চীনের ঝুহাই শহরের একটি স্টেডিয়ামে ব্যায়াম করতে থাকা মানুষদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত এবং আরও ৪৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হতাহতদের বেশিরভাগই ঘটনার সময় ব্যায়াম করছিলেন।
স্থানীয় পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফ্যান নামে ৬২ বছর বয়সী এক পুরুষ ড্রাইভার একটি এসইউভি চালিয়ে ঝুহাই স্পোর্টস সেন্টারে ঢুকে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে।
চীনা গণমাধ্যম বলছে, আহতদের মধ্যে অনেক বৃদ্ধ, কিশোর ও শিশুও রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পালানোর চেষ্টা করার সময় ফ্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি এখন কোমায় রয়েছেন।
শহরটিতে উচ্চতর নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একটি বড় বেসামরিক ও সামরিক এয়ারশো অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, ঝুহাই স্পোর্টস সেন্টারের সামনের নিরাপত্তা প্রতিবন্ধকতা গুঁড়িয়ে দিয়ে ওই ড্রাইভার তার এসইউভিটি ব্যয়ামরত মানুষের ভিড়ের ওপর তুলে দেন। এ সময় গাড়ির নিচে চাপা পড়েন বেসামরিক লোকজন।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ ধারণা করছে, বিয়ে বিচ্ছেদের পর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে সৃষ্ট অসন্তোষ থেকে ফ্যান লোকজনের ওপর গাড়ি চালিয়ে দিয়ে থাকতে পারেন।
পুলিশ বলেছে, বর্তমানে কোমায় থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন। কিন্তু দেশটির প্রশাসন বেশিরভাগ ভিডিও সরিয়ে ফেলেছেন।
তবে এরপরও অনলাইনে থেকে যাওয়া কিছু ফুটেজ থেকে দেখা যায়, হামলার স্থলে অনেক মানুষ মাটিতে পড়ে আছেন। স্থানীয় প্যারামেডিকস ও পথচারীরা সেখানে তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
চ্যান নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী চীনা সংবাদমাধ্যম কাইচিনকে বলেছেন, ঘটনার সময় সেখানে কমপক্ষে ছয়টি দল হাঁটার জন্য স্টেডিয়ামে জড় হয়েছিল। সেখানে রাস্তার পাশ ঘেঁষে প্রতিদিনই তারা শরীর চর্চা করেন।
চ্যান বলেন, শরীর চর্চায় ব্যস্ত দলটি স্টেডিয়ামের চারপাশে তৃতীয় চক্কর শেষ করার সময় হঠাৎ তীব্র গতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ি তাদের চাপা দেয়।
অরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গাড়িটি দৌড়ের পুরো পথজুড়ে— পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম এবং উত্তর; চতুর্দিকেই নির্বিচারে লোকজনকে চাপা দিয়েছিল।
স্টেডিয়াম থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরের একটি ভেন্যুতে মঙ্গলবার শুরু হওয়া চীনের সামরিক বাহিনীর এয়ারশোর সঙ্গে এই হামলার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ঝুহাইয়ের এয়ারশোতে চীনের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান ও অ্যাটাক ড্রোনের প্রদর্শনী চলছে। প্রদর্শনীতে রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তা সের্গেই শোইগু উপস্থিত থাকবেন।
মঙ্গলবার কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, নিরাপত্তার জন্য এয়ারশো চলাকালীন ক্রীড়া কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ এবং বাহিরপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আহতদের চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং অপরাধীর কঠোর শাস্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সরকার ঘটনাটির তদন্তে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ পাঠিয়েছে। মামলার তদন্তের পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা চলছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনে জনসাধারণের ওপর অনেক সহিংস আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
সেপ্টেম্বরে সাংহাইয়ের একটি সুপারমার্কেটে এক ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল।
একই মাসে দক্ষিণ চীনে নিজের স্কুলের কাছে ছুরিকাঘাতের একদিন পর ১০ বছর বয়সী এক জাপানি ছাত্র মারা যায়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি