Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

বিএসএমএমইউতে সাড়ম্বরে বরণ : সমালোচনা হলেও নতুন ভিসি খুশি

ভিসি
দায়িত্ব নিতে বিএসএমএমইউতে প্রবেশ করছেন নতুন উপাচার্য
[publishpress_authors_box]

নাচে-গানে বরণ করে নেওয়ায় ভীষণ আপ্লুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য দীন মোহাম্মদ নূরুল হক। দিনটিকে নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবেও আখ্যা করলেন তিনি।

তবে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের দিন রোগীদের অসুবিধা করে, নিয়মিত কাজ বন্ধ রেখে নাচ-গানের এই আয়োজন নিয়ে অসন্তুষ্ট খোদ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির অনেক চিকিৎসক।

তারা বলছেন, এই ধারা চললে তা ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। এটি কোনও হাসপাতালের সংস্কৃতি হতে পারে না।

নাচ-গানে ‘মুখর’ বিএসএমএমইউ

বৃহস্পতিবার নতুন ভিসির যোগদানের আনুষ্ঠানিকতার বাইরে দিনভর আলোচনায় ছিল চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের নাচ-গানের একটি ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, ভিসির যোগদান উপলক্ষ্যে ব্যান্ড বাজিয়ে নাচ-গান করছেন প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের অনেকে।

অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসকদের একটি অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় রোগীদের সেবা বন্ধ রেখে নাচ-গানে নামে কর্মচারীরা। যা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

প্রতিষ্ঠানটির অনেক চিকিৎসকই এ ঘটনায় ব্রিবত।

এক চিকিৎসক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “উপাচার্যের যোগদানকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে রোগীদের অসুবিধায় ফেলে কর্মচারীদের এভাবে নাচ-গান আমাদের নতুন করে ফের অপমানিত করল।”

আরেক চিকিৎসক এই নাচ-গানকে যাত্রাপালার সঙ্গেও তুলনা করলেন। বললেন, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তা ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

আরেক চিকিৎসক বলেন, “আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ক্যাডার সার্ভিসে ফিরে যাবার সুযোগ থাকলে চলে যেতাম। এখানে যা কিছু হচ্ছে সবই নতুন ভিসির নজরে আসার জন্য। অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে অলরেডি।”

আগের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদের সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শারফুদ্দিন স্যার বিশ্ববিদ্যালয়কে একদফা পচিয়েছেন, এখন বাকিটা পচবে বলে মনে হচ্ছে।”

ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক চিকিৎসক বলেন, “কোনও সভ্য দেশের হাসপাতালে এটা হতে পারে? জীবনে কেউ দেখেছে? আমি লজ্জা পাচ্ছি, আমি দুঃখিত।”

আপ্লুত উপাচার্য

তবে নাচে-গানে বরণ করে নেওয়ায় আনন্দিত নতুন উপাচার্য। তিনি বলেছেন, আজ তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন।

তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে আপনারা এভাবে আমাকে গ্রহণ করবেন। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট, প্রত্যেক অধ্যাপকের চেহারা আমি দেখেছি। প্রত্যেক চিকিৎসকের চেহারা দেখেছি। মেডিকেল অফিসার থেকে আরম্ভ করে, ক্লাস নিয়ে বা ক্লাস ফেলে যারা এখানে এসেছেন, সবাইকে দেখেছি।

“আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন বলে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আজকে যে বর্ণাঢ্যভাবে আমাকে আপনারা গ্রহণ করলেন, অবিশ্বাস্য বর্ণাঢ্য যে অনুষ্ঠান হলো, সেটা আমার জীবনে ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমার জীবনে শ্রেষ্ঠতম দিন হয়তো আজকে।”

সদ্য সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত হবে কি না এমন প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট আছে, অন্য সবার সঙ্গে কথা বলে এটা করতে হবে। আমি এখানে আসার আগে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আসছিল। সবাই এখানে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছিলেন। তার মানে এখানে ভালো লোক নেই?

“প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একজন ভালো মানুষ আছে। আমি সেটা আবিষ্কার করব। আমার সঙ্গে কাজ করলে সে কোনও দিন খারাপ হবে না। কাজেই এটা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।”

অন্যায় আবদার মেনে নেবেন না উপাচার্য

দায়িত্বগ্রহণ অনুষ্ঠানে নিজেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার লোক বলে পরিচয় দিলেন উপাচার্য। তিনি বলেন, “আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি শেখ হাসিনার লোক, আমি আপনাদেরই লোক।”

দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে দায়িত্ব নেননি তিনি। কারো কোনও অন্যায় আবদারও মেনে নেবেন না।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের প্রত্যাশা জানিয়ে নয়া উপাচার্য বলেন, জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রথম, এর প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও বেশি। তাই এসব প্রত্যাশা পূরণে সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন বলেও জানালেন তিনি।

এই চিকিৎসক বলেন, বিএসএমএমইউতে মাথা উঁচু করে, সম্মানের সঙ্গে যেন কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করাই তার প্রধানতম কর্তব্য।

শিক্ষা, সেবা এবং গবেষণা; এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ বলে মনে করেন উপাচার্য দীন মোহাম্মদ নূরুল হক। তিনি বলেন, “এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষক তৈরি করে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তৈরি করতে আমি সাহায্য করব। সেই সঙ্গে সেবার ক্ষেত্রে মানুষ যেন আস্থা পায়, চিকিৎসা নিয়ে খুশি হয়ে ফিরে যায় সেদিকেও নজর রাখব।”

সেবার দিক দিয়ে বিএসএমএমইউ ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স বা সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব হসপিটালের মতো উচ্চতায় পৌঁছেছে বলেও মনে করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, রোগীরাও যেন সেবা নিয়ে এই কথাই বলেন সেটা তার চাওয়া।

চিকিৎসকদের গবেষণার ওপর জোর দিতে বলেন দীন মোহাম্মদ নূরুল হক। তিনি বলেন, “মেডিকেল পেশায় গবেষণা ছাড়া কেউ এগুতে পারে না। চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণাও করতে হবে। আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই গবেষণার বিষয়ে অনেক বেশি উৎসাহী। আমি বিশ্বাস করি, সঠিক পথে গবেষণা করলে এ কাজে তার হাত অবারিত থাকবে।”

এদেশের চিকিৎসকদের কী কী সমস্যা সেটি তার চেয়ে ভালো কেউ জানে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজের ক্ষেত্রে কারও অন্যায় আবদার শুনবেন না তিনি।

বলেন, “আমার কাছে সবাই সমান। আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলে দিয়েছেন। আমার অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। আপনারা সবাই বছরের পর বছর এখানে শ্রম দিয়ে আসছেন। সবাইকে জড়িয়ে ধরে এক সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমি প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে আসিনি, এখানে সবাইকে পাশে নিয়ে সব সমস্যা সমাধান করব।”

সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, “অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে।”

তার কক্ষে অপ্রয়োজনে কেউ সময় কাটাতে গেলে তিনি সেটা পছন্দ করবেন না বলেও জানিয়ে দেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত