Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

জিআই পণ্য নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি চান দেবপ্রিয়

বুধবার দুপুরে ঢাকার ধানমণ্ডিতে সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিং।
বুধবার দুপুরে ঢাকার ধানমণ্ডিতে সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিং।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

সুন্দরবনের মধু ভারত ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করার ঘটনায় সরকারের প্রশাসনিক অবহেলা, অবজ্ঞা ও জবাবদিহিতার অভাবই দায়ী বলে মনে করছেন অর্থনীতিবীদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এই সম্মানিত ফেলো বলেছেন, দেশের জিআই পণ্যকে আন্তর্জাতিকীকরণের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা প্রয়োজন।

বুধবার দুপুরে ঢাকার ধানমণ্ডির সিপিডি সেন্টারে সুন্দরবনের মধু ভারতে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে আমরা অনেক সময় ভাবি ভারত বড় দেশ, আমরা ছোট। কিন্তু এভাবে ভাবার কোনও সুযোগ নেই। আমরা দুইজনই সমান, এ হিসেবে কথা বলতে হবে। জাতিসংঘের কাঠামোও তাই বলে। ওদেরও এক ভোট, আমাদেরও এক ভোট। এখন সরকার যদি মনে মনে নিজেকে ছোট ভাবে, তাহলে আমরা কী করতে পারি।”

দেবপ্রিয় বলেন, “ভারত দাবি করছে সুন্দরবনের মধুতে তারা এক এবং অদ্বিতীয়। কিন্তু সুন্দরবনের মধু ভারতের চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। আমরা যদি মূল উৎপাদনকারী হই, তাহলে ভারত কীভাবে একক উৎপাদনকারী হয়?”  

‘আমাদের অবজ্ঞা অবহেলায় আজ সুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই পণ্য হয়েছে’ মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, “২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাটের ডিসি সুন্দরবনের মধুকে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও তা রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এই দায় আমরা কাকে দেব? অথচ ভারত আমাদের চার বছর পর ২০২১ সালে আবেদন করে তারা জিআই স্বত্ব পেয়ে গেছে।

“জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেও বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে কষ্ট হবে। কারণ, তাদের বাজার অনেক বড়। তাই, তাদের অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচও অনেক কম হয়।”

ভৌগোলিক পণ্যকে সুরক্ষা দিতে অভিন্ন আইনি কাঠামোর সাহায্য নিতে হবে জানিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বর্তমানে থাকা পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা দেবে না। যেমন, বাসমতি চাল এক দেশে সুরক্ষা দেয়নি। এটি ভারত, পাকিস্তানে আছে। সে ক্ষেত্রে লেভেলিং করায় সমস্যা হচ্ছে।

“আমাদের জিআই পণ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। লিসবন-জেনেভা আইনের অধীনে অংশ নিতে হবে। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের জন্য এখন সময় এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবস্থা আত্মস্থ করা। তবে আসল কথা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি লাগবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিষয়টিকে অনতিবিলম্ব সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ে আগামী যে কোনো বৈঠকে উত্থাপন করার প্রতি জোর দাবি জানাই এবং সামনে যদি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন তাহলে সেখানেও এটিকে উত্থাপন করা অবশ্যই উচিত।”

ডা. দেবপ্রিয় বলেন, “বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী কোনও জায়গায় বিকশিত হতে পারে না, যদি মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত করা না হয়। এখন মেধাস্বত্ব সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর সময় এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, যদি মেধাস্বত্ব আইনে সুরক্ষা না থাকে। এটা যে শুধু বিদেশিদের জন্য শুধু তা নয়, বাংলাদেশে হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সার আছেন, তাদের সুরক্ষা কী? তাদেরও সুরক্ষা দিতে হবে। নতুন উদ্ভাবকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যও মেধাস্বত্ব সুরক্ষা দিতে হবে।”

প্রারম্ভিক বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “এই পণ্যগুলোকে শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে দেখলে হবে না, এগুলোর সাথে এই পেশায় যারা জড়িত তাদের জীবন, দক্ষতা জড়িত। এই নামটিকে এখন ভাঙিয়ে, সুনামকে কাজে লাগিয়ে অন্য গ্রুপ ফায়দা নেবে। ব্যবসায়িক মুনাফা করবে। এটাকে কম গুরুত্বপূর্ণ দেখার কোনও সুযোগ নেই।

“এখন একের পর এক এগুলো আসতেই থাকবে। আমাদের একটি তালিকা আছে আমাদের পণ্যগুলোর, কিন্তু এটা পূর্ণাঙ্গ নয়। আমাদের এখন একটি সার্ভে করে কম্প্রিহেনসিভ তালিকা করতে হবে। অবিলম্বে এই সার্ভে করতে হবে। ধীরে ধীরে আমাদের এই তালিকার পণ্যগুলোকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করানো শুরু করতে হবে। ”

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ডা.  মোস্তাফিজুর রহমান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত