প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরে তথ্যের নির্ভরযোগ্য একটি উৎসে পরিণত হয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশের স্বার্থে নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দিয়েছে।
ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ রবিবার সকালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ধারণ করা ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। বক্তব্যে দেশে ও দেশের বাইরে সিপিডি একটি স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সিপিডি সব সময় স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করেছে এবং দেশের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। দেশের মানুষের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন এবং দারিদ্র দূরীকরণের যে চেষ্টা আমি সারা জীবন ধরে করেছি সিপিডির কাজে সব সময় তার প্রতিফলন দেখেছি।”
নানামুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সিপিডি দেশের মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য ও নির্ভীক প্রতিষ্ঠান অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি সবসময় আমার কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। আশা করি সিপিডি অতীতের মতো বর্তমানে ও আগামীতেও তার বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান অব্যাহত রাখবে এবং দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে অবদান রাখবে।”
সিপিডির প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টি অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সিপিডি নিয়মিত নীতি সংলাপের আয়োজন করে, যার অনেকগুলোতে আমি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকেছি।”
গত ১৫ বছরে মুক্তচিন্তাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের অন্যতম কারণ ছিল গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার লিমা বলেন, “আমরা যারা গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছি, তাদের সঙ্গে সিপিডির একটি সম্পর্ক আছে। ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া দরকার তা নির্ধারণের জন্য আমরা সিপিডির তথ্যের ওপর নির্ভর করি।”
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুধু ভোট দিয়ে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা যায় না। গণতন্ত্র টেকসই করতে প্রতিনিয়ত জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক সমাজ, জনগণসহ সব অংশীজনকে তার ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংস্কার প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। তবে হঠাৎ কয়েকজন মনে করলাম, এসব সংস্কার দেশের জন্য দরকার, আগামী দিনের জন্য ভালো কাজ হবে। দুঃখিত, এটা টেকসই হয় না। কারণ, এই দায়িত্ব কেউ কাউকে দেয়নি।”
অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান আশা প্রকাশ করেন, যেন ভবিষ্যতেও দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকে, যাতে সিপিডি নির্ভয়ে সব কাজের আলোচনা-সমালোচনা করতে পারে।
তিনি বলেন, “শুধু সিপিডি নয়, আমাদের দেশে যেন এ রকম একটা গণতান্ত্রিক আবহ থাকে, যেখানে বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারি। এখনও বহুমত প্রকাশে নানা রকম ঝুঁকি দেখি। এর সবই যে সরকারের কাছ থেকে আসছে, তা নয়; যাদের একটা মত আছে, তারা অন্যদের মত শুনতে চায় না “
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। আরও বক্তব্য দেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) বোর্ডের পরিচালক নিহাদ কবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।