ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম চারদিনেই মশাবাহিত এ রোগে প্রাণ হারাল ২১ জন। সব মিলে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ৫০৯ জনের।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রাণ হারানো পাঁচজনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দুইজন আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন একজন। বাকি দুইজন ঢাকা বিভাগের। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ আর দুইজন নারী।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ৬২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের নিয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হলো দুই হাজার ৮৪৫ জন। আর চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা সরকারি হিসেবেই দাঁড়ালো ৯৪ হাজার ৩১৪ জনে। এর মধ্যে দেশের সিটি কর্পোরেশন এলাকার রোগী ৩৫ হাজার ৬২৬ জন আর এর বাইরের রোগী ৫৮ হাজার ৬৮৮ জন।
নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৬২৯ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা বিভাগে; ১৫৩ জন। বাকিদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালে ১১২ জন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালে ৯২ জন, খুলনা বিভাগে ৭৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬১ জন, বরিশাল বিভাগে ৫৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন আর সিলেট বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নয় জন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের মেয়াদ অনেক বেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অন্যান্য বছরে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হলেও এবার এখনও সে প্রাদুর্ভাব বিদ্যমান।
বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপের’ ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা বলা হয়।
সেখানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জরিপের ফলাফল উপস্থাপনা করেন। জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় আনুপাতিক হারে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি। ঢাকার সব হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীর চাপ রয়েছে, চাপ রয়েছে বেসরকারি হাসপাতালেও।
জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৯টিতে এবং ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এইডিস মশার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতাকেই ‘মূল মন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, কোথায় মশা উৎপত্তি হয়, কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেসবই আমরা জানি। কিন্তু কেউ নিয়ম মানতে বা সচেতন হতে রাজি নই, এটিই ডেঙ্গুর বিস্তারের মূল সমস্যা।
‘আমরা শুধু একে অপরকে দোষারোপ করি’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কাউকে দোষারোপ না করে ডেঙ্গু কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলেই এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।