Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

সংসদ নির্বাচন ধাপে ধাপে ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে চায় ইসি

রবিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে টিআইবির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রবিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে টিআইবির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

আগামী সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে ধাপে ধাপে আয়োজন করার পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।

এ লক্ষ্যে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা আহ্বানের পাশাপাশি এর চাহিদা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।  

রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে টিআইবি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। সিইসি মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈরীতা দূর করে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। আর রাজনৈতিক সমস্যা দূর না হলে নির্বাচন ব্যবস্থা স্থিতিশীল হবে না। 

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “পুরো কমিশন তাদের (টিআইবি) সঙ্গে বসেছিলাম। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে… নির্বাচনের তথ্যগুলো যাতে দ্রুত তুলি। কিছু ক্ষেত্রে ওনারা প্রশংসা করেছেন। টিআইবি তথ্যের অবাধ প্রবাহ চেয়েছে। টিআইবি বলেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করিনি। সেটা… আমাদের কমিশনার বলেছেন, আমাদের আইনি সীমাবদ্ধতা আছে।”

পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে টিআইবির চাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “সকল ক্ষেত্রে অনেক স্বচ্ছতা চান (টিআইবি)। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তবে সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া উচিত। সব দলের অংশগ্রহণ- সেটা হয়নি, সেটা ওনারা (টিআইবি) জোর দিয়ে বলেছেন।

“আমরা বলেছি আমাদের কাজ নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ করা। আমরা বলেছি, সমস্যা অনেকটাই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমস্যাগুলো নিরসন না হলে নির্বাচন ব্যবস্থাটা আরও স্থিতিশীল হবে না।”

রাজনৈতিক ঐক্যমত যদি হয়ে যায়, তাহলে নির্বাচনটা সুন্দর সুষ্ঠু হতে পারে বলে মনে করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “নির্বাচনটা… ব্যক্তির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। সেটা কমিয়ে সংস্কারের মাধ্যমে পদ্ধতিগত উন্নয়ন সাধন করা যায়। ডিজিটাল ডিভাইসের প্রয়োগ, সিস্টেম অব ইলেকশন- যেমন প্রোপোর্শনাল রিপ্রেজন্টেশন- একটা সংখ্যানুপাতিক হারে, যেটা আমাদের নারী সংসদ নির্বাচনে কিছুটা আছে।”

এখানে বলে রাখা দরকার, প্রোপোর্শনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে, দলগুলোর পাওয়া মোট ভোটের অনুপাতে সংসদে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের একটি পদ্ধতি। 

সংখ্যানুপাতিক হার নিয়ে টিআইবিকে গবেষণার পরামর্শ দিয়েছেন ভোট আয়োজনকারী সংস্থাটির প্রধান।

সিইসি বলেন, “গবেষণাটা আমরা করতে পারব না। বিদ্যমান সরকার… দল ক্ষমতায় থেকেও কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায়, সেটা সংসদে পাস করতে পারবেন। তাহলে জনগণ যে ইলেকশনে  আসছে না, এগুলো কমে আসবে।” 

একাধিক দিনে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রসঙ্গ টেনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, আমাদের কাছে মনে হয়েছে- জাতীয় নির্বাচনটা যদি স্ক্যাটার্ড (ধাপে ধাপে) করা যায়, তাহলে ম্যানেজমেন্টটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে অধিক সংখ্যক ফোর্সেস মোবিলাইজ করা যাবে। মনিটরিংটা সহজ হবে। অধিক সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দিতে পারব।”  

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে এখনও যে বিভিন্ন পর্যায়ে অনাস্থা আছে, সে বিষয়টি স্বীকার করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “সেটা এখনও আছে। আমরা বলেছি, ইভিএম নিয়ে যে নির্বাচন হয়েছে, একটা ইভিএম নিয়ে কেউ বলেনি এখানের ভোট ওখানে গেছে।”

ভারতে ইভিএমে ভোট নিশ্চিতকরণ ও স্বচ্ছতা নির্ধারণে ভোটাররা চাইলে ‘ভোটার ভ্যারিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল’ বা ‘ভিভিপ্যাট’ নিতে পারেন।  

ইভিএমকে আরও সহজ করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভিভিপ্যাট যুক্ত করলে যদি আস্থা ফিরে আসে, সেটা একটা ভালো উপায়। তবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত পোষণ করে ইভিএমের ভিভিপ্যাট লাগালে যদি সম্মত হয়।”

নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য সীমিত দাবি করে তিনি বলেন, “যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করি। আমাদের অনন্ত সক্ষমতা আছে, সেটা মোটেই না। ইলেকশন কমিশন একা কখনোই সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। যদি না রাষ্ট্র এবং সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা স্বপক্ষে থাকে। তাহলে সবাই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে বাধ্য হবে।”

