Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ লেখায় দীপায়ন খীসার বাংলা একাডেমির কর্মশালা বর্জন

আদিবাসী ফোরামের নেতা দীপায়ন খীসা।
আদিবাসী ফোরামের নেতা দীপায়ন খীসা।
[publishpress_authors_box]

আদিবাসী না কি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী, সেই বিতর্ক আবার সামনে এল দীপায়ন খীসার বাংলা একাডেমির এক কর্মশালা বর্জনের মধ্য দিয়ে।

আগামী ১৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাহিত্য-বিষয়ক কর্মশালা’ আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। এতে আলোচক হিসাবে ডাকা হয় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপায়ন খীসাকে।

বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, “কর্মশালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার সাহিত্য ও লেখক নির্বাচন, নির্বাচিত সাহিত্যের অনুবাদ এবং সংশ্লিষ্ট কাজে উপযুক্ত গবেষক ও অনুবাদক নির্বাচন ও সম্পৃক্তকরণ, কাজের পদ্ধতি নির্ধারণ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”

কিন্তু আদিবাসী ব্যবহার না করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শব্দ ব্যবহার করার জন্য এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন দীপায়ন খীসা। তিনি মঙ্গলবার ফেইসবুকে তার আমন্ত্রণপত্রসহ একটি পোস্ট দিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানান।

ফেইসবুকে দীপায়ন খীসা লিখেছেন, “বাংলা একাডেমির ক্ষমা চাওয়া দরকার। আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলাম। অবমাননাকর ও অসম্মানজনক ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ পরিচিতি ব্যবহারের জন্য আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

বিষয়টি নিয়ে সকাল সন্ধ্যা যোগাযোগ করলে দীপায়ন খীসা বলেন, “এটা খুবই অপমানকর। শেখ হাসিনা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে আমাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে চেয়েছেন। সেটা যদি তার পতনের পরও থেকে যায়. তাহলে তা কোনোভাবেই ভালো না।”

দীপায়ন খীসার ফেইসবুক পোস্ট।

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আদিবাসীদের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক চলছে। সংবিধানে এখন বাঙালি বাদে অন্য জাতিসত্তার পরিচয় দেওয়া আছে- উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী।

দেশের সমতল ও পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনজাতিগোষ্ঠী আদিবাসীর স্বীকৃতি দাবি করে আসছে। ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ বা ‘উপজাতি’ শব্দগুলোকে বৈষম্য এবং বঞ্চনার প্রতীক হিসাবে দেখছে তারা।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের সময় আদিবাসী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন জোর দাবি জানালেও তা উপেক্ষিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে যে আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করে গেছে, সেখানে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করে তাদের সব অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ২৮ (ক) ধারায় একাধিকবার ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ২০০৯ সালে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেওয়া বাণীতে আদিবাসীদের নিজস্ব পরিচয়ে সব অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন শেখ হাসিনা।

কিন্তু ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর ‘আদিবাসী’ শব্দটি এড়িয়ে যাচ্ছিল আওয়ামী লীগ।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ‘আদিবাসী’ শব্দটি বলেছিলেন।

সেই বক্তব্যের রেশ টেনে দীপায়ন খীসা বলেন, “ড. ইউনূস আদিবাসী বলার পর আমরা ভাবলাম, এই সমস্যা মনে হয় মিটল। কিন্তু আমরা দেখলাম এই সমস্যা মিটছে না। যদি তাই হয়, এই যে নতুন করে সংবিধান লিখা বা প্রণয়নের আলাপ হচ্ছে, তাতে কী লাভ হবে?”

যদি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চায় কিংবা কর্মসূচির শিরোনাম বদলায়, তাহলে সেই কর্মশালায় যাবেন বলে জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তাকে আমরা অফিসিয়ালি আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তার যদি কোনও কিছুতে সমস্যা থাকে, সেটা আমাদের অফিসিয়ালি জানাতে হবে। তখন আমাদের পক্ষ থেকে কিছু করার সুযোগ থাকে।”

আদিবাসী শব্দটি ড. ইউনূস তার বক্তব্যে ব্যবহার করেছিলেন, তাহলে বাংলা একাডেমি কেন ব্যবহার করছে না- প্রশ্নে আজম বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এই নিয়ে মন্তব্য করা আমার এখতিয়ারে পড়ে না।”

দীপায়ন খীসা বলেছেন, তিনি ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকেও তার অবস্থান জানাবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত