ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যরাতে সংঘর্ষের পর সোমবারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান সব শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে আন্দোলনে ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে সন্ধ্যার পর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেয়।
রাতে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-বিজিবি সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীদের থামাতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এরপর ভোররাতে এক বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
এই ঘটনায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত উল্লেখ করে তিনি ধৈর্য ধারণ এবং সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের আবেদনে সাত কলেজের সোমবারের পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্তও জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষার পরিবর্তিত সময় পরে জানানো হবে।
পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সোমবার সব ক্লাস ও পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ।
সোমবার সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি সভায় বসে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছনোর আশ্বাসও দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদও দুঃখ প্রকাশ করে সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।
সংঘর্ষ চলার মধ্যে মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “সন্ধ্যায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আমার অফিসে আলোচনাকে কেন্দ্র করে রাতে যে অনাকাক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, তা দুঃখজনক। এতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত।”
এদিকে রবিবার রাতের সংঘর্ষের পর অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সোমবার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই কলেজগুলোকে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার পর থেকে রাজধানীর সরকারি এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নানা সংকটে পড়ে। বিভিন্ন সময় তারা রাজপথে নেমে আসছে।
এখন পাঁচটি দাবিতে আন্দোলনে এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। রবিবার সন্ধ্যার পর তারা শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও টেকিনিক্যাল মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
এরপর দাবি জানাতে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু উপ-উপাচার্য তাদের অপমান করেন অভিযোগ তুলে তারা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে। তাদের দাবি, অধ্যাপক মামুনকে ক্ষমা চাইতে হবে।
এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়। তখন সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
এদিকে অধ্যাপক মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ভর্তি সংক্রান্ত কিছু দাবি নিয়ে সাত কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী বিকালে তার কাছে গিয়েছিলেন। তারা ধাক্কাধাক্কি করে তার অফিসে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি বলেছিলেন যে এভাবে বিশৃঙ্খলা করলে তিনি কোনও কথা শুনবেন না। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা।