একজনের নাম রাজা বাহাদুর, অন্যজন সেকেন্দার বাহাদুর। বিশাল বপু নিয়ে রাস্তার পাশে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুই গজ বাহাদুরকে দেখতে রীতিমতো ভিড় জমে গেছে। কেউ একটু ছুঁয়ে দেখতে চেষ্টা করছেন, কেউ তুলছেন সেলফি।
তবে এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। যেন শীতের দুপুরে ঢাকার দোয়েল চত্বর এলাকায় নির্বিকার দাঁড়িয়ে শুঁড় দোলানো ছাড়া আর কোনও কাজ নেই।
অবশ্য বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ‘বিশেষ’ কাজেই তাদের আনা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এই এলাকায়। সেই কাজটি হলো ঐতিহাসিক ঢাকা ফটকের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া।
রাজা বাহাদুরের পিঠে বসেছিলেন মাহুত নুরুল ইসলাম। তিনি জানালেন, হাতি দুটির মালিক কাজল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাতি দুটিকে ভাড়া দেন। মাহুতদের কাজ নির্দিষ্ট ঠিকানায় হাতিগুলোকে নিয়ে যাওয়া, সেগুলোর যত্ন করা।
সেকেন্দার বাহাদুরের মাহুত আলী আজগর বলেন, “হাতিদুটির দেখভালে প্রতিমাসে লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। ঢাকা ফটকের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য প্রতিটি হাতি ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়েছে।”
ইতিহাসের পাতা থেকে
এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ঢাকা কোষের তথ্য অনুযায়ী, ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুদের আক্রমণ ঠেকাতে এই ফটক নির্মাণ সুবেদার মীর জুমলা। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে তিনি ছিলেন বাংলার সুবেদার।
তকে এ ধারণার সঙ্গে একমত নন ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
‘স্মৃতি-বিস্মৃতির নগরী ঢাকা’ বইয়ে তিনি বলেছেন, “ব্রিটিশ আমলে ঢাকার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট ড’স ১৯২৫ সালের পর রমনার জঙ্গল পরিষ্কার করে রেসকোর্স তৈরি করেছিলেন। মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্সকে যুক্ত করার জন্য এর উত্তর-পূর্ব দিকে তৈরি করা হয়েছিল একটি রাস্তা। রাস্তার প্রবেশমুখে দুটি স্তম্ভ তৈরি করেছিলেন তিনি। প্রচলিত মত অনুসারে এ দুটি স্তম্ভের নামই মীর জুমলা ফটক।”
নতুন রূপে ঢাকা ফটক
আধুনিক ঢাকায় এই মীর জুমলা ফটক বা ঢাকা গেইটের অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। তিন নেতার মাজার সংলগ্ন দোয়েল চত্বরের অদূরে অবস্থিত এই স্থাপনা।
বছরের পর বছর অবহেলা আর অযত্নে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছিল ঐতিহাসিক এই ফটক। দীর্ঘদিন ধরেই নগরবাসীর দাবি এর সংস্কার। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার কাজ শেষে নতুন রূপে ফিরেছে ঢাকা ফটক।
বুধবার বিকাল ৪টায় ঐতিহাসিক এই ফটকের সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, “ঢাকা ফটক সংস্কারের কাজ করছে মূলত ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ। গেটের আদি অংশগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণের পাশাপাশি এখানে নান্দনিক চত্বর করা হয়েছে। এছাড়া ইতিহাস সম্বলিত ফলক, বসার স্থান এবং চারদিকে নান্দনিক বাতি স্থাপন করা হয়েছে।
“সংস্কারসহ আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি তত্ত্বাবধায়ন করেছেন প্রকৌশলী অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ। এসব সংস্কার কাজে ব্যয় হয়েছে ৭১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯১ টাকা।”
গত বছরের ২৪ মে শুরু হয় সংস্কার কাজ। সেই কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ঢাকা গেইট সংস্কার করে পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।