেষ না হলে আইনজীবীরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, “আলিফ হত্যা মামলা ধীরগতিতে চলছে। আমরা প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা এ মামলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করবেন। যদি স্বাভাবিকভাবে সে তদন্ত শেষ হয়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে নামব।”
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, “আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। বাংলাদেশের মানুষ অনেক ধৈর্য্য ধরেছে। আমাদের সরলতাকে দুর্বলতা ভাবার কোনও সুযোগ নেই। আমাদের একটাই স্পষ্ট দাবি যতক্ষণ পর্যন্ত ইসকনের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা না হচ্ছে, আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
“যে আসামিরা জবানবন্দিতে অন্যদের নাম বলেছে, তাদের অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে আলিফ হত্যার বিচারের দাবি করছে বাংলাদেশের ৭০ হাজার আইনজীবী।”
বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় ব্রহ্মচারী রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত ২৬ নভেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। মামলাটি করেছিলেন বিএনপির চট্টগ্রামের এক নেতা (পরে বহিস্কৃত)।
ওই দিন চট্টগ্রামের আদালতের কাছে সেবক কলোনী এলাকায় চিন্ময়ের অনুসারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। এরপর চট্টগ্রামে আইনজীবী সমিতি জানায়, তাদের কোনও সদস্য চিন্ময়ের পক্ষে শুনানি করবে না।
অন্যদিকে চিন্ময়ের পক্ষে যারা আইনজীবী ছিলেন, তারাও একাধিক মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আদালতমুখো হচ্ছে না।
ফলে গত ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায় জজ আদালতে চিন্ময়ের জামিন আবেদনের শুনানির দিন তার পক্ষে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। পরে এনিয়ে সমালোচনা তৈরি হলে আইনজীবী সমিতি আবার সংবাদ সম্মেলন করে জানায় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির বাইরের কেউ শুনানিতে অংশ নিলে তাতে আপত্তি নেই।
এর একদিন পর ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে শুনানিতে অংশ নেওয়ার আবেদন করে ব্যর্থ হন। পরে ১২ ডিসেম্বর আবার আবেদন করলেও ওকালতনামাসহ বেশ কিছু কারণে সেটিতে সাড়া মেলেনি।
আইনজীবী হিসেবে রবীন্দ্র ঘোষ চিন্ময়ের পক্ষে লড়তে পারবেন কিনা সেই ফায়সালাও হবে বৃহস্পতিবার।