হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোয়াজ্জেম এইচ রাকিব সরকার ও শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খাদিজা আক্তার উর্মিসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মো. মাহমুদ হাসান তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. রাগীব নূরের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার অপর আসামি মো. সাহিল হোসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। গতকাল রবিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকর্মীদের সংঘাত হয়। সেই সংঘাতের পর আন্দোলন জোরদার হয়।
সেদিনের ঘটনা ধরে গত ২১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী মো. আবু সায়াদ বিন মাহিন সরকার বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৯১ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
মামলায় রাকিব-উর্মিসহ ছাত্রলীগের তিন নেতাকে আটক রাখার আবেদন বলা হয়, গত ১৫ জুলাই এজাহারভুক্ত আসামিসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮০০-১০০০ জনের যোগসাজশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধ আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে ইট, কাচ, কাচের বোতল, পাইপ, লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে দফায় দফায় হামলা হয়।
আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ করে ও হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের গুলি করে। ওইদিন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান, হল, মল চত্বর, ভিসি চত্বর, টিএসসি, শহীদ মিনার, শহীদুল্লাহ হল ইত্যাদি এলাকায় নৃশংস হামলা চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুরুতর আঘাত করে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
আবেদনে বলা হয়, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা আরোপ নিয়ে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে সাবেক দলীয় সরকার গত ১৪ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকার সম্বোধন করলে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এর প্রতিবাদ করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জুলাই রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর বিপরীতে ছাত্রলীগ অবৈধ সমাবেশ করে এবং উক্ত সমাবেশের উদ্দেশ্য যেকোনও মূল্যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদেরকে দমন করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সেদিন তিন শতাধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। কিছু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে আসামিরা জরুরি বিভাগে ঢুকে সেখানেও তাদের ওপর হামলা চালায়। আসামিরা ঘটনায় সরাসরি জড়িত।
আবেদনে আরও বলা হয়, তৎকালীন সরকার দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশে তারা অপরাপর আসামিদের সহায়তায় এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। আসামিদের নাম-ঠিকানা সন্দেহজনক। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলার তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত তাদের জেল হাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতচ্যুত হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে আছেন দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই। আত্মগোপনে আছেন ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতারাও। এর মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকে আবার দেশ ছেড়েছেন বলে খবর মিলছে।
এরই মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে গত ২৩ অক্টোবর সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।