Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
প্রত্যয় পেনশন স্কিমের বিরোধিতা

কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে ধর্মঘটী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলাভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে ধর্মঘটী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কলাভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
Picture of জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

পেনশন নিয়ে আন্দোলনের তৃতীয় দিনে এসে আলোচনার জন্য সরকারের ডাক পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এই আলোচনা হবে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া এই খবর নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পেনশন নতুন প্রত্যয়ে স্কিমে নেওয়ার বিরোধিতা করে সোমবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এই আন্দোলনের কর্মসূচি হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে গত দুদিনের মতো বুধবারও অবস্থান নেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সেখানেই অধ্যাপক নিজামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে আমার সাথে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে কথা হয়েছে। আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি।

“তিনি আমার কথা শুনেছেন এবং আমাদের সাথে বসতে চেয়েছেন। আজকে সন্ধ্যায় প্রথমে বসার কথা হয়েছিল। কিন্তু তার সাভারে একটি প্রোগ্রাম আছে, তাই কালকে সকালে ঠিক হয়েছে।”

কোথায়-কখন সভা হবে, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে নির্ধারণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক নিজামুল হক।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই নেতা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এতদিন সরকারি কর্মচারীদের মতোই পেনশন সুবিধা পেতেন। তবে সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশনও সেই ব্যবস্থায় নিয়েছে। সেজন্য নতুন একটি স্কিম করা হয়েছে, যার নাম প্রত্যয়।

স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের চলতি জুলাই থেকে এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা শুরু থেকে প্রত্যয় স্কিমে তাদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে আসছিল। সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিলে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল তারা। তাতে সাড়া না পেয়ে ১ জুলাই এই স্কিম কার্যকর হওয়ার পর তারা ধর্মঘট শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি, প্রত্যয় স্কিমে তাদের পেশশন সুবিধা আগের চেয়ে কমে যাবে।

তাদের আশ্বস্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন।

তাদের দাবি তিনটি- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা।

গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে চালু করা হয় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। শুরুতে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা স্কিম নিয়ে এ ব্যবস্থা চালু হলেও সাত মাস পর যুক্ত হয় প্রত্যয়।

সঞ্চয়ের প্রতীকী ছবি

প্রত্যয় স্কিম

সরকারি সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে চালু হয় প্রত্যয় স্কিম। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০ মার্চ দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১ জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকার পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করল।

একই দিন সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা সংশোধন করে আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর ১ জুলাইয়ের পর থেকে ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি বাধ্যতামূলক।

২০২৩ সালের ১৭ আগস্টে চালু হওয়া ‘প্রগতি’, ‘প্রবাস’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ এই চার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ঐচ্ছিক হলেও নতুন স্কিম বাধ্যতামূলক।

সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রত্যয় প্রায় ৪০০ সংস্থার ওপর কার্যকর হবে। যেসব সংস্থা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি অর্থায়নে চলে, সেগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

স্বশাসিত বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বোঝানো হয়েছে সেগুলোকে, যারা কোনও আইনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা। এর মধ্যে কোনও কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, কমিশন, সংস্থা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউশন, কাউন্সিল, একাডেমি, ট্রাস্ট, বোর্ড, ফাউন্ডেশন ইত্যাদি রয়েছে।

এর বাইরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), জীবন বীমা করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ইত্যাদি রয়েছে এ তালিকায়।

বিদ্যমান কর্মসূচি ও ‘প্রত্যয়’

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখে, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। এ টাকা পেনশনে যাওয়ার পর অবসরভোগীরা পেয়ে থাকে।

যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পায়, তারা টাকা রাখে জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পায়, তারা টাকা রাখে সিপিএফে। অল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চাকরি শেষে বিদ্যমান কর্মসূচির আওতায় অবসর সুবিধা হিসেবে এককালীন অর্থ পেলেও মাসিক হারে তা পায় না।

‘প্রত্যয়’ স্কিমে চাঁদার বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মূল বেতনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা- এ দুয়ের মধ্যে যেটি কম, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তা চাকরিজীবীর বেতন থেকে কেটে রাখবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংস্থা দেবে। দুই অঙ্ক একত্রে চাকরিজীবীর পেনশন আইডির (পরিচয় নম্বর) বিপরীতে সর্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা করবে। যেদিন প্রতি মাসের বেতন দেওয়া হয়, তার পরের কর্মদিবসের মধ্যেই কাজটি করতে হবে। এ জমা অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদের ভিত্তিতে অবসরকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসিক পেনশন ভোগ করবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত