ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি পরিবর্তন এসেছে, তাতে গোয়েন্দা শাখার দায়িত্ব হারিয়েছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ।
তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে উচ্চ আদালতের উষ্মা প্রকাশের দুদিন বাদে বুধবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তিন অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করেন।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন এতদিন গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে ছিলেন। তাকে এখন পাঠানো হয়েছে ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনসের দায়িত্বে। গোয়েন্দা শাখার দায়িত্ব পেয়েছেন মহা. আশরাফুজ্জামান। তিনি এতদিন অতিরিক্ত কমিশনার হিসাবে লজিস্টিকস, ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।
আশরাফুজ্জামান এতদিন যে দায়িত্বে ছিলেন, অতিরিক্ত কমিশনার হিসাবে এখন লজিস্টিকস, ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্টে সেই দায়িত্ব পালন করবেন খ মহিদ উদ্দিন।
তিনি এতদিন ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনসের দায়িত্বে ছিলেন। সেই দায়িত্বেই হারুনকে পাঠানো হলো।
সরকারি চাকরিতে দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা হিসাবে ঢাকা মহানগর পুলিশে মোট ছয়জন অতিরিক্ত কমিশনার রয়েছেন। বাকি তিনজনের দায়িত্বে এই দফায় কোনও পরিবর্তন আনেননি কমিশনার হাবিব।
অন্য অতিরিক্ত কমিশনারদের মধ্যে এ কে এম হাফিজ আক্তার (অ্যাডমিন), মো. মুনিবুর রহমান (ট্রাফিক) এবং মো. আসাদুজ্জামান (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) হিসাবে থাকছেন।
অতিরিক্ত তিন কমিশনারের পাশাপাশি তিনজন যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বও পুনর্বণ্টন করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকারকে ডিবিতে (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা দক্ষিণ), যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা দক্ষিণ) সঞ্জিত কুমার রায় এবং যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবীকে ডিএমপি (অপারেশনস) বদলি করা হয়েছে।
কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের সহিংস আন্দোলনে পর আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ককে ধরে ডিবি কার্যালয়ে রেেখ তাদের খাওয়ানোর ভিডিও ও ছবি প্রকাশের পর উচ্চ আদালতের সমালোচনায় পড়েন হারুন।
ওই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য তাদের ডিবি হেফাজতে আনার কথা হারুন বললেও সোমবার হাইকোর্টের বিচারক বলেন, “জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না। যাকে খুশি তাকে ধরে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন। ছবি তুলে আবার সেটি প্রচার করেন।”
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন আলোচনায় প্রথম উঠে আসেন ২০১১ সালে বিএনপির হরতালের সময় সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের সঙ্গে তর্কাতর্কি এবং তাকে টেনে হিঁচড়ে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে। তখন হারুন ডিএমপির লালবাগ জোনের উপকমিশনার ছিলেন।
এরপর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালেও হারুনকে নিয়ে নানা সমালোচনা ওঠে। ডিএমপিতে আবার ফেরার পরও সমালোচনা তাকে ছাড়েনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সাবেক ছাত্র হারুনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। ২০তম বিএসএস ব্যাচের কর্মকর্তা হিসাবে পুলিশে যোগ দেন তিনি।
২০১৬ সালে গাজীপুরে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের সময় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার পর ইসির নির্দেশে তাকে ওই জেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য আবার তাকে সেখানে ফেরায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরপর নারায়ণগঞ্জে এসপির দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল আলোচনায়। ওই সময় পারটেক্স গ্রুপের মালিক আবুল হাসেমের পুত্রবধূ ও নাতিকে ঢাকার বাড়ি থেকে রাতে তুলে নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন হারুন। তখন তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তরে।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশে অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব পালনের সময় ডিবি কার্যালয়ে বিভিন্নজনকে তার আপ্যায়নের বিষয়টি ছিল ব্যাপক আলোচনায়।
২০২৩ সালের ২৯ জুলাই বিএনপির কর্মসূচিতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পেটানোর পর তুলে ডিবি অফিসে নিয়ে খাওয়ানোর ভিডিও নিয়েও হারুনের সমালোচনা উঠেছিল।
রাজনীতিক থেকে অভিনয়শিল্পী, এমনকি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি অতিথি কিংবা আন্দোলনকারী, নানাজনকে ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করতে দেখা গেছে হারুনকে।
নেটিজেনরা তা নিয়ে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ বলে ট্রলও করে আসছিলেন। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সমন্বয়কদের ধরে নিয়ে খাওয়ানোর পর ট্রল ছাপিয়ে হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়েন এই পুলিশ কর্মকর্তা।