Beta
মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

কেন বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর আলোচনা

erer
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

কী হবে, যদি বাইডেন নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন- এমন একটি বিশ্লেষণী লেখা দেখা যাচ্ছে সিএনএনে।

নির্বাচনের যখন আর কয়েকমাস বাকি, সেই পর্যায়ে এসে এমন আলোচনা বেশ চমকপ্রদ। আর তা শুরু হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জো বাইডেনের প্রথম নির্বাচনী বিতর্কের পরপরই।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের সঙ্গে সেই বিতর্কে নাকাল হওয়ার পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে খোদ তার দল ডেমোক্রেট শিবিরে। তিনি কী প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন, নাকি সরে দাঁড়াবেন, ব্যতিক্রমী হলেও এমন প্রশ্ন এখন আসছে ঘুরেফিরে।

ডেমোক্রেটদের মধ্যে বাইডেনের মিত্ররা দ্বিতীয়বার তার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু প্রথম বিতর্কের পর তাদের সেই বিশ্বাসে ফাটল ধরেছে। এখন তাদেরই অনেকে বাইডেনকে সরিয়ে অন্য কাউকে প্রার্থী করার কথা বলছেন।

সিএনএন একাধিক বিশ্লেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বাইডেন ডেমোক্রেটদের মনোনীত এবং প্রাইমারি ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী। নির্বাচনী বিতর্কের শুরুতে তিনি হোঁচট খেয়েছেন সত্যি; কিন্তু এজন্য তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন, এমন বাস্তবতা এখনও আসেনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় পর্ষদ এক বিবৃতিতে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

পর্ষদ বলেছে, “বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছে তিনি তার ছায়া হয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে কী কী কাজ করবেন, সেসবের ব্যাখ্যা দিতে তাকে লড়াই করতে হয়েছে। ট্রাম্পের উসকানিমূলক বক্তব্যের জবাব দিতেও হিমশিম খেয়েছেন। মিথ্যা তথ্য, ব্যর্থতা ও ব্যর্থ পরিকল্পনাগুলো নিয়ে ট্রাম্পের জবাবদিহি আদায় করতেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। একাধিকবার তিনি বাক্যও শেষ করতে পারেননি।”

ডেমোক্রেট নেতৃত্ব এখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেন শক্তিশালী ও উদ্যমী কাউকে খুঁজে নেয়, বিবৃতিতে সেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও একে ঘিরে হওয়া বিতর্কের ইতিহাসে এর আগে কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে, প্রথম বিতর্কের পর কারও প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

পরিস্থিতির চাপে যদি বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে হয়, সেক্ষেত্রে ডেমোক্রেট শিবির থেকে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউজম হয়ত দাঁড়াতে পারেন।

বৃহস্পতিবারের বিতর্কে নিজের হার স্বীকার করে নিয়েছেন বাইডেন। তবে শুক্রবার নর্থ ক্যারোলাইনায় এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, এখানেই শেষ নয়। তিনি ঘুরে দাঁড়াবেন এবং নির্বাচন করবেন।

তিনি বলেন, “আমি স্বীকার করছি, আমি আর তরুণ নেই। আগের মতো সহজে হাঁটতে পারি না, আগের মতো সাবলীলভাবে কথা বলতে পারি না, আগের মতো এতটা নিখুঁতভাবে বিতর্ক করতে পারি না।

“তবে, আমি একটি জিনিস জানি। আমি সত্য কথা বলতে জানি। আমি সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। কীভাবে কাজ েশষ করতে হবে, তা জানি। আর আমি জানি কোটি কোটি আমেরিকান যা জানে: আপনি যখন পড়ে যান, তখন আপনি আবার উঠে দাঁড়ান।”