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাদের মধ্যে বৈরীতা অত্যন্ত প্রকট। এত প্রকট বৈরীতা নিয়ে সামনে আগানো কঠিন হবে। এই বৈরীতা পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে।”

বর্তমান কমিশন দু-এক বছর পরে চলে যাচ্ছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “আমরা হয়তো আমাদের রিপোর্টের মধ্যে লিখে যাব। আগামীতে যারা আসবেন, ওরা বিবেচনা করবেন ইভিএমে ভোট করবেন কি না।”

রবিবার ইসিতে বৈঠক শেষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

যা বলছে টিআইবি

বৈঠক শেষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও আমাদের আজ (রবিবার) একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জবাবদিহিমূলক সুশাসনকে প্রধান্য দিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি নির্বাচন সামনে রেখে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। একাদশ সংসদের পুরো মেয়াদের একটি বিশ্লেষণ আমরা সম্প্রতি প্রকাশ করেছি।

“কোনও কোনও ক্ষেত্রে হলফনামার তথ্য এবং আয়করের তথ্য বিশ্লেষণের সুযোগ আমাদের হয়েছিল। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে ১ হাজার ৪১২ জন প্রার্থী ছিল, তার মধ্যে মাত্র ৪৭ জন আয়কর রিটার্ন দিয়েছেন। তার মধ্যে মাত্র ৪২ জন কর দিয়েছেন। এ ধরনের তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে আমরা সংশ্লিষ্ট নজরদারি সংস্থাগুলোর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিতের সুবিধা আমরা করে দিয়েছি।”

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বিশ্লেষণমূলক তথ্য টিআইবি প্রকাশ করেছে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “কমিশন (ইসি) আমাদের গবেষণা প্রতিবেদনগুলো গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আমাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে উৎকর্ষ বিকাশের সুযোগ পান বলে আমাদের জানিয়েছেন। নির্বাচন কেন্দ্রিক জাতীয় প্রত্যাশার জায়গায় আমরা একই নৌকার যাত্রী হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করেছি।  

“নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়, এটা আমরাও চাই। আমাদের কাজের পদ্ধতি এবং ক্ষমতার পার্থক্য থাকলে গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। এজন্য আমরা একে অপরের সহযোগী হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করছি।”

নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার—কমিশনের কাছে এমন সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বিশেষত, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব প্রণয়ন। ইসিও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তারা পরামর্শ দিয়েছে এটির আরও চাহিদা সৃষ্টি করা দরকার।”  

গত সংসদ নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে তা ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। এ বিষয়ে ইসিও একমত পোষণ করেছে। তারা জানিয়েছে, যতটুকু সক্ষমতা ছিল, সে অনুযায়ী কাজ করেছে।  

“আমরা উভয় পক্ষই নির্বাচনকালীন সরকারকর্তৃক নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ- বিশেষ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়নের স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চত করা যায়নি বলে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছি।”

জাতীয় সংসদ নির্বাচন দফায় দফায় করার বিষয়ে ইসির সঙ্গে আলচনা হয়েছে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটি উল্লেখ করেছেন, দফায় দফায় নির্বাচন আয়োজন করলে সুবিধা হত। একটি প্রস্তাব তিনি (সিইসি) করেছেন, একদিনে যে নির্বাচন হয়, সেটা পর্যায়ক্রমে করা যায় কি না। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে পাঁচ দফায় নির্বাচন করা যায় কি না—সে প্রস্তাব তিনি (সিইসি) দিয়েছেন।”

‘ইভিএম সমস্যা অথবা এটিই সমাধান- আমরা এটি মনে করি না’ মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বর্তমান পদ্ধতিতে ঘাটতি রয়েছে। আমরা পেপার ট্রেইলে গুরুত্ব দিয়েছি। ইসি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলো রাজি হলে পেপার ট্রেইল করা কোনও বিষয় না।”

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচন যে সরকারের অধীনে হয়েছিল, সে পদ্ধতিতে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। কিন্তু যেটা সম্ভব- নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা প্রণয়ন। বিশ্বের অনেক দেশেই এটা রয়েছে।

“ইসি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোরই ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা যদি না চায়, যদি মনে করে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নির্বাচন করবে, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না।”

বর্তমানে সংসদ কার্যকর কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংসদ তো শুরু হলো মাত্র, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আগেও বলেছি, আমরা এমন একটা সংসদ পেয়েছি, যা ক্ষমতাসীন দলের আপন ভূবন। সেখানে সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল বিষয়- বিরোধী দল বাস্তবে নেই।

“তার মধ্যেও আবার যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তারা বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ী। কাজেই সংসদ কতটুকু কার্যকর হবে, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক হবে এবং জনকল্যাণমূলক হবে—এ প্রশ্নগুলো থেকে যাবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত