Beta
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

ডিমের লক্ষ্য এবার বিচারক, নিক্ষেপ ভরা এজলাসে

সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট।
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে যাওয়ার সময় ডিম হামলার শিকার হতে হয়েছে বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপি বেশ কয়েকজনকে; তবে এবার ডিম ছোড়া হলো বিচারককে লক্ষ্য করে, আর তা ঘটেছে হাই কোর্টে।

বুধবার দুপুরে বিরতির পর বিচারকাজ চলাকালে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।

হৈ হট্টগোলের মধ্যে কয়েকজন আইনজীবীর একটি দল এ ঘটনা ঘটায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এই আইনজীবীরা বিএনপি সমর্থক হিসাবেই পরিচিত।

আট বছর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এক মন্তব্যের জেরে তারা এই কাণ্ড ঘটান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের গ্রেপ্তার করে পুরান ঢাকার আদালতে নেওয়ার সময় তাদের দিকে ডিম, জুতা ছোড়ার ঘটনা বেশ কয়েকটি ঘটে।

তবে উচ্চ আদালতে তেমন ঘটনা বুধবারই প্রথম ঘটল।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা জানান, দুপুরের পরে ওই এজলাসে বিচারকাজ চলছিল। এসময় একদল আইনজীবী এজলাস কক্ষে ঢোকে। তাদের একজন আদালতের ডায়াসের সামনে (বিচারকের মুখোমুখি) গিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি একজন বিচারপতি হয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আপনি এখনও যদি ওই চিন্তাভাবনা পোষণ করেন, তাহলে আপনার বিচারকাজ পরিচালনার অধিকার নাই।”

এসময় আরেকজন আইনজীবী বিচারপতি আশরাফুল কামালকে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন। তখন পেছন থেকে একজন ডিম ছুড়ে মারে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়; তবে তা বিচারপতির গায়ে লাগেনি। বিচারকের আসনের সামনে থাকা ডেস্কে লাগে।

এরপর হট্টগোল শুরু হলে দুই বিচারকই এজলাস ছেড়ে চলে যান।

এই ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে সকাল সন্ধ্যা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিএনপির আইনজীবী নেতাদের কয়েকজনকে ফোন দিলেও তারা ধরেননি।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের বক্তব্য জানতে রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঁঞাকে ফোন করলে তিনিও ফোন ধরেননি।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে আওয়ামী লীগ সরকার। সেটা ছিল শাসনতন্ত্রের ষোড়শ সংশোধনী।

পরে সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবীর রিট আবেদনে হাই কোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে এই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল।

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে একমত ছিলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক। তবে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ভিন্নমত পোষণ করে রিট আবেদনটি খারিজের পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

সেই রায়ের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তার পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, “মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাক বাকুম করে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন তথা রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলেন। একবারও ভাবলেন না, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। সরকারি কর্মচারী হয়ে কীভাবে তিনি আর্মি রুলস ভঙ্গ করেন? ভাবলেন না তার শপথের কথা। ভাবলেন না তিনি দেশকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করার শপথ নিয়েছিলেন। ভাবলেন না, তিনি এবং তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করতে। ভাবলেন না, তিনি এবং তারা ব্যর্থ হয়েছেন জাতীয় চার নেতাকে রক্ষা করতে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতাসীন হয়ে মেজর জেনারেল জিয়াকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। তারপর নভেম্বরের অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়া। পরে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বিএনপি গঠন করে রাজনীতিতে নামেন।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি কামাল আরও বলেছিলেন, “জনগণ আশ্চর্য হয়ে দেখল, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের দোসর হয়ে তাদের রক্তাক্ত হাতের সাথে হাত মিলিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখল করল। যাকে এক কথায় বলা যায় বন্দুক ঠেকিয়ে জনগণের প্রতিষ্ঠান দখল।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এবার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের অনেকেই আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রোষের মুখে পড়ে। ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের পদত্যাগের দাবি তোলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

চাপের মুখে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের প্রায় সব বিচারককে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর সর্বোচ্চ আদালতের নেতৃত্ব পুরোপুরি বদলে যায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত