বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন সিলেটের সদ্য সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়রদের বরখাস্ত করে।
তাতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ হারানো আনোয়ার শনিবার যুক্তরাজ্য সময় দুপুরে নিজের ফেইসবুক পেইজে লাইভে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে সমালোচনামুখর হন।
তিনি বলেন, “আজকে সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষ জিম্মি। শেখ হাসিনা, যিনি দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তাকে হত্যা করার জন্য হামিদ কারজাই ড. ইউনূস এবং তার দোসররা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আমিসহ ১২টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র, সব উপজেলা চেঢয়ারম্যানকে এক কলমের খোঁচায় বাদ দিয়ে যে স্বৈরাচারী মনোভাব হামিদ কারজাই ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেখিয়েছেন, প্রমাণ করছেন যে তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না, তার দোসররা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।”
আফগানিস্তানে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর অভিযানে তালবান সরকার উৎখাত হওয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন হামিদ কারজাই। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন তিনি। সমালোচকদের কাছে তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ‘পুতুল সরকার’ হিসাবে খ্যাত।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের তিন দিন পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশে বিরূপ পরিস্থিতিতে লন্ডনে ফিরে আসেন সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মাসুক ইবনে আনিস সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১৭ আগস্ট সিলেট থেকে লন্ডনে এসেছেন। তাদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে আনোয়ার আরও বলেন, “এরা গণতন্ত্রে, উন্নয়নে বিশ্বাস করে না।
“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বরের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীদের উপর কোর্টে হামলা হয়েছে। তাদের অপমান করা হয়েছে। এটা কোনও সভ্য জাতি, সভ্য মানুষ মানতে পারে না।”
অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ার করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “হত্যা, নির্যাতন, জুলুম করে কেউ টিকে থাকতে পারবে না।”
এই সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখন প্রতিবাদের সময় এসেছে, প্রবাসীদেরও প্রতিবাদ করতে হবে। এসব নির্যাতনের বিচার এক সময় হবে।
“আমরা যখন মরব, প্রতিবাদ করেই মরব। বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ পালাবে না, আওয়ামী লীগকে মুছে দেওয়া যাবে না, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল।”
এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের বাংলাদেশের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান আনোয়ার।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত বছরের ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তবে আওয়ামী লীগ আমলে সেটিসহ প্রায় সব নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেড় বছরও কাজ করতে পারেননি তিনি।
এ প্রসঙ্গ টেনে আনোয়ার বলেন, “স্বল্প সময়ে কিছুই করতে পারিনি। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সিলেটের মাটির জন্য, পূন্য ভূমির জন্য সারা জীবন কাজ করে যাব।”
জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমি তো সিলেটের অন্যান্য দলসহ কারও প্রতি কোনও অন্যায় করেনি। আমি সবাইকে নিয়ে চলতে চেষ্টা করেছি।
“৫ আগস্ট আমাদের সিলেটের এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, শফিউল আলম নাদেল, রণজিত সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা মাসুক উদ্দিন, জাকির হোসেন, নাসির উদ্দিনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এখন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা দিচ্ছে, নির্যাতন করছে।”