শুক্রবার রাতটা কংগ্রেসের ডেমোক্রেট সদস্যদের নির্ঘুম কেটেছে। দাতা ও গুরুত্বপূর্ণ সমর্থকদের ফোন করে বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে বাইডেনের হেরে যাওয়ার আতঙ্ক দূর করার চেষ্টা করেই সময় পার করতে হয়েছে তাদের। ওয়েস্ট উইং থেকে উইলমিংটন পর্যন্ত বাইডেনের উপদেষ্টারা সেদিন ছিলেন চূড়ান্ত রকম ব্যস্ত। এসব দাতা ও সমর্থকদের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করে।

সিএনএন আয়োজিত বিতর্কের শুরু থেকেই ট্রাম্পের কাছে হোঁচট খাচ্ছিলেন বাইডেন। এমনও দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রশ্নের উত্তর না দিতে পেরে হঠাৎ কথা বলা বন্ধ করে দেন তিনি। এমনকি তার মুখের অভিব্যক্তিও পাল্টে যায়।

বিতর্কে বাইডেনের বক্তব্যেও ছিল অস্পষ্টতা। এর সুযোগ নিয়ে অপমান করে ট্রাম্প বলেন, “বাক্যের শেষে তিনি (বাইডেন) কী বলেছেন, তা সত্যিই আমি জানি না। আমার মনে হয় না যে তিনি নিজেও জানেন।”

ওই ঘটনার পর সিএনএন বাইডেনের প্রচার মুখপাত্র সেথ শুস্টারের কাছে জানতে চায় যে, বাইডেন আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাড়াবেন কি না? উত্তরে সেথ বলেন, “এর কোনও ভিত্তি নেই। ভোটাররা এমন কোনও ইঙ্গিত এখনও দেননি।”

বাইডেনের প্রচার দলের আরেক কর্মকর্তা কাইটলান কলিন্স বলেন, “জো বাইডেনের ব্যাপারে আমি শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। তবে তিনি নির্বাচন করবেন কি না, সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত।”

এদিকে ভার্জিনিয়ায় একটি সমাবেশে অংশ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, “বাইডেনের সমস্যা তার বয়স না। তার দক্ষতা। সে পুরোপুরি অদক্ষ।”

ট্রাম্প মনে করেন, বাইডেন নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়বেন এমন জল্পনাকে তিনি বিশ্বাস করেন না। তার মতে, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসসহ অন্য ডেমোক্রেটদের তুলনায় বাইডেন নির্বাচনে ভালো করবেন।

কেন উদ্বিগ্ন ডেমোক্রেটরা

যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় সিএনএন এর আয়োজনে হয় ট্রাম্প-বাইডেন প্রথম নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন। দেড় ঘণ্টার বিতর্কে ট্রাম্প ৪০ মিনিট ১২ সেকেন্ডের মতো কথা বলেন। অন্যদিকে বাইডেন কথা বলেন ৩৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড।

এই বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, গণতন্ত্র, অভিবাসন, সীমান্ত সংকট, গর্ভপাত, সামাজিক নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি, কর, কর্মসংস্থান, জাতীয় ঋণ, স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয় উঠে আসে। বিভিন্ন বিষয়ে বলতে গিয়ে তারা একে অন্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেনের বয়স নিয়ে একটা জটিলতা শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু বিতর্কের রাতে তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও বক্তব্য ভুলে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো ওই জটিলতাকেই উস্কে দিয়েছে। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্য কি না, এমন প্রশ্ন অনেকেই করছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে বিতর্কের উপস্থাপক জ্যাক ট্যাপার বয়সের এই প্রসঙ্গ সামনে আনেন। তখন ট্রাম্প বলেন, বাইডেন তো ৫০ গজ দূরেও গলফ বল ছুড়তে পারেন না।

তখন বাইডেন ট্রাম্পকে তার সঙ্গে গলফ খেলার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ট্রাম্পের নিজের গলফ ক্লাব হলেই শুধু তিনি খেলবেন।

জ্যাক ট্যাপার এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তখন দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য বাইডেন ট্রাম্পকে দোষারোপ করেন। আর ট্রাম্প দাবি করেন, কোভিড-১৯ হানা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার আমলে আমেরিকার অর্থনীতি ছিল ইতিহাসের সেরা। এমনকি তার আমলে আমেরিকায় মূল্যস্ফীতিও ছিল না।

এরপর যখন দেশের ধনীদের উপর অতিরিক্ত আয়কর ধার্য করার প্রসঙ্গ আসে, তখনও বাইডেনকে প্রসঙ্গের বাইরে কথা বলতে দেখা যায়। তিনি স্বাস্থ্য খাতের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলেন। আর এই সুযোগই লুফে নেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, “বেশ ভালো তিনি মেডিকেয়ারকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি মেডিকেয়ারকে ধ্বংস করেছেন। অথচ এই মেডিকেয়ারের পেছনে অনেক মানুষ জড়িত। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ধ্বংস হয়ে গেছে।”

গর্ভপাত প্রসঙ্গে বিতর্কেও বাইডেন প্রায় নিজে সেধেই সমালোচনার হাতিয়ার তুলে দেন ট্রাম্পের হাতে।

ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি গর্ভপাতের ওষুধ বন্ধ করবেন কি না? সুপ্রিম কোর্ট ওষুধের অধিকারকে বহাল রেখেছে উল্লেখ করে ট্রাম্প উত্তর দেন, ‘না’।

তিনি গর্ভপাত নিয়ে যে কথাগুলো আগে বলেছেন, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “সবাই চায় রাজ্য সিদ্ধান্ত নেবে যে গর্ভপাত বেআইনি হওয়া উচিৎ কি না? সব বিশেষজ্ঞ চেয়েছেন যেন এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের কাছে থাকে। তারাই সেটা নির্ধারণ করছে।”

ট্রাম্পের উত্তরের পরেই বাইডেন বলে ওঠেন, “আপনি যা করেছেন, তা ভয়ংকর।” এছাড়া তিনি গর্ভপাত নিয়ে নিজের অবস্থানে অটুট থাকতে গিয়ে একজন অভিবাসীর হাতে এক নারীর ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

ডেমোক্রেটরা আশা করেছিলেন, বাইডেন হয়ত গর্ভপাত ইস্যুতে এমন উত্তর দেবেন, যা সবাইকে একত্রিত করতে পারবে। কিন্তু তিনি না করে অভিবাসীর হাতে ধর্ষণের বিষয়টি এনে অভিবাসীদের অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়টি সামনে আনেন। ফলে সুযোগ পেয়ে যান ট্রাম্প।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধের অবসান ঘটাতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করবেন কি না- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি ট্রাম্প।

বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়, এই যুদ্ধ শেষ করতে তিনি কী করবেন? উত্তরে বাইডেন বলেন, “হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না।”

ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়ে তাকে আক্রমণ করেন বাইডেন। তিনি ট্রাম্পের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিতর্কের একপর্যায়ে বাইডেন বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে একাধিক মামলা রয়েছে, সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

কিন্তু এসব প্রসঙ্গে ট্রাম্প কর্ণপাত না করে উল্টো হান্টার বাইডেনের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তখন বাইডেনকে বলতে শোনা যায়, “মাই সান ওয়াজ নট এ সাকার।”

ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিতর্ক বাইডেন নিজেই চেয়েছিলেন। এজন্য নির্বাচনের অনেক আগেই বিতর্কের দিনক্ষণ ও স্থান নির্ধারণ করেন তিনি। তিনি যে মানসিকভাবে এখনও দৃঢ় আছেন, তা তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন। তবে বিতর্কে তিনি তার চাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি।

সিএনএনের জরিপ বলছে, বিতর্ক দেখেছেন এমন নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, বিতর্কে ট্রাম্প ভালো করেছেন। মাত্র ৩৩ শতাংশ উত্তরদাতা বাইডেনের পক্ষে মত দিয়েছেন। বিতর্ক শুরুর আগে একই ভোটারদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বলেছিলেন, বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প ভালো করবেন। আর বাইডেনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন ৪৫ শতাংশ ভোটার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত