রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি এলাকায় বিষ প্রয়োগে পথ কুকুর ও বিড়াল হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রাণীপ্রেমী তারকারা জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
শনিবার ‘পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষে এর সমন্বয়ক অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ রাজধানীর আদাবর থানায় জিডি করেছেন।
অভিনেত্রী জয়া আহসান তার ফেইসবুক পেজে প্রতিবাদ জানিয়ে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকা একটি মৃত কুকুরের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, “বিষ খাওয়াতে হলে বন্ধু রূপেই আসতে হয়। মানুষই পারে এই রূপ ধারণ করতে। আমার রূপ একটাই— ক্ষুধার্ত তবু বন্ধু। ছবিটির ক্যাপশনে মৃত কুকুরের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন জয়া।”
এ ছবির নিচে কমেন্ট করে দীপা খন্দকার লিখেছেন, এত খারাপ কী করে হয় মানুষ।!
অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “মানুষ এতটা অমানুষ কীভাবে হয়? এতটা বিবেকহীন? জাপান গার্ডেন সিটি বিল্ডিং কমিটির লোকজন ছয়টি কুকুর আর একটি বিড়ালকে খাবারের সঙ্গে বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। আরও আগে থেকেই তারা এটি করতে চেয়েছিল, পারেনি। এবার করেই ফেলল।”
সালমান মুক্তাদির ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখেছেন, “কী হয়েছে আমাদের। আত্মা নাই আমাদের? হৃদস্পন্দন হয়? ফিল করে না কিছু? মানুষ নিজেই জানোয়ার। পশুপাখিদের জানোয়ার ডাকার কোন পয়েন্টই নাই এখন আর। আমরা জানোয়ার হয়ে গেছি। প্রাণী হওয়ার জন্য প্রাণ এর প্রতি মায়া থাকতেই হবে। আল্লাহর গজব পড়ুক তোদের উপর। তোরাও যখন মরবি শেষ মুহূর্তে যেন এ দৃশ্যগুলো মনে পড়ে।”
জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মাদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। ফলে এসব প্রাণীর দ্বারা প্রায়ই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুকুর নিয়ে অভিযোগ এনে পোস্ট করেছেন অনেকেই। এতে দেখা যায়, সেখানকার শিশুদের কুকুর কামড়েছে বলে অভিযোগ আনা হচ্ছে।
এমন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই জাপান গার্ডেন সিটিবাসীর পক্ষ থেকে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তারই বাস্তবায়ন হয় শুক্রবার দিবাগত রাতে।
এই সময় বিষ প্রয়োগে ১০টি পথ কুকুর ও ১টি বিড়ালকে হত্যা করা হয় বলে থানায় অভিযোগ জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ।
সাধারণ ডায়েরিতে তিনি ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে জানিয়েছেন,
“জাপান গার্ডেন সিটির কয়েকজন বাসিন্দা গতকাল (২২ নভেম্বর) রাত ৯টায় দেখেন যে, কিছু কুকুর ও বিড়াল বিষাক্রান্ত হয়ে যন্ত্রণায় ছোটাছুটি করছে এবং বিষ প্রয়োগের ফলে মুখ দিয়ে রক্ত বমি করছে। অতঃপর যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
এরপর এলাকাবাসী ও প্রাণী অধিকারকর্মীরা আপনার থানায় যোগাযোগ করলে একজন সাব ইন্সপেক্টর জনাব নাসির ঘটনাস্থলে আসেন এবং তার উপস্থিতিতে ৩টি কুকুর ও ১টি বিড়ালের মরদেহ পাওয়া যায়। বাকিদের মৃতদেহ ইতোমধ্যে লুকিয়ে ফেলা হয়। ঐ সময় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, কুকুরগুলোকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে এবং ইতিপূর্বে এখানকার পথপ্রাণীদের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছিল।
প্রাণীকল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী বিষ প্রয়োগে কোনো প্রাণী হত্যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ উল্লেখ করে এ ঘটনার জন্য দায়ি ব্যক্তিদেরও চিহ্নিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, “এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায় যে, জাপান গার্ডেন সিটির কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সমন্বয়ে সেক্রেটারি জনাব শাহানুর এই বর্বরোচিত ও আইন বিরোধী কাজটি সম্পন্ন করেন।”
এ প্রসঙ্গে নওশাবা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা তিনটি কুকুরের শবদেহ সংগ্রহ করে তাদের পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা করেছি। আগামীকাল ফলাফল আসার পর মামলা করা হবে। আমরা চাই এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আইন লঙ্ঘন করে এভাবে অমানবিক কার্যক্রম সারাদেশে বন্ধ হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সকল প্রাণীপ্রেমি মানবিক মানুষকে এক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”