বিদায় নিল ২০২৪; অভ্যুত্থানের এই বছর পেরিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আশা হচ্ছে ধ্বনিত; তবে রাজনীতির এই আকাঙ্ক্ষার অনুবাদ অর্থনীতিতে হবে কি? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে অনিশ্চয়তাই দেখা যাচ্ছে আগে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাঁচ মাস পার করলেও অর্থনীতি এখনও থিতু হয়নি। মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে, কাটেনি ডলার সংকট, বিনিয়োগেও খরা। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় ছাড়া অর্থনীতির অন্য সব সূচকই নেতিবাচক। ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়ছে না।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগ করছে না। ফলে কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। অর্থনীতিতে এমন অনিশ্চয়তা নিয়েই শুরু হচ্ছে ২০২৫ সাল।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়; বেড়ে যায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার। এতে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব অর্থনীতি যখন কোভিড-১৯ সংকট কাটিয়ে উঠছিল, তখনই শুরু হয় এই যুদ্ধ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন করে। তাতে ধারণা করা হচ্ছিল, ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলোতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
শেষমেশ মন্দা হয়নি; বরং ২০২৪ সালে এসে বিশ্ব অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে; যদিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে। অনেক দেশের প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্-কোভিড পর্যায়ে ফেরেনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস হচ্ছে, বিদায়ী ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। যেখানে ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
এছাড়া মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে লড়াই শুরু হয়েছিল, সে লড়াইয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জয়ী হলেও বাংলাদেশ পারেনি। আওয়ামী লীগ আমলে যে চড়তে শুরু করেছিল, তাতে লাগাম পরাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকারও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে গত নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে আরও বেশি, ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২৪ সাল। এক যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে গত জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল বাংলাদেশ। ওই মাসই ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মাস। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পরের মাসের শুরুতেই পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। তারপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল।
বিবিএসের এই তথ্য বলছে, চড়া মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিদায়ী ২০২৪ সাল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—২০২৫ সালে কেমন যাবে এই সূচক; দেশের মানুষকে কি স্বস্তি দেবে; নাকি আরও চড়বে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
মূল্যস্ফীতি বাগে আনতে শেখ হাসিনার সরকার ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, বিভিন্ন পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস, বাজারে আভিযানসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল; কিন্তু কাজ হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও একই পথে হাঁটছে।
তবে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা। আর আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে এটিকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনব এবং আমি আশা করি, এটি সম্ভব হবে। আমরা এ লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতিগত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছি।”
আহসান মনসুর বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, মূল্যস্ফীতি একটি কাঙ্ক্ষিত স্তরে নামিয়ে আনতে কমপক্ষে এক বছর মাস সময় লাগে। সুতরাং, এর জন্য আমাদের সেই নির্দিষ্ট সময়টা দিতে হবে।”
তবে ভিন্ন কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত অক্টোবরে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রতিবেদনে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ১ শতাংশ হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। আইএমএফ ও এডিবির পূর্বাভাস আমলে নিলে নতুন বছরেও দেশের মানুষকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চড়া মূল্য দিতে হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সহসা কমে আসবে—এমনটা আশা করা ঠিক হবে না বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভরা মৌসুমের কারণে শীতের শাক-সবজির দাম কমেছে। কিন্তু প্রধান খাদ্যপণ্য চালসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কিন্তু চড়া। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি ১১/১২ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমে আসবে এমনটা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না।”
“আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে। কঠোর মুদ্রানীতি দিয়ে, সুদের হার বাড়িয়ে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে; কঠোর নজরদারি করতে হবে,” বলেন তিনি।
জাহিদ হোসেন বলেন, “উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। বন্যার কারণে আমন উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে চালের দাম কমছে না; উল্টো বাড়ছে। সে কারণে মূল্যস্ফীতি কবে কমবে, সেটা একটা চিন্তার বিষয়।”
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) মোট এডিপির মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ খরচ হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নে এমন করুণ দশা আগে কখনই দেখা যায়নি। মাঠ পর্যায়ের কাজে ঢিমেতালের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে না।
বিদেশি ঋণ যা আসছে, পরিশোধ করতে হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) যত বিদেশি ঋণ এসেছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। এই পাঁচ মাসে সুদ ও আসল মিলিয়ে ১১১ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার (১.৭১ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। একই সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা দিয়েছে ১৫৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার। তাতে অর্থ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধে ১৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বেশি খরচ হয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগও বেহাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৩৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে দেশে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারি (মূলধনি যন্ত্রপাতি) আমদানির এলসি কমেছে ২৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ; নিস্পত্তি কমেছে ২২ শতাংশ। শিল্পের মধ্যর্বর্তী পণ্য (ইন্টারমেডিয়েট গুডস) আমদানির এলসি কমেছে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ; নিস্পত্তি কমেছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
পুঁজিবাজার ডুবতে বসেছে। ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়টি বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। এ অবস্থায় দিন যত যাচ্ছে, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ততই বাড়ছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছে ছয় মাস আগে ৩০ জুন। পরিসংখ্যান ব্যুরো ওই অর্থবছরের চতুর্থ বা শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন সময়ে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।
অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমে আসার কারণেই গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল দেশে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শিল্প, সেবা ও কৃষি—সব খাতের প্রবৃদ্ধিই কমেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর সেবা খাতে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কেমন যাবে ২০২৫
২০০৪ সালে সহিংস রাজনীতির চাকায় পিষ্ট হয়েছে অর্থনীতি। বছরের শুরুটাই হয়েছিল নির্বাচন ঘিরে উৎকণ্ঠা দিয়ে, মাঝামাঝিতে এসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, ভয়-আতঙ্কসহ এক অভূতপূর্ব দেখা দেয় দেশে।
তীব্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশশূন্য দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। দেশের রপ্তানির আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে দেখা দেয় অস্থিরতা। শ্রমিক অসন্তোষে বেশ কিছু কারখানা কিছুদিন বন্ধও ছিল। এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ব্যবসায়ীরা আশায় আছেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কাটবে অনিশ্চয়তা। তবে সেই নির্বাচন দেড় বছরের আগে হচ্ছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে। তবে সেই নির্বাচনও মসৃণ হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে না।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “একটি দেশের অর্থনীতি কেমন যাবে, সেটা আসলে নির্ভর করে বর্তমান পরিস্থিতি কেমন তার ওপর। আমাদের অর্থনীতিতে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, অবস্থা ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। কী হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। সংঘাত-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সবার মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।
“এমন পরিস্থিতিতে ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী, কেউই ঠিকমতো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন না।”
রিজার্ভ নিয়ে সংকট চলছিল ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারায় ছয় মাস পর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর জানুয়ারিতে রিজার্ভ আবার কমে আসবে।
বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছে। কিছুদিন আগে এই তিন উন্নয়ন সংস্থাই বলেছে, অনিশ্চয়তার কারণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অনেক কমবে। বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ৪ শতাংশে নেমে আসবে। আইএমএফ বলেছে, ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। এডিবি বলেছে, ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, ২০২৫ সাল দেশের অর্থনীতির জন্য মসৃণ হবে না। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসবে। আমি বলব, বর্তমান পরিস্থিতিতে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও যদি হয়, তাও ভালো। সেটা হবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।”
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের কী করা উচিৎ- এ প্রশ্নে জাহিদ হোসেন বলেন, “সবার আগে সব মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর দ্রুততর সময়ের মধ্যে এটা করতে হবে। দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
“অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তায় দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি কোনো বিনিয়োগই হচ্ছে না। এতে কর্মসংস্থান হবে না। সে কারণে জরুরিভিত্তিতে দেশে বিনিয়োগ অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।”