সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্যরা ঢাকার জাহাঙ্গীর গেইট থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছে। এতে স্বাভাবিক হয়েছে যান চলাচল।
তবে জুলাই থেকে ৩৫ হাজার ভাতা করার সিদ্ধান্তের পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা শাহবাগ ছেড়ে যাননি।
রবিবার সকাল থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অবস্থান নিয়ে আছে ফার্মগেইট-মহাখালী সড়কের জাহাঙ্গীর গেইটের সামনে। অন্যদিকে দুপুরের আগে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্থানে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজধানীর অন্য সড়কগুলোতে দেখা দিয়েছিল ব্যাপক যানজট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী মানুষ।
জাহাঙ্গীর গেইটে চলাচল আটকে দেওয়ায় যানবাহনের সারি বনানী ছাড়িয়ে জিয়া কলোনি, অন্যদিকে মিরপুর কালশী পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। মাটিকাটা চেকপোস্ট থেকে বনানী ও উত্তরাগামী যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা রবিবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে জাহাঙ্গীর গেইট এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর ওই এলাকার অবরোধ উঠে।
দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেইট অভিমুখের সড়কে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করতে দেওয়া হয়। আর বেলা ১টা নাগাদ ওই এলাকায় যান চলাচল পুরোদমে শুরু হয়।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আপাতত ৩০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে আগামী বছরের জুলাই মাস থেকে সেই ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করে পাবেন চিকিৎসকরা।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা মেনে নিয়ে কাজে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত শাহহবাগ থেকে অবরোধ সরেনি।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সকালে মানববন্ধনের পর সড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন শুরু করে। তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও স্বজনরাও যোগ দেয়।
সড়কে শুয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো- চাকরিচ্যুতির সময় থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি পুনর্বহাল করতে হবে; যদি পুনর্বহাল সম্ভব না হয়, তাহলে তাকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধাসহ পেনশনের আওতাভুক্ত করতে হবে এবং যে আইন কাঠামো ও একতরফা বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শত শত সশস্ত্র বাহিনী সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সহযোদ্ধার প্রধান সমন্বয়ক মো. নাঈমুল ইসলাম বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে একটি পর্ষদ গঠন করে দাবিগুলোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
পরে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা জাহাঙ্গীর গেইট এলাকার সড়কের এক পাশে সরে যান।
এদিকে ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দাবির মুখে সরকার গত সপ্তাহে ভাতা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করে।
সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকরা ভাতা ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছিল। সেই দাবিতেই দুপুরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ট্রেইনি চিকিৎসকরা।