দেশের বেশিরভাগ মানুষের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় থাকা আমিষ বা প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিমের দাম কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
চলমান অস্থিরতা কাটাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পাইকারদের সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়ার পরও ঢাকার একেক স্থানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এমনকি সুপার শপগুলোতেও আগের দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
ফলে দাম কমার খবর দেখে ডিম কিনতে যাওয়া অনেকেই হতাশ হচ্ছেন।
রবিবার বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকার কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে ১৫০ টাকায় এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর বাইরে বেশিরভাগ কাঁচাবাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন এখনও ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারে ডিম কিনতে আসেন রবিন মাহমুদ। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “গত দুইদিন ধরে খবরে দেখলাম, ফেইসবুকেও অনেকে লিখছে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা হয়েছে। কিন্তু এই বাজারে তার কোনও প্রমাণ পেলাম না। এখানে ১৬৫-১৭০ টাকা নিচ্ছে।”
তবে মহাখালী কাঁচাবাজারে ফার্মের মুরগির ডিম (বাদামি ও সাদা রঙের) ১৫০ টাকা করে ডজন বিক্রি করতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারেও খুচরা পর্যায়ে এক ডজন মুরগির ডিম ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান নুরজাহান স্টোরের মালিক ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, পাইকারি নিলে আরও কিছুটা কমে নেওয়া যাবে, প্রতিটি ১১ টাকা ৫০ পয়সা। সাদা রঙের ডিম প্রতিটি ১১ টাকা করে নেওয়া যাবে।
মোহাম্মদপুরের সাদেক খান কৃষি মার্কেটেও খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
তবে মিরপুর ও বনশ্রী এলাকার বাজারগুলোতে এখনও ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার নর্দা এলাকায় এখনও ১৬৫ টাকার নিচে এক ডজন ডিম মিলছে না।
জনপ্রিয় সুপারশপগুলোর মধ্যে এসিআই লজিস্টিকের সুপার শপ স্বপ্নের নর্দা আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখনও মুরগির ডিম (বাদামি রঙের) প্রতিটি ১৪ টাকা ১৬ পয়সা করে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে এক ডজন ডিমের দাম পড়ে প্রায় ১৭০ টাকা।
তবে গত শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ডিমের দাম ছিল ডজনপ্রতি ১৮০-১৯০ টাকা।
ভোক্তা অধিদপ্তরের উদ্যোগে পাইকারি বাজারে ডিম সরবরাহ করার পর থেকে ডিমের বাজারে অস্থিরতা কিছুটা কমতে শুরু করে।
এর আগে অবশ্য দুই দফা ডিমের যৌক্তিক দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেই দামে ডিম কিনতে পারেননি ক্রেতারা।
এর মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিমের খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, ডজনপ্রতি ১৪২ টাকা করে। এরপর গত মঙ্গলবার সেই দাম কিছুটা বাড়িয়ে ১৪৪ টাকা করা হয়। কিন্তু সেই দামে ডিম বিক্রি না করায় পাইকারি বাজারে ডিম সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ভোক্তা অধিদপ্তর।
গত ১৭ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) থেকে ঢাকার কাপ্তান বাজার এবং পরের দিন ১৮ অক্টোবর (শুক্রবার) তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়ৎ থেকে পাইকারি দামে ডিম সরবরাহ করছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ডিম সরবরাহকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিদিন ২০ লাখ করে ডিম পাইকারি দরে সরবরাহ করছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
এর আগে বিক্রেতারা বলছিলেন, দেশের সাম্প্রতিক বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে পোল্ট্রি ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। এ কারণে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে। এর আগে এক ডজন ডিমের দাম ১৫৫ টাকার আশেপাশে ছিল। সেপ্টেম্বরে সেই দাম বেড়ে ১৬৫ টাকায় উঠে আসে। সম্প্রতি সেই দাম বেড়ে ১৭০-১৯০ টাকায় উঠে আসে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। আরও সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে বলেও জানা যাচ্ছে।
এই অনুমোদনের আগে দুই দফায় প্রায় ৫ লাখ ডিম ভারত থেকে আমদানি হয়। তবে চাহিদার তুলনায় এই ডিমের সরবরাহ অনেক কম হওয়ায় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে তা কোনও প্রভাব রাখেনি বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারের হিসাবে, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। তবে উৎপাদন এর থেকে এক কোটি বেশি।
তবে সাম্প্রতিক বন্যার কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সম্প্রতি বাজার পরিদর্শনে গিয়ে ‘ডিম বানানোর কোনও মেশিন তার কাছে নেই’ বলেও মন্তব্য করেন এই উপদেষ্টা, যা নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করেন।