যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে কত দূর থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল, সে সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ভৌগলিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে সিএনএন বলছে, হামলাকারীর থেকে ট্রাম্প প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট (১২০ থেকে ১৫০ মিটার) দূরে ছিলেন।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার শহরে নির্বাচনী সমাবেশ বক্তব্য রাখছিলেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। বক্তব্য শুরুর একটু পরেই তাকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় এক বন্দুকধারী।
তার ছোড়া গুলি ট্রাম্পের দেহের এমন কোনও জায়গায় আঘাত করেনি, যাতে তার তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হতে পারত। একটি গুলি ট্রাম্পের ডান কানের ওপরের অংশ ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে।
হামলার পর শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছিল, সমাবেশস্থলের বাইরে উঁচু স্থান থেকে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।
সিক্রেট সার্ভিসের একাধিক সূত্র পরে সিএনএনকে বলেছে, ট্রাম্পের সমাবেশস্থলের বাইরে একটি ভবনের ছাদে ছিলেন হামলাকারী। সেখান থেকেই গুলি ছোড়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই) পরে হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে। তারা জানিয়েছে, ট্রাম্পের ওপর হামলা চালানো ব্যক্তির নাম টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। তার বয়স ২০।
গুলিতে আহত ট্রাম্পকে সমাবেশস্থল থেকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা। পরে ট্রাম্প জানান, তার ডান কানের ওপরের অংশে গুলি লেগে ফুটো হয়ে গেছে।
রিপাবলিকান পার্টির বর্ষীয়ান নেতা ট্রাম্পের ওপর হামলার পর সংবাদ সম্মেলনে এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট কেভিন রোজেক বলেন, “নির্বাচনী সমাবেশ চলাকালে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে বন্দুকধারী কয়েকবার গুলি ছুড়তে পেরেছে। এটা বিস্ময়কর।
“আসলে ঠিক কী হয়েছে, কীভাবে একজন ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে সমাবেশস্থলের কাছে যেতে পারল, কী ধরনের অস্ত্র তিনি ব্যবহার করেছেন- এসব জানতে দীর্ঘ তদন্ত শুরু হতে যাচ্ছে। সব প্রশ্নের উত্তর পেতে কয়েকদিন, সপ্তাহ এমনকি মাস লেগে যেতে পারে।”
ট্রাম্পের ওপর হামলার বিষয়ে পেনসিলভেনিয়া স্টেট পুলিশের লেফটেন্যান্ট কর্নেল জর্জ বাইভেনস বলেন, “কোন কোন জায়গায় ব্যর্থতার কারণে এমন ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য আরও ভালো কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে- তাও বিবেচনা করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “উন্মুক্ত জনসমাগমস্থলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হামলাকারীর সম্ভাব্য হামলা থেকে রাজনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন।”
হামলার সময় কেমন ছিল সমাবেশস্থল
হামলার সময় সমাবেশস্থলের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ।
বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গুলির শব্দ পেয়েই মঞ্চে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন ট্রাম্প। তখন সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা ট্রাম্পকে রক্ষা করতে ছুটে যান। মানব ঢাল হয়ে তাকে ঘিরে রাখেন।
হামলাকারীকে থামানো গেছে নিশ্চিত হওয়ার পরই সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা ট্রাম্পকে নিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ট্রাম্পের নির্বাচনী সমাবেশে উপস্থিত এক ব্যক্তির ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করেছেন ট্রাম্প। এর কয়েক সেকেন্ড পরই কাউকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, “তার কাছে বন্দুক আছে!” অন্য একজন একই স্বরে বলে ওঠেন, “সে ছাদে!”
আশপাশ থেকে চিৎকার শুনে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বুঝতে পারেন, কোনও এক ব্যক্তির কাছে বন্দুক আছে। তখনও গুলি ছোড়া হয়নি।
এরপরই ভেসে আসে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ। শব্দ পেয়েই মাথা নিচু করেন সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা।
সে সময় তাদের মধ্যে একজন অন্যদের পরামর্শ দেন, যে ভবনের ছাদে বন্দুকধারী রয়েছে, তার কাছে না যেতে।
এর কয়েক সেকেন্ড পর দেখা যায়, বন্দুকধারীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তার প্রাণহীন দেহ একজন দেখেছেন বলে দাবি করেন।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “তিনি মারা গেছেন। তারা তার মাথায় গুলি করেছে।”
সিএনএনের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, সেসময় তার ঠিক পেছনে একটি ভবনের ছাদে ছিলেন সিক্রেট সার্ভিসের স্নাইপাররা। তাদের গুলিতে হামলাকারীর মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোশাল মিডিয়ায় হামলার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, ট্রাম্প মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ সময় হঠাৎ গুলির শব্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে কানে হাত দিয়ে নিচে বসে পড়েন ট্রাম্প। এরপর নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত তাকে ঘিরে ফেলেন। বেশ কিছুক্ষণ বসেছিলেন ট্রাম্প। মঞ্চেই পোডিয়ামের আড়ালে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিছুক্ষণ পরে তাকে ধরে আস্তে আস্তে তোলা হয়। ট্রাম্প উঠে দাঁড়ান।
সে সময় দেখা যায়, ট্রাম্পের ডান কান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রক্ত লেগেছে মুখেও। মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন ট্রাম্প। ডান হাতের মুঠি শক্ত করে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে তাকে বলতে শোনা যায়, “ফাইট, ফাইট।”
ঘটনাস্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, সমাবেশে লোকজনের ভিড়ের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য শুনছিলেন। ওই সময় পাশের একটি ভবনের ছাদে এক ব্যক্তিকে অস্ত্র হাতে দেখতে পান তিনি।
গ্রেইগ নামের ওই ব্যক্তি বলেন, “তার কাছে একটি রাইফেল ছিল, আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম– একটি রাইফেল ছিল। এরপর পাঁচটি গুলির শব্দ হয়।”
তবে ঘটনাস্থলে থাকা জেন ও থেরেসা নামে আরও দুই প্রত্যক্ষদর্শী ছয় থেকে আটটি গুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিবিসিকে। থেরেসা বলেন, ““আমি প্রথমে একটি শব্দ শুনলাম, একটু পরে আবার দুটি শব্দ হলো। তখন আমি বুঝতে পারি যে এগুলো গুলি।